৩৭০ ধারা কি? জানুন বিস্তারিত

নিজস্ব প্রতিবেদন : স্বাধীনতার পর থেকে জম্মু-কাশ্মীরে লাগু থাকা ৩৭০ ধারা ভারতীয় রাজনীতিতে বারবার প্রশ্নের দাবীদার। এই ৩৭০ ধারাকে রদ করার পক্ষে অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন। আবার অনেকেই জম্মু কাশ্মীর ৩৭০ ধারা বজায় রাখার পক্ষে সওয়াল করেছেন। আসলে এই ৩৭০ ধারা কি? কি কারণে এই ধারা কেবলমাত্র ভারতের জম্মু-কাশ্মীর এই লাগু করা রয়েছে? হাজার হাজার প্রশ্ন লুকিয়ে রয়েছে এই ৩৭০ ধারার মধ্যে।

১৯৪৭ সালে ভারত স্বাধীনতা লাভের পর দেশ ভাগের সম্মুখীন হয় ভারত। সেসময় জম্মু কাশ্মীর ভারতের অঙ্গ ছিলনা। জম্মু কাশ্মীরের মহারাজা হরি সিং স্বতন্ত্রভাবে সেখানে রাজত্ব চালাতে এবং চলত রাজতন্ত্র। কিন্তু সেসময় পাকিস্তান মদদপুষ্ট বেশ কিছু দুষ্কৃতী কাশ্মীর দখলের উদ্দেশ্য নিয়ে আক্রমণ করে। তখন মহারাজা হরি সিং কোন উপায় খুঁজে না পেয়ে ভারতীয় সেনাদের সাহায্য প্রার্থনা করেন। সাহায্য চাওয়া হয় ‘ইন্সট্রুমেন্ট অফ অ্যাকসেশন’ অর্থাৎ ভারতভুক্তির শর্তে। সেই চুক্তিতে সংবিধানের ৩৭০ ধারা অনুযায়ী স্বায়ত্তশাসনের বিশেষ মর্যাদা সংস্থান রাখা হয়।

Source

৩৭০ ধারায় কাশ্মীরের বাসিন্দারা কি কি সুবিধা পায়?

  • জম্মু-কাশ্মীরের বাসিন্দাদের একসাথে দুটি নাগরিকত্ব পেয়ে থাকেন।
  • জম্মু-কাশ্মীর এলাকার রাষ্ট্রীয় পতাকা আলাদা।
  • যেখানে ভারতের অন্যান্য রাজ্যের বিধানসভার সময়কাল ৫ বছর, সেখানে জম্মু-কাশ্মীরের বিধানসভার সময়কাল ৬ বছর।
  • জম্মু-কাশ্মীরের ভিতরে ভারতের রাষ্ট্রীয় পতাকার অপমান করা হলে তা আইনত দন্ডনীয় অপরাধ নয়।
  • জম্মু-কাশ্মীরের কোন মহিলা বাসিন্দা ভারতের অন্য কোন রাজ্যের পুরুষকে বিবাহ করলে তার জম্মু-কাশ্মীরের নাগরিকত্ব নষ্ট হয়ে যায়।
  • ঠিক একইভাবে ভারতের অন্য কোন রাজ্যের কোন মহিলা জম্মু-কাশ্মীরের কোন পুরুষ বাসিন্দাকে বিয়ে করলে তিনি জম্মু-কাশ্মীরের নাগরিকত্ব পেয়ে যান অতি সহজেই।
  • ৩৭০ ধারার বজায় থাকার কারনে ভারতের কোন আইন কানুন জম্মু-কাশ্মীরে লাগু হয় না।
  • ৩৭০ ধারার বজায় থার ফলে পাকিস্তানের কোন নাগরিক জম্মু-কাশ্মীরে থাকলে তিনিও ভারতের নাগরিকত্ব পেয়ে যান।
  • পঞ্চায়েত ব্যবস্থার আইন জম্মু-কাশ্মীরে নেই।
  • ভারতের শীর্ষ আদালত সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ বা আদেশ জম্মু-কাশ্মীরের লাগু হয় না।
  • পাকিস্তানের কোন পুরুষ নাগরিক জম্মু-কাশ্মীরের কোন মহিলাকে বিয়ে করলে অতি সহজেই ভারতের নাগরিকত্ব মিলে যায়।
  • ৩৭০ ধারার বজায় থাকায় কাশ্মীরে আর.টি আই., সি.এ.জি.,আর.টি.ই. ও লাগু করা সম্ভব নয়।
  • জম্মু কাশ্মীরে থাকা হিন্দু, শিখদেরও ১৬% সংরক্ষণ মিলে না।
  • জম্মু কাশ্মীরে বসবাসকারী মহিলাদের উপর শরীয়ৎ আইন লাগু রয়েছে।
  • ভারতের অন্য কোন রাজ্যের বাসিন্দা জম্মু কাশ্মীরে গিয়ে জমি কিনতে পারবেন না। অথচ জম্মু-কাশ্মীরের যেকোনো বাসিন্দা ভারতের যেকোনো স্থানে জমি কিনতে পারবেন।
  • জম্মু কাশ্মীরের জন্য রয়েছে আলাদা সংবিধান।

আজ রাজ্যসভায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ জম্মু-কাশ্মীর সংরক্ষণ সংশোধনী বিল পেশ করতে গিয়ে কাশ্মীর থেকে ৩৭০ ধারা তুলে নেওয়ার প্রস্তাব রাখেন। এ নিয়ে রাজ্যসভায় শুরু হয় চরম হৈ হট্টগোল। অধিবেশন শুরু হওয়ার সাথে সাথে বিরোধী দলগুলি কাশ্মীর উপত্যকা পরিস্থিতি নিয়ে মুলতবি প্রস্তাব আনেন।

এই বিল পেশের পর PDP র রাজ্যসভার দুই সাংসদ মির ফৈয়াজ এবং নাজির আহমেদ লাওয়ে সংবিধান ছিঁড়ে ফেলতে চেয়েছিলেন। আর এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে রাজ্যসভার চেয়ারম্যান বেঙ্কাইয়া নাইডু তাদের সভা কক্ষ ত্যাগ করতে বলেন।

৩৭০ ধারা বিলোপ নিয়ে রাজ্যসভায় বিল পেশ করার পর জম্মু-কাশ্মীর সংরক্ষণ প্রসঙ্গ নিয়ে মেহবুবা মুফতি বললেন, “৩৭০ ধারা বিলোপ অসাংবিধানিক ও বেআইনি৷ রাজ্যের মানুষকে ভয় দেখিয়ে জম্মু-কাশ্মীর দখল করতে চায় কেন্দ্র৷ নতুন ভারতে ধর্মের নাম গণহত্যা চলছে৷” “গণতন্ত্রের কালো দিন” বলেও জানিয়েছেন জম্মু কাশ্মীরের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী মেহবুবা মুফতি।