চন্দ্রযান ২ সম্পর্কে কিছু অজানা তথ্য যা প্রতিটি ভারতবাসীর জানা দরকার

অবশেষে চাঁদের পথে পাড়ি জমালো চন্দ্রযান-২। আজ দুপুর ২টো ৪৩ মিনিটে শ্রীহরিকোটার সতীশ ধাওয়ান মহাকাশ কেন্দ্র থেকে চন্দ্রযান-২ কে নিয়ে উড়ে গেল জিওসিঙ্ক্রোনাস স্যাটেলাইট লঞ্চ ভিহেকল। ঠিক ১৬ মিনিট পর মহাকাশে নির্দিষ্ট কক্ষপথে চন্দ্রযানকে পৌঁছে দেবে রকেট বাহুবলী। চন্দ্রযান-২ এ থাকছে ১৩টি কৃত্রিম উপগ্রহ। ওজন ৩.৮ টন, আটখানা হাতির সমান। প্রায় ৪ টন ওজনের চন্দ্রযান-২-কে মহাকাশে পাঠিয়ে দিল ইসরোর শক্তিশালী রকেট ‘জিওসিনক্রোনাস স্যাটেলাইট লঞ্চ ভেহিকেল (জিএসএলভি) মার্ক-৩’।

চন্দ্রযান-২-এর সঙ্গে থাকছে ‘বিক্রম’, ল্যান্ডার। চাঁদের কক্ষপথে গিয়ে চন্দ্রযান-২ ছুঁড়ে দেবে বিক্রমকে চাঁদের দিকে। চন্দ্রযান-২ থেকে আলাদা হয়ে ল্যান্ডার বিক্রম নেমে পড়বে চাঁদের পিঠে। চাঁদের ভূমিকম্প ও চাঁদের তাপমাত্রা সংক্রান্ত পর্যবেক্ষণ করবে এটি। পাশাপাশি প্রজ্ঞান নামের ২৭ কিলোগ্রামের ছয় চাকার চলমান যানের মাধ্যমে চাঁদের মাটির পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হবে।

আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ ভারতীয় যন্ত্রাংশ থাকছে চন্দ্রযান-২-এ। সংখ্যায় ১৩টি। থাকছে নাসার ‘লেজার’। যা পাঠানোর জন্য নাসার কাছ থেকে নেওয়া হয়নি কোনও অর্থ, জানিয়েছেন ইসরোর চেয়ারম্যান। তবে মহাকাশে তার যাত্রাপথ ও চাঁদের মুলুকে পা ছোঁয়ানোটা যাতে নিরাপদে নির্বিঘ্নে হয়, সিভন জানিয়েছেন, তার জন্য নাসার ডিপ স্পেস নেটওয়ার্কের সাহায্য নেওয়া হবে। আর তার জন্য নাসাকে দেওয়া হবে অর্থ।

দ্বিতীয় যে চন্দ্রাভিযানের সূত্রে মহাকাশ বিজ্ঞানে নতুন শিখর ছুঁতে চাইছে ভারত, তার কান্ডারি দুই মহিলা মুথায়া বনিতা এবং রীতু কারিঢাল। বনিতা এই অভিযানের প্রজেক্ট ডিরেক্টর। রীতু উৎক্ষেপণের মিশন ডিরেক্টর। ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থার (ইসরো) অন্দরে বনিতাই একমাত্র মহিলা প্রজেক্ট ডিরেক্টর।

চাঁদের যে অংশে এই যান যাবে, সেখানে এর আগে কোনও দেশের যান পৌঁছতে পারেনি। মহাকাশবিজ্ঞানের ক্ষেত্রে ভারতের মর্যাদা আরও বৃদ্ধি করবে এই অভিযান। এই বারেই প্রথম দু’ জন মহিলা চন্দ্র অভিযানের সঙ্গে জড়িয়ে। এই দুই জন হলেন প্রোজেক্ট ডিরেক্টর ঋতু কৃধাল ও মিশন ডিরেক্টর এম ভনিথা।

এই অভিযানে সফল হলে চাঁদের মাটিতে যান পাঠানো দেশগুলির তালিকায় চতুর্থ স্থানে উঠে আসবে ভারতের নাম। এর আগে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া ও চিন যান পাঠিয়েছিল চাঁদের বুকে। চলতি বছরের শুরুতেই চাঁদে যান ল্যান্ড করানোর চেষ্টা করেছিল ইজরায়েল। কিন্তু চাঁদের খুব কাছাকাছি এসে ভেঙে পড়ে এই যান।

ভারতীয় মহাকাশ কর্মসূচির জনক ডঃ বিক্রম সারাভাইয়ের নামানুসারে এর ল্যান্ডারটির নাম দেওয়া হয়েছে ‘বিক্রম’। রোভারটির নাম দেওয়া হয়েছে ‘প্রজ্ঞান’।

এই অভিযান হওয়ার কথা ছিল ২০১৩ সালে। সেই অভিযানে ভারতকে সাহায্য করার কথা ছিল রাশিয়ার। ঠিক ছিল যে ল্যান্ডার চন্দ্রপৃষ্ঠে সফট ল্যান্ডিং করবে সেটি তৈরি করবে রাশিয়া। কিন্তু, শেষ মূহূর্তে ২০১১ সালে রাশিয়া জানিয়ে দেয়, তাঁদের পক্ষে ওই ল্যান্ডার তৈরি করা সম্ভব হচ্ছে না। বাধ্য হয়েই ভারত একা ওই মিশন সম্পূর্ণ করার সিদ্ধান্ত নেয়। ঠিক হয় ইসরোই ল্যান্ডার তৈরি করবে চন্দ্রযান ২-এর। আর সেইসব প্রস্তুতি শেষ করতেই সামান্য দেরি হয়ে যায় ভারতের।