নিজস্ব প্রতিবেদন : ভারতবর্ষে নিত্যদিন ধর্ষনের ঘটনা স্থান পায় খবরের কাগজের পাতায়। কিছু কিছু উঠে আসে সোশ্যাল মিডিয়ায়, জ্বলে ওঠে দেশ। সম্প্রতি ঘটে চলা একটি সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে পৃথিবীতে ভারতবর্ষ মহিলাদের জন্য সবথেকে অসুরক্ষিত দেশ হিসেবে বিবেচিত হয়। মানুষরূপী এই ধর্ষক নামের পশুদের লালসা থেকে মুক্তি পায় না এক মাস থেকে আশি বছরের বৃদ্ধা। আর এই ধর্ষনের ক্ষেত্রে বারেবারে উঠে আসে পুলিশের ভূমিকার কথা। বারবার একটাই অভিযোগ সামনে আসে যে পুলিশ ঠিক সময় তৎপর হলে হয়তো অনেক নারীই বেঁচে যেত এই ঘৃণ্য অপরাধের হাত থেকে।
গত দিনে হায়দ্রাবাদে ২৬ বছর বয়সী এক পশু চিকিৎসককে গণধর্ষণ ও খুনের ঘটনা ইতিমধ্যেই সারা ফেলেছে দেশের প্রতিটি স্তরে মানুষের মধ্যে। নৃশংস ভাবে একজন নারীকে ধর্ষন করা হয় এবং জীবন্ত পুড়িয়ে ফেলা হয়। এই ঘটনাতেও উঠে এসেছে পুলিশের ভূমিকার প্রশ্ন। এই ঘটনায় সারা দেশে নারী সুরক্ষা এবং নিরাপত্তার বিষয়টা যেমন ভাবিয়ে তুলছে মানুষকে তেমনি একইসঙ্গে পুলিশের বিরুদ্ধে উঠেছে গাফিলতির অভিযোগ। কারণ, সেদিন পুলিশ সঠিক সময় তৎপর হলে হয়তো বাঁচানো যেত সেই তরুণীকে। সেদিন পুলিশ দ্রুত কোনো পদক্ষেপ নিলে সম্ভব হতো তার বেঁচে থাকা। এরকম অভিযোগ করেছেন নির্যাতিতার পরিবারও।
তবে ঘটনার প্রেক্ষাপট বদলে যায় শুক্রবার। সকাল হতেই খবর আসে ওই চার অভিযুক্তকে খতম করেছে পুলিশ। ওই চারজন নাকি ঘটনার পুনর্নিমাণের সময় পালানোর চেষ্টা করে, তখনই তাদের পুলিশ খতম করে।
এমন সময় একটি বিরাট সিদ্ধান্ত নিলো দেশের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। মহিলাদের জন্য দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করার উদ্দেশ্যে দেশের প্রতিটি থানায় উইমেন হেল্প ডেস্ক তৈরির সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। এই উদ্দেশ্যে প্রাথমিকভাবে ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে কেন্দ্রের তরফ থেকে। জানা যাচ্ছে, নির্ভয়া তহবিল থেকে এই অর্থ দেওয়া হবে।
শুধু তৎপরতার জন্যই নয়, কোনো মহিলা থানায় অভিযোগ দায়ের করতে এলে তার সাথে সংবেদনশীল আচরণ যাতে করা হয় সেই বিষয়টিও লক্ষ্য রাখবে এই ডেস্ক। কারন বিগত দিনের ইতিহাসে এমন অনেক ঘটনাই দেখা গেছে যে মহিলা অভিযোগ নিয়ে থানায় এলে তাঁদের সঙ্গে সংবেদনশীল আচরণ করা হয় না বরং সেখানেও নানারকম হেনস্থার শিকার হতে হয় তাকে।
হায়দ্রাবাদের ঘটনাটিতেও এরকম আচরণের অভিযোগ ওঠে পুলিশের বিরুদ্ধে, দাবি করেছেন নির্যাতিতার পরিবার। নির্যাতিতার পরিবার অভিযোগ করে, সেদিন পুলিশ সঠিক সময়ে তৎপর হয়নি বরং দিদির বিপদের ইঙ্গিত পেয়ে সেদিন থানায় যান ছোট বোন কিন্তু পুলিশের তরফ থেকে কোনো প্রাথমিক সাহায্যই পাননি তিনি।বরং উল্টে তাঁকে এক থানা থেকে অন্য থানায় ঘোরানো হয় যতই সময় চলে যায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা।আগামী দিনে এই ঘটনার পুনরবৃত্তি রুখতে থানায় থানায় মহিলা ডেস্ক তৈরির সিদ্ধান্ত নিল সরকার।
Ministry of Home Affairs has sanctioned Rs 100 crores from 'Nirbhaya' Fund for setting up and strengthening of Women Help Desks in Police Stations. The scheme to be implemented by the States and Union Territories. pic.twitter.com/xATmFpgqyw
— ANI (@ANI) December 5, 2019
দেশের প্রতি রাজ্য এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে এই ব্যবস্থা করার আশ্বাস দিয়েছে সরকার। এই প্রকল্পে মহিলাদের প্রতি আরও সংবেদনশীল হওয়ার প্রশিক্ষন দাওয়া হবে ডেস্কের আধিকারিকদের এবং এই ডেস্কের জন্য উপযুক্ত পুলিশ কর্মী নিয়োগ করা হবে ও তার সাথেই থাকবেন আইনজীবী, মনস্তত্ত্ববিদ এবং স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সদস্যরা। যাতে উদ্ধারের পর নির্যাতিত মহিলাকে আবারও ফিরিয়ে আনা হয় সমাজের মূল স্রোতে।