করোনাকালে কার বাড়লো সম্পত্তি, কার কমলো, রইলো তালিকা

শর্মিষ্ঠা চ্যাটার্জী : বিগত দু’বছর যাবৎ করোনাকালে সর্বাধিক বিপন্নতার সম্মুখীন হয়ে যে প্রাণী তারা হলো মানুষ। অর্থনৈতিক পটভূমিতে এসেছে বড়সড় বদল। তবে দেশের বিজনেসম্যান থেকে শুরু থেকে ক্রিকেটার, রাজনীতিবিদ কারোর সম্পত্তির পরিমাণ বেড়েছে, কারোর আবার সম্পত্তির পরিমাণ হ্রাস পেয়ে ভান্ডার ফাঁকা হয়েছে। একুশের হিসেবে কার সম্পত্তি পরিমাণ কত দাঁড়ালো একবার ফিরে দেখে নেওয়া যাক।

১) এলন মাস্ক : এই ধনকুবেরের সম্পত্তির পরিমাণ ক্রমশ বেড়েই চলেছে। বর্তমান হিসেবে ওনার সম্পত্তির পরিমাণ ২২৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। এই ব্যক্তির আয়ের বেশিরভাগ প্রযুক্তি ক্ষেত্রে থেকেই আসে। এলন মাস্কের দুটি সংস্থার কথা বলতে গেলে টেসলা এবং স্পেসএক্সের কথাই সবার আগে আসে। এলনের সম্পত্তির পরিমাণ বলতে গেলে এই দুই সংস্থা ছাড়াও আরও ৪২ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের শেয়ার রয়েছে। মানুষের মস্তিষ্কের সাথে কম্পিউটারকে যুক্ত করার কাজ যে সংস্থা করছে নিউরোলিঙ্ক তাও এলন মাস্কের। দ্য বোরিং কোম্পানি ওনারই তৈরি।

২) জেফ বেজোস : অ্যামাজনের উদ্যোক্তা এবংসিইও জেফ বেজোসের স্থান এলন মাস্কের ঠিক পরেই। ব্লু অরিজিন এবং দ্য ওয়াশিংটন পোস্ট নামের অন্য দুই প্রতিষ্ঠান ও রয়েছে। তাঁর মোট সম্পত্তির পরিমাণ প্রায় ১৯৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। তিনি এই বছরেই তাঁর ভাই মার্ক বেজোস কে সাথে নিয়ে নিজের সংস্থার তৈরি করা রকেটে চেপে মহাকাশ ঘুরে এসেছে। মহাকাশে নিজের অভিজ্ঞতা বলতে গিয়ে সেরা দিন হিসেবে ব্যাখ্যা করেছেন তিনি।

৩) বিল গেটস : বিশ্বের সবথেকে বড় সফটওয়্যার নির্মাতা প্রতিষ্ঠান মাইক্রসফটের প্রতিষ্ঠাতা বিল গেটস এই মহামারীতেও যাঁর সম্পত্তির পরিমাণ এতটুকুও কমে যায়নি। বর্তমানে হিসেবে তিনি ১৪৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের মালিক। ২০১৪ সাল পর্যন্ত তিনি মাইক্রোসফটের ম্যানেজিং ডিরেক্টর পদে থাকলেও বর্তমানে তিনি একজন সদস্য হিসেবে যুক্ত রয়েছেন। এই বিজনেস ম্যান বিভিন্ন সমাজ সেবামূলক কাজের সাথে যুক্ত রয়েছেন।

৪) মুকেশ আম্বানি : রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজের কর্ণধার এই চলতি বছরেই ১০০ বিলিয়ন ডলার ক্লাবের সদস্য হয়েছেন। এলন মাস্কদের মত ধনকুবেরদের সমকক্ষ হয়ে উঠছেন তিনিও। বর্তমানে তাঁর সম্পত্তির পরিমাণ ১০০.৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। করোনা অতিমারি চললেও তাঁর সম্পত্তির পরিমাণ কিন্তু কোনো অংশেই কম হয়ে যায়নি।

৫) গৌতম আদানি : এশিয়ার ধনীদের তালিকায় রিলায়েন্সের কর্ণধারের পরেই রয়েছে এনার নাম। ২০২১ এ আদানির উপার্জনের পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে ২৬১ শতাংশ। পরিসংখ্যার নিরিখে তিনি ১ লক্ষ কোটি টাকার পাঁচটি সংস্থার মালিক বর্তমানে। ১৯৮৮ সালে আদানি গোষ্ঠী প্রতিষ্ঠার পর থেকে তাঁকে আর পেছনে ফিরে দেখতে হয়নি একাধারে তিনি বর্তমানে একাধিক ব্যাবসার সাথে যুক্ত রয়েছেন।

৬) অক্ষয় কুমার : ভারতীয় অভিনেতাদের মধ্যে চলতি ২০২১ এ সবথেকে বেশি যিনি আয় করেছেন তিনি হলেন অক্ষয় কুমার। গত এক বছরে তাঁর আয়ের পরিমাণ ১৮৫ কোটি টাকা। করোনা পরিস্থিতিতে একাধিক সমস্যার মধ্যে দিয়ে গেলেও অভিনেতার কিন্তু সম্পত্তির পরিমাণ মোটেই কমেনি। হাজার বাধা অতিক্রম করেও বর্তমানে তাঁর সম্পত্তি দাঁড়িয়েছে ৩২৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।

