নিমেষে খেয়ে ফেলছে গাছের পাতা, পঙ্গপালের দেখা মিলতেই ভীতসন্ত্রস্ত বীরভূমের চাষীরা

হিমাদ্রি মণ্ডল : দেশ একদিকে জর্জরিত করোনায়, আর অন্যদিকে পরপর দুটি ঘূর্ণিঝড়ে। তারই মাঝে আবার বিপর্যয় ডেকে নিয়ে এসেছে পঙ্গপালের দল। ছোটবেলায় সহজ পাঠের পাতায় পঙ্গপালের সাথে বাঙ্গালীদের পরিচয় আগেই হয়েছে।

আর সেই পঙ্গপালই মূর্তিমান বিভীষিকা হয়ে সুদূর হর্ন অফ আফ্রিকা দেশ যেমন ইথিওপিয়া, সোমালিয়া থেকে ইয়েমেন, ইরান, পাকিস্তান হয়ে আজ ভারতবর্ষে। ইতিমধ্যেই গুজরাত, পাঞ্জাব, রাজস্থান, মধ্যপ্রদেশ বিস্তীর্ণ অঞ্চলে পঙ্গপালের প্রকোপে কোটি কোটি টাকার ফসল ক্ষতিগ্রস্ত। আর এবার এই পঙ্গপাল ছত্রিশগড়, দিল্লি, উত্তর প্রদেশ ইত্যাদি রাজ্যের পাশাপাশি পূর্বমুখী বায়ুপ্রবাহের সাথে অচিরেই বিহার, ঝাড়খন্ড, পশ্চিমবঙ্গের মতো পূর্বের জেলাগুলিও আক্রান্ত হওয়ার প্রবল সম্ভাবনায় দিন গুনছে।

পঙ্গপালের ১২ টি প্রজাতির মধ্যে সবচেয়ে ক্ষতিকর প্রজাতি হলো মরু পঙ্গপাল (Desert Locust), আর ভারতে এরই প্রাদুর্ভাব সবচেয়ে বেশি। পঙ্গপাল এমন একটি পতঙ্গ যা সারাদিনে তার ওজনের সমপরিমাণ খাবার খেয়ে নিতে পারে। আর সেখানে আশঙ্কায় দিন গুনছেন চাষিরা।

পঙ্গপালের প্রকোপের কারণে যখন চাষিরা আশঙ্কায় দিন গুনছেন ঠিক তখনই বীরভূমের সদাইপুর থানার অন্তর্গত সাহাপুর গ্রামে গ্রাম পঞ্চায়েতের পিছনে থাকা ছোট ছোট জঙ্গলে হাজার হাজার অজানা পোকার দেখা মিলেছে। আর এই পোকাগুলি দেখতে একেবারেই পঙ্গপালের মত। পোকাগুলি নিমেষের মধ্যেই খেয়ে ফেলছে গাছের পাতা। যা দেখে গ্রামবাসীরা দাবি করেছেন সেগুলি পঙ্গপাল। আর এই ঘটনার খবর পেয়ে কৃষিদপ্তরের কর্মীরা গ্রামে যান।

গ্রামের বাসিন্দা মাতুল দাস জানান, “পঙ্গপালের মতো দেখতে এই পোকাগুলি গতকাল থেকে আমাদের এখানে এসেছে। পোকাগুলি নিমেষে গাছের পাতা খেয়ে নিচ্ছে। আমাদের আশঙ্কা ফসলের ক্ষতি না করে। খবর পেয়ে গতকালই পুলিশ এসে দেখে গিয়েছিল, এসেছিল পঞ্চায়েতের সদস্যরাও।”

দুবরাজপুর কৃষি দপ্তরের এক আধিকারিক সৌরভ কুন্ডু এই পোকাগুলিকে পঙ্গপাল নিশ্চিত করে জানিয়েছেন, “এই পোকাগুলি পঙ্গপাল। আর আমরা খবর পাওয়ার পরেই ছুটে এসেছি। বিষয়টি জেলা কৃষি দপ্তরকেও জানিয়েছি। যদিও এখনো পর্যন্ত ফসলে এদের প্রকোপ দেখা দেয় নি। তবে পরবর্তী করণীয় যা যা তা আমরা এলাকার চাষীদের জানালাম। আমরাও পদক্ষেপ নিচ্ছি।”

করোনা ও ঘূর্ণিঝড়ের আবহের মাঝেই বীরভূমে এমন পঙ্গপালের প্রকোপের দেখা দিতেই সবথেকে বেশি আশঙ্কায় দিন গুনছেন এলাকার চাষিরা। কারণ এখনো মাঠ থেকে ধান তোলা হয়নি। আস্তে আস্তে ধান তোলার কাজ চলছে। আর পঙ্গপাল যদি ওই মাঠের ফসলের উপর চোখ দেয় তাহলে বিপুল ক্ষতির সম্মুখীন হবেন এই সকল চাষিরা বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। ঘটনার খবর পেয়ে জেলা প্রশাসনও তৎপর হয়েছে বিষয়টি নিয়ে। কিভাবে এই পঙ্গপালের মোকাবিলা করা যায় তা নিয়ে শুরু হয়েছে আলোচনা।