ব্যাঙ্কে টাকা রাখেন, ব্যাঙ্ক দেউলিয়া হলে আপনার সঞ্চয় কি হবে!

Shyamali Das

Updated on:

Advertisements

নিজস্ব প্রতিবেদন : দিনের পর দিন কষ্ট করে সঞ্চয় করার পর সেই টাকা ব্যাঙ্কে জমা রাখেন। কিন্তু যে ব্যাঙ্কে টাকা জমা রাখছেন সেই ব্যাঙ্ক যদি কোনদিন দেউলিয়া হয়ে পড়ে তাহলে আপনার সঞ্চিত অর্থের কি হবে তা জানেন!

Advertisements

Advertisements

সম্প্রতি একটি প্রাইভেট ব্যাঙ্ক তাদের পাশবুকে আপনার সঞ্চিত অর্থের কী হবে তা নিয়ে স্ট্যাম্প দিয়ে স্পষ্ট করে জানিয়ে দিতে শুরু করেছে, যদি আপনার ব্যাঙ্ক কখনো দেউলিয়া হয়ে পড়ে তাহলে সঞ্চয় কি হবে তা সম্পর্কে। এই স্ট্যাম্প তারা পাসবইয়ে দিচ্ছে আরবিআইয়ের নির্দেশিকা অনুসারেই। কারণ আরবিআই আগেই জানিয়েছিল ব্যাঙ্ক সম্পর্কিত এই নিয়ম যেন সকলেই জানে তার জন্য স্ট্যাম্প দেওয়ার কথা।

Advertisements

দেশের সবথেকে বড় প্রাইভেট ব্যাঙ্কের সম্প্রতি এরকম স্ট্যাম্প দেওয়া একটি ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়ে পড়ে। তারপর থেকেই সাধারণ মানুষের মধ্যে অজস্র প্রশ্ন ঘোরাফেরা করতে শুরু করে, উঠে সোশ্যাল মিডিয়াতেও। সেই সকল প্রশ্নের উত্তরে ওই প্রাইভেট ব্যাঙ্কের তরফ থেকে জানানো হয় ২০১৭ সালে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের সার্কুলারের কথা। যে সার্কুলারের মধ্যে শুধু প্রাইভেট ব্যাঙ্কগুলি নয়, দেশের সমস্ত ব্যাঙ্কই পরে।

ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ জানায়, “ডিআইসিজিসি নিয়মে ব্যাঙ্ক দেউলিয়া বা লিকুইডেশনে গেলে লিকুইডেটরের মাধ্যমে গ্রাহকরা টাকা পাবেন। এর জন্য আপনাকে আবেদন করতে হবে। আবেদনের ২ মাসের মধ্যে ১ লক্ষ টাকা পর্যন্ত ক্ষতিপূরণ মিলবে৷”

অর্থাৎ আমানতকারীর এক লক্ষ টাকার বেশি আমানত থাকলেও সম্পূর্ণ টাকা ফেরৎ পাওয়ার কোনও নিশ্চয়তা নেই। তবে লিকুইডেটর আপনার আবেদনের দু’মাসের মধ্যে ১ লক্ষ টাকা আপনাকে দেবে।

ওই প্রাইভেট ব্যাঙ্কের দেওয়া স্ট্যাম্পের বিষয়ে ব্যাঙ্কের বক্তব্য, “আরবিআইয়ের নির্দেশ মেনেই গ্রাহক সচেতনতায় এই স্ট্যাম্প দেওয়ার পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে।”

এফআরডিআই বিলেও এই সুপারিশ ছিল, যদিও সেই বিল পাস হয়নি। কিন্তু সাধারণ মানুষের প্রশ্ন হল, তাহলে কি ব্যাঙ্ক দেউলিয়া হলে আমজনতার খাটনির টাকা অস্বীকার করতে পারে ব্যাঙ্ক! এই প্রশ্নের উত্তরে ব্যাঙ্কের হাতিয়ার ২০১৭ সালের আরবিআইয়ের ওই নির্দেশিকা। যেখানে বলা হয়েছে, ব্যাঙ্ক দেউলিয়া হলে টাকা ফেরত নেওয়ার জন্য আবেদন করা হলে, আবেদনের দু’মাসের মধ্যে ১ লক্ষ টাকা পর্যন্ত ক্ষতিপূরণ দিবে ডিপোজিট ইনস্যুরেন্স ও ক্রেডিট গ্যারান্টি কর্পোরেশন (ডিআইসিজিসি)।

কিন্তু তার থেকে বেশি টাকা সঞ্চিত থাকলে সেই টাকা ফেরত পাওয়ার প্রক্রিয়াও চলবে। সেই টাকা ফেরত দেওয়ার জন্য আরবিআই লিকুইডেটর নিয়োগ করে। তারা ব্যাঙ্কের সম্পদের মূল্যায়ন করে টাকা ফেরত দেওয়ার প্রক্রিয়া চালায়। এমনকি দেশের প্রতিটি ব্যাঙ্কের মোট মূলধনের একটি অংশ আরবিআইয়ের কাছে জমা থাকে। সেখান থেকেও ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়। আরবিআইয়ের কাছে থাকা আমানতের বীমাও করা থাকে, যেখান থেকেই ১ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ পাওয়া যায়।

তবে বর্তমানে দেশের আর্থিক মন্দা অবস্থায় এবং পিএমসি ব্যাঙ্ক কেলেঙ্কারির মুহূর্তে ২০১৭ সালের নির্দেশিকা ২০১৯ সালে স্ট্যাম্প মেরে গ্রাহকদের জানানোর ক্ষেত্রে উদ্বেগে পড়েন লক্ষ লক্ষ আমানতকারী।

সে ক্ষেত্রে বলাই বাহুল্য, ব্যাঙ্কিং ক্ষেত্রে গ্রাহক নিরাপত্তা বর্তমানে খুবই আঁটোসাঁটো। সমীক্ষা বলছে, গত ৪০ বছরে ব্যাঙ্কে টাকা রেখে কাউকে খোয়াতে হয়নি। কোঅপারেটিভ ব্যাঙ্ক, গ্রামীণ ব্যাঙ্কের মতো ব্যাঙ্কে তালা ঝুললেও গ্রাহকরা ক্ষতিপূরণ পেয়েছেন। তবে ভবিষ্যতে এই সুরক্ষাকবচ থাকে কিনা, তা নিয়েই সংশয়।

Advertisements