৭) শাহরুখ খান : এই বছরটা খুব একটা ভালো কাটেনি বলিউডের কিং খানের। মাদক যোগে ছেলে আরিয়ান খানের গ্রেফতারি, করোনার জেরে শুটিংয়ে বাধা কিন্তু সবকিছুর পরেও তাঁর রোজগার কিন্তু বিন্দুমাত্র কমেনি। বর্তমানে শাহরুখ খানের সম্পত্তির পরিমাণ ৬৯০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।

৮) বিরাট কোহলি : ব্যাট আর চলছেনা আগের ফর্মে তার ওপর টিটুয়েন্টির অধিনায়কত্ব ছেড়েছেন চলতি বছরেই। বোর্ড প্রেসিডেন্ট সৌরভ গাঙ্গুলির সাথে মতবিরোধ তো রয়েছেই। তবে সবমিলিয়ে কিন্তু রোজগারের পরিমাণ মোটেই কমেনি। ক্রিকেট ছাড়াও প্রচুর কোম্পানির সাথে চুক্তিবদ্ধ রয়েছেন তিনি তাই এই বছরে বিরাটের আয়ের পরিমাণ ২২৮.০৯ কোটি টাকা। এই মুহূর্তে তিনি বিশ্বের মধ্যে তৃতীয়ত বিত্তবান ক্রিকেটার। সম্পত্তির পরিমাণ ৬৩৮ কোটি টাকা।

৮) শচীন : ২০১৩ সালে অবসর নিয়েছেন তিনি। মাঝে এতগুলো বছর কেটে গিয়েছে কিন্তু সম্পত্তির দিক দিয়ে তিনি বিত্তবানই থেকে গিয়েছেন। এই বছরেই তাঁর মোট আয় ৭২.৫০ কোটি টাকা। বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ক্রিকেটার তিনি। বিজ্ঞাপন ও একাধিক ব্যাবসার সাথে যুক্ত হয়ে তাঁর মোট সম্পত্তির পরিমাণ ১০৯০ কোটি টাকা।

৯) নরেন্দ্র মোদি : সাম্প্রতিক তথ্যের ভিত্তিতে এই বছরে ২২ লক্ষের সম্পত্তি বেড়েছে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর। তাঁর বর্তমান সম্পত্তির পরিমাণ ৩.০৭ কোটি টাকা। শেয়ারে তিনি কোনরকম বিনিয়োগ করেননি। দেড় লক্ষ টাকার জীবনবিমা রয়েছে।

একুশে যাঁদের সম্পত্তির ভান্ডার কমে গিয়েছে

১) ডোনাল্ড ট্রাম্প : ফোর্বসের তালিকায় বিশ্বের ৪০০ ধনী ব্যক্তির তালিকায় ঠাঁই হয়নি ডোনাল্ড ট্রাম্পের। মহামারির পরবর্তী অবস্থা থেকেই তাঁর ব্যবসা স্থবির হয়ে পড়ে। নিজের সম্পত্তি বেচতে নারাজ ট্রাম্পকে ২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ক্ষতির মুখে পড়তে হয়েছিল। এই কারণেই তালিকায় থাকার জন্য ৪০০ মিলিয়ন ডলার কম ছিল।

২) জ্যাক মা : আলিবাবা গ্রুপের কর্ণধার জ্যাক মা এবার পিছিয়ে গিয়েছেন। এই বছরে জ্যাক মায়ের মোট সম্পত্তির পরিমাণ ৪ হাজার ৮০০ কোটি ডলার কে ছাপিয়ে গিয়েছেন হুয়াতেং।

৩) বিজয় মালিয়া : দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার আগে ভারতের ধনীদের মধ্যে সবার ওপরে নাম ছিল তাঁর। তবে এসবিআই থেকে নয় হাজার কোটি টাকা ঋণ নিয়ে না মেটানোর অভিযোগ আসে বিজয় মালিয়ার বিরুদ্ধে। কিছুদিন আগেই মালিয়া এবং নীরব মোদীর সম্পত্তি বিক্রি করে কেন্দ্র ১৩ হাজার ১০৯ কোটি টাকা উদ্ধার করেছেন। ফলে অবস্থা আগের থেকে খারাপ হয়েছে বলাই যায়।

৪) নীরব মোদী : পাঞ্জাব ন্যাশনাল ব্যাংকের ১৩ হাজার কোটি টাকা ঋণ খেলাফের অভিযোগ রয়েছে এই হীরে ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে। ইডি নীরব মোদীর সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করে অর্থ সংগ্রহ করেছিল ফলে মনে করাই হচ্ছে তাঁর সম্পত্তির পরিমাণ কমেছে।

৫) অনিল আম্বানি : এশিয়ার সবথেকে ধনী ব্যক্তি মুকেশ আম্বানির ছোট ভাই অনিল আম্বানির এখন খুব খারাপ অবস্থা। ব্যবসায়িক সূত্রে প্রচুর সম্পত্তি দুই ভাই পেলেও দু বছর আগে শোনা যায় তিনি অলঙ্কার বেচে আইনজীবীর বিল পরিশোধ করেছেন। বর্তমানে তাঁর সম্পত্তি নেট জিরো।