জুতো পরে পতাকা উত্তোলন করা যায়? আইন কি বলছে

নিজস্ব প্রতিবেদন : জাতীয় পতাকার ব্যবহার সম্পর্কে প্রিভেনশন অব ইনসাল্টস টু ন্যাশনাল অনার অ্যাক্ট ১৯৭১ অ্যান্ড ফ্ল্যাগ কোড অব ইন্ডিয়া’তে বহু বিধি নিষেধ এবং আইন কানুনের কথা বলা আছে। পতাকার আকৃতি কেমন হবে, পতাকার ব্যবহারের নিয়মাবর্তিতা, উত্তোলনের সময় ইত্যাদি। কিন্তু কোথাও স্পষ্ট করে উল্লেখ নেই, জুতো পরে পতাকা উত্তোলন করা যাবে, না যাবে না।

ভারতীয় আইনে বলা রয়েছে ‘প্রিভেনশন অব ইনসাল্টস টু ন্যাশনাল অনার অ্যাক্ট ১৯৭১ অ্যান্ড ফ্ল্যাগ কোড অব ইন্ডিয়া’র কথা। সেখানেই সুস্পষ্টভাবে নির্দেশিকা রয়েছে, জাতীয় পতাকার মাপ কেমন হবে, জাতীয় পতাকার রং কেমন হবে, ফ্ল্যাগ পোলের উচ্চতা কতটা হবে ইত্যাদি নানান বিষয়। এই ধারার দুটি অংশ রয়েছে। যে দুটি অংশের প্রথম অংশের নির্দেশিকায় তুলে ধরা হয়েছে, পতাকার আকৃতি, রং এবং উত্তোলন সম্পর্কিত বিষয়গুলি। দ্বিতীয় ভাগে তুলে ধরা হয়েছে, কি কি করলে জাতীয় পতাকার অবমাননা হয়।

  • নির্দেশিকাগুলি হলো- জাতীয় পতাকার আকার অবশ্যই আয়তাকার হতে হবে, যার মাপ হতে হবে ৩:২ অনুপাতে। যানবাহন এবং বিভিন্ন জায়গায় জাতীয় পতাকা ব্যবহারের ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট করে নির্দেশিকা দেওয়া হয়েছে সাইজের বিষয়ে। যেমন বিশিষ্ট দেশ প্রধান বা গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে বিমানে ৪৫০×৩০০ মিলিমিটার সাইজের, মোটর গাড়িতে জাতীয় পতাকা ব্যবহার করলে ২২৫x১৫০ মিলিমিটার সাইজের, প্রশাসনিক টেবিলে জাতীয় পতাকা রাখার জন্য সাইজ হবে ১৫০x১০০ মিলিমিটার।
  • ভারতের জাতীয় পতাকা প্রদর্শনের ক্ষেত্রে ভারতের সাধারণ নাগরিক, সরকারি বা বেসরকারি প্রতিষ্ঠান অথবা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে কোন বাঁধা নেই।
  • তরল জাতীয় কোন পদার্থে জাতীয় পতাকাকে ডোবানো যাবে না।
  • জাতীয় পতাকাকে ব্যবহার করা যাবে না পোশাকের অংশ অথবা পোশাক রূপে।
  • কোনরকম ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা যাবে না জাতীয় পতাকাকে।
  • জাতীয় পতাকাকে সেলাই করা যাবে না অথবা বালিশ, চাদর, গামছা, রুমালের মত কোন কিছুর উপর প্রিন্ট করা যাবে না।
  • জাতীয় পতাকার উপর যে কোন রকম লেখালেখি নিষিদ্ধ।
  • জাতীয় পতাকাকে কোন কিছু দিয়ে ঢাকা দেওয়া অথবা জাতীয় পতাকার ব্যবহার করে কোন কিছু বহন করা যাবে না।
  • জাতীয় পতাকা উত্তোলনের সময় অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে যেন গেরুয়া রং সবসময় উপরে থাকে। অর্থাৎ উল্টোভাবে জাতীয় পতাকা ব্যবহার করা জাতির অবমাননা।
  • জাতীয় পতাকাকে মঞ্চ বা টেবিল ঢাকা দেওয়ার জন্য ব্যবহার করা নিষিদ্ধ।
  • ছিঁড়ে যাওয়া বা ক্ষতিগ্রস্ত জাতীয় পতাকা উত্তোলন অথবা অন্য কোন কাজে ব্যবহার করা নিষিদ্ধ।
  • সূর্যোদয় এবং সূর্যাস্ত এই সময়ের মধ্যেই জাতীয় পতাকা উত্তোলন অবস্থায় থাকা বাধ্যতামূলক। অর্থাৎ অন্ধকার নামার আগেই জাতীয় পতাকাকে উত্তোলন স্থল থেকে যথাযথ মর্যাদায় নামিয়ে নিতে হবে। ইত্যাদি নানান বিষয়।
  • এখানে এও বলা আছে, গোপন অথবা প্রকাশ্যে জাতীয় পতাকার অবমাননা করলে ১৯৭১ (The Prevention Of Insult To National Honour Act)-এর ২ নং ধারা অনুযায়ী ওই ব্যক্তি দোষী হবেন। দোষ প্রমাণিত হলে সর্বোচ্চ তিন বছরের কারাদণ্ড এবং জরিমানা করা হতে পারে। কিন্তু এই আইনের কোথাও স্পষ্ট বলা নেই জুতো খুলে পতাকা উত্তোলনের কথা। তবে আমরা সাধারণত তেরঙ্গার প্রতি শ্রদ্ধা এবং সম্মানের জন্য জুতো খুলে পতাকা উত্তোলন করে থাকি।

প্রসঙ্গত ভারতের প্রধানমন্ত্রী, রাষ্ট্রপতি, উপরাষ্ট্রপতি, কোন রাজ্যের রাজ্যপালকে জুতো খুলে পতাকা উত্তোলন করতে দেখেছেন?