বাটলা হাউস থেকে বীরাপ্পন, ভারতের ১০টি বিতর্কিত এনকাউন্টার

নিজস্ব প্রতিবেদন : বন্দুকের নলই শাসনের একমাত্র পথ, বিশ্বাস করেন দেশের ক্ষমতার কারবারি ও খাকি উর্দির একাংশ। রাজনৈতিক ক্ষমতা ও বিপুল কালো অর্থের লোভ তৈরি করে চলেছে দেশের আইনি শাসনের ভিতর আর এক সমান্তরাল প্রশাসন। এই খেলায় যেসব কালোঘোড়া আমাদানি করা হয়, প্রয়োজন ফুরালে তাদের মেরে ফেলার নামই এনকাউন্টার!

রাজনীতি ও মাফিয়া চক্রের নেক্সাসে বারবার উঠে এসেছে বীরাপ্পান থেকে বাটলাহাউসের নাম। কখনো আইনি বিচার ব্যবস্থার সুযোগ নিয়ে দেশকে ক্ষতবিক্ষত করেছে সন্ত্রাসবাদীর দল, তাদেরও থামাতে প্রয়োজন হয়ে পড়েছে এনকাউন্টার। ভারতের এমন ১০ এনকাউন্টার যা নিয়ে চলছে আজও বিতর্ক।

১) সদ্য এনকাউন্টার করা হয়েছে উত্তর প্রদেশের কানপুরবালা কুখ্যাত মাফিয়া বিকাশ দুবে ও তাঁর সঙ্গীদের। ডেপুটি সুপার সহ ৮ পুলিশ কর্মীকে হত্যার পর শুধু সময়ের অপেক্ষা ছিল বিকাশ দুবে ও তাঁর সঙ্গীদের হত্যার। নব্বইয়ের দশক থেকে বিকাশ দুবের বিরুদ্ধে উঠে এসেছে একের পর হত্যার অভিযোগ। তবু ধরা যায়নি তাকে। রাজনীতি ও প্রশাসন লালন করেছে তাকে ও তাঁর দলবলকে দীর্ঘদিন ধরে। দেশের আইনকে যেদিন নিয়ন্ত্রণহীন সমান্তরাল এই শাসন চ্যালেঞ্জ জানালো তখন প্রশাসনের এনকাউন্টার ছাড়া আর কোন পথ খোলা ছিল না। পুলিশ জানালো উজ্জয়ন থেকে কানপুর বিকাশ দুবে গাড়ি উল্টানোর সময় পালাতে গিয়ে পুলিশের গুলিতে খতম হয়েছে।

২) ২০১৯ সালে দেশ চমকে উঠেছিল বর্বোরোচিত ভাবে এক পশু ডাক্তারকে ধর্ষণ করে পুড়িয়ে দেবার ঘটনায়। ধরা পড়ে চারজন। সেই চারজনকে নিয়ে হায়দ্রাবাদের পুলিশ হায়দ্রাবাদ বেঙ্গালুরুর হাইওয়ের কাছে হত্যার ঘটনাস্থলে ঘটনার পুনর্নির্মাণ করাতে নায়ে যায়। পুলিশ জানায় ওই চার দুস্কৃতি পালানোর চেষ্টা করলে পুলিশ গুলি ছুঁড়তে বাধ্য হয়। সাধারণ মানুষ পুলিশকে ফুল দিয়ে স্বাগত জানায়। দেশের দীর্ঘ অকার্যকর বিচার ব্যবস্থা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয় আইন কায়েম করতে পারে একমাত্র এনকাউন্টার।

৩) ২০১৬ সালের অক্টোবরে ভোপাল জেল থেকে সিমির ৮ সদস্য পালানোর সময় রাজ্য পুলিশের হাতে মারা যায়। পুলিশ জানায় ওই ৮ জনকে স্যারেন্ডার করতে বলা হয়েছিল কিন্তু তাঁরা উল্টে পুলিশের দিকে গুলি ছুঁড়তে ছুঁড়তে পালিয়ে যাবার চেষ্টা করে। পুলিশ বাধ্য হয় গুলি ছুঁড়তে। ঘটনাস্থলেই মারা যায় ও আহত হয় দুস্কৃতিরা। অভিযোগ ওঠে এটা সাজাও হত্যাকান্ড। কিন্তু ২০১৮ সালে পুলিশ ক্লিনচিট পায়।

৪) মনিপুর এক্সট্রা জুডিশিয়াল, ২০১০ সালে ইন্সপেক্টর সহ পুলিশ কর্মীরা চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে আত্মসমর্পণ করে। অভিযোগ ফেক এনকাউন্টারে ১,৫০০ বেশি মানুষকে মেরেছে মণিপুর পুলিশ। ২০১৯ সালে সিবিআইয়ের SIT টিম মণিপুর পুলিশের বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করে।

৫) বাটলা হাউস এনকাউন্টার ঘটে ২০০৮ সালে দিল্লিতে। ইন্ডিয়ান মুজাহিদিনের দুই সদস্যকে দিল্লির জামনগরের বাটলা হাউসে মারা হয়। মারা যায় ইন্সপেক্টর মোহন চন্দ্র শর্মাও। অভিযোগ ওঠে এটা সাজানো হত্যাকান্ড।

৬) রামনারায়ণ গুপ্তকে ২০০৬ সালে এনকাউন্টার করে মুম্বই পুলিশ। অভিযোগ কুখ্যাত গ্যাংস্টার ছোট রাজনের দলের সঙ্গে যোগ। এই ঘটনার ১৩ জন পুলিশ কর্মী সহ ২১ জনের যাবজ্জীবন সাজার হয়।

৭) ২০০৬ সালে গুজরাট পুলিশের এনকাউন্টার শাখা সোহরাবুদ্দিনকে এনকাউন্টার করে। তুলসীরাম প্রজাপতি হত্যাকান্ড ২০০৬
সোহরবুদ্দিনের সহকারী তুলসীরাম প্রজাতির এনকাউন্টার হয় ২০০৬ সালে।

৮) গুজরাট পুলিশ ২০০৪ সালে ১৯ বছরের ইসারত জাহান ও তাঁর তাঁর ৩ সঙ্গিকে এনকাউন্টার করে মারে। পুলিশের অভিযোগ ছিল এরা প্রত্যেকেই লস্করে তৈবার সদস্য, যারা তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে মারার ষড়যন্ত্র করছিল।

৯) চোরাশিকারি ও চন্দন কাঠ পাচারকারী কুখ্যাত বীরাপ্পনকে এনকাউন্টার করে মারে তামিলনাড়ু স্পেশ্যাল টাস্ক ফোর্স।

১০) ২০০৩ সালে সাদিক জামালকে এনকাউন্টার করে গুজরাট পুলিশ। অভিযোগ ছিল নরেন্দ্র মোদী ও অন্য এক বিজেপি নেতাকে মারার ষড়যন্ত্র করা।