করোনা যুদ্ধে টিফিনের জমানো টাকা ত্রাণ তহবিলে দিলেন দুই খুদে পড়ুয়া

চন্দন কর্মকার : বর্তমান পরিস্থিতিতে বিশ্বকে অস্থির করে তুলেছে করোনা, আর এই অদৃশ্য শত্রুর বিরুদ্ধে লড়াই চালাচ্ছে বিশ্বের প্রতিটি দেশ। লড়াই বেঁচে থাকার, লড়াই দেশের প্রতিটি মানুষকে সুস্থ রাখার। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতোই লড়াই চালাচ্ছে আমাদের দেশও। ভারতে ইতিমধ্যেই করোনা ভাইরাস সংক্রামিত ব্যক্তিদের সংখ্যা ৫০০০ ছুঁই ছুঁই। মৃতের সংখ্যাও বেড়ে চলেছে দিন দিন। পশ্চিমবঙ্গের সংখ্যাটা বাড়ছে তিল তিল করে, এরাজ্যে এখনও পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা ৫ (রাজ্য সরকারের বুলেটিন অনুযায়ী)। আর এমত অবস্থায় দেশের প্রধানমন্ত্রী থেকে মুখ্যমন্ত্রী সকলেই খুলেছেন ত্রাণ তহবিল। সেই সকল ত্রাণ তহবিলে অনুদান দেওয়ার জন্য এগিয়ে আসতেন তারকারা থেকে আমজনতারা। ঠিক তেমন দুই খুদে পড়ুয়া নিজেদের সাধ্যমত এগিয়ে এলো মুখ্যমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিল অনুদানের জন্য।

মঙ্গলবার বীরভূমের সাঁইথিয়া শহরের দুই খুদে পড়ুয়া তাদের টিফিনের খরচ থেকে বাঁচানো টাকা অনুদান স্বরূপ তুলে দিলেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে। এদিন তারা সাঁইথিয়া শহরের পৌরপতি বিপ্লব দত্তের হাতে তাদের সাধ্যমতো অনুদান তুলে দেয়। আর এমন খুদে দুই পড়ুয়ার থেকে অনুদান পেয়ে খুশি সাঁইথিয়ার পৌরপতি। পৌরপতির এক কথায় অভিব্যক্তি ‘অভূতপূর্ব’।

দুই পড়ুয়ার মুখ থেকে জানা যায়, তারা স্কুলের টিফিন খরচের জন্য প্রতিদিন যে টাকা পেত সেই টাকার কিছু অংশ তারা দুজনেই নিজস্ব নিজস্ব লক্ষ্মী ভাঁড়ে সঞ্চয় করে রাখত। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে মানুষ যেভাবে কষ্ট পাচ্ছেন, সেই কষ্ঠ তাদের অন্তরকে ব্যথিত করে।এরপরই তারা সিদ্ধান্ত নেয় তাদের ওই সঞ্চিত অর্থ তারা ত্রাণ তহবিলে অনুদান প্রদান করবে। সেইমতো আজ তারা সেই টাকা তুলে দেয় মুখ্যমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে। তাদের বক্তব্য, “আমাদের ছোট ছোট ভাই বোনেরা না খেতে পেয়ে কাঁদছে। তাই আমরা আমাদের সঞ্চয়ের টাকা তাদের জন্য দিলাম।”

ওই দুই খুদে পড়ুয়ার একজন ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রী অহনা দাস, সে সাঁইথিয়ার ১ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা আর দ্বিতীয়জন সপ্তম শ্রেণীর ছাত্রী শ্রেয়া দাস সাঁইথিয়ার ৪ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা। দুজনেই সাঁইথিয়ার একটি বেসরকারি স্কুল গীতাঞ্জলি পাবলিক স্কুলের ছাত্রী।

এই দুই পড়ুয়ার অনুদান স্বরূপ দেওয়া অর্থ হয়তো খুবই নগণ্য। কিন্তু এই অল্প বয়সে তাদের এই যে চিন্তাভাবনা যা সত্যিই প্রশংসনীয়। তাদের এই ছোট্ট পদক্ষেপ সমাজের বয়োজ্যেষ্ঠদের আঙ্গুল তুলে দেখিয়ে দিল ‘আমরাও করতে পারি’। আর এমন ঘটনা প্রকাশ্যে আসতেই সমাজের বিশিষ্টজনেরা কুর্নিশ জানিয়েছেন ওই দুই খুদে পড়ুয়াকে।