অন্ধত্বকে জয় করে মাধ্যমিক – উচ্চ মাধ্যমিকে স্কুলে প্রথম, অদম্য ইচ্ছা দৃষ্টিশক্তি ফিরে পাওয়ার

লাল্টু : রঙিন পৃথিবীকে দেখার স্বপ্ন সকলের থাকে, পৃথিবীর বেশিরভাগ মানুষ তাকে দেখতে পেলেও দুর্ভাগ্যবশত দৃষ্টিহীনতা গুটিকয়েক মানুষ তা দেখার সৌভাগ্য পান না। তারা জানেনই না পৃথিবীটা কেমন, তবে জানার এবং দেখার ইচ্ছা অবশ্যই প্রবল। আবার তারা এই অন্ধত্ব সত্ত্বেও জয় করে ফেলেন অনেক কিছু, সবকিছুকে জয় করে একজন সাধারণ মানুষের মতোই জীবন যাপন করে থাকেন। কিন্তু অন্ধত্বকে নিয়ে পরীক্ষায় আর বড় সাফল্য পাওয়ার নজির সচরাচর কম। এইকম নজিরের এক কলেজছাত্রী পিউ চক্রবর্তী।

পিউ চক্রবর্তী বীরভূমের লোবা গ্রাম পঞ্চায়েতের কোটা গ্রামের বাসিন্দা। যখন তার বয়স তিন বছর, তখন হারিয়ে ফেলেন নিজের দৃষ্টিশক্তি। তারপর থেকেই একজন অন্ধের মত বড় হয়ে ওঠা। তবে তার এই অন্ধত্ব তার জীবনে কোনো বাধার কারণ হয়ে উঠে দাঁড়ায় নি। অন্যান্য সাধারণ ছাত্র-ছাত্রীদের সাথে তার পড়াশোনা, বড় হয়ে ওঠা। গ্রামের প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করার পর তিনি ভর্তি হন পাশের গ্রাম ইলামবাজারের শীর্ষা শৈলজাকান্ত উচ্চ বিদ্যালয়ে। স্কুলে ভর্তি হওয়া থেকে পড়াশোনায় তিনি নজর কাড়েন শিক্ষকদের। আর তারপর মাধ্যমিক এবং উচ্চ মাধ্যমিকে অন্যান্য সাধারণ ছাত্র-ছাত্রীদেরকে হার মানিয়ে স্কুলের মধ্যে প্রথম স্থান দখল করেন। পরে তিনি ইতিহাস অনার্স নিয়ে ভর্তি হন বীরভূমের সিউড়ির বীরভূম মহাবিদ্যালয় কলেজে। তিনি বর্তমানে ওই কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী।

পড়াশোনায় সাফল্যতার পাশাপাশি তার মধ্যে রয়েছে অদম্য দেখার ইচ্ছা। সেই দেখার ইচ্ছাকে ভর করে তিনি কয়েক মাস আগে হায়দ্রাবাদে যান চোখের চিকিৎসার জন্য। আর সেখানে চিকিৎসা শুরু হতেই দেখার ইচ্ছার প্রবণতা আরও বেড়ে যায়। কারণ ডাক্তাররা তাকে আশ্বস্ত করেন, তার চোখের কর্নিয়া পরিবর্তন করলে তিনি দৃষ্টিশক্তি ফিরে পাবেন।

কিন্তু পাঁচ অক্ষরের এই ‘অপারেশন’ কথাটি যতটা ছোট, কিন্তু এর ব্যয় বহন করা বড় কঠিন, তাও আবার চোখের কর্নিয়া বদলের মত অপারেশন। বিপুল ব্যয়বহুল এই অপারেশনের ব্যয় বহন করা পিউয়ের পরিবারের পক্ষে কোনোভাবেই সম্ভব নয়। কারণ তার পরিবারের আয় নির্ভর করে তার বাবার উপর, যিনি কিনা একজন সাধারন পুরোহিত। বাস্তব বলতে এটাই, এর ওর কাছে হাত পেতে সংসার চলে। বাড়িতে রয়েছে আরও এক ছোট বোন। অন্যদিকে আবার তার মা-ও অন্ধ।

এমত অবস্থায় পিউয়ের পড়াশোনার জন্য প্রথম থেকেই দুবরাজপুর শ্রী শ্রী রামকৃষ্ণ আশ্রম বেশ কিছুটা সাহায্য করে থাকে। তবে এই বিপুল পরিমাণ চিকিৎসার ব্যয় বহন করা তাদের পক্ষেও সম্ভব নয়। ফলতো শ্রী শ্রী রামকৃষ্ণ আশ্রমের মহারাজ স্বামী সত্য শিবানন্দ মহারাজ এবং ওই মেধাবী পড়ুয়া পিউও সাধারণ মানুষের কাছে সাহায্যের আর্তি জানিয়েছেন। ইতিমধ্যেই পিউয়ের পাশে দাঁড়িয়েছেন বীরভূম জেলা তৃণমূল সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল, তিনি আর্থিকভাবে বেশ কিছুটা সাহায্য করেছেন। পাশে দাঁড়িয়েছেন দুবরাজপুর ব্লকের কৃষি কর্মাধ্যক্ষ রফিউল খান, আশ্বাস দিয়েছেন ভবিষ্যতে আরও সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেওয়ার। এছাড়াও পাশে দাঁড়িয়েছেন দুবরাজপুর থানার ওসি শেখ মহঃ আলী। কিন্তু তারপরেও চিকিৎসার জন্য এবং পড়াশোনা চালানোর জন্য যেটুকু অর্থের প্রয়োজন তাও বহন করা ওই পরিবারের পক্ষে সম্ভব নয়। সকলের আর্তি, সাধারণ মানুষরা যদি পিউয়ের পাশে দাঁড়ায় তাহলে হয়তো চিকিৎসায় সে ফিরে পেতে পারে দৃষ্টিশক্তি, দেখতে পারে পৃথিবীর আলো।

পিউ চক্রবর্তী বর্তমানে ইতিহাস নিয়ে পড়াশোনা করার পাশাপাশি তার ভবিষ্যতের ইচ্ছা হলো মাস্টার ডিগ্রি করার পর শিক্ষকতার জিবিকাকে বেছে নেওয়া।