নিজস্ব প্রতিবেদন : একুশের বিধানসভা নির্বাচনে গেরুয়া শিবির বাংলায় আসল পরিবর্তনের ডাক দিয়ে এবার ২০০ পার করার স্লোগান তুলেছিল। আর এই লক্ষ্যকে পূরণ করার জন্য সর্বশক্তি প্রয়োগ করা হয়েছিল বিজেপির তরফ থেকে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ ছাড়াও কেন্দ্রীয় একাধিক মন্ত্রীকে বাংলা দখলে নামানো হয়েছিল। কিন্তু সেই লক্ষ্য পূরণে ব্যর্থ হওয়ার পাশাপাশি রাজনৈতিক মহলের বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন একেবারেই ভরাডুবির মুখ দেখতে হয় তাদের। কিন্তু কেন? এর পিছনে রাজনৈতিক মহলের বিশেষজ্ঞরা ১০টি কারণ খুঁজে পাচ্ছেন।
১) ধর্মীয় মেরুকরণের পরিপ্রেক্ষিতে জয় হাসিল করার টার্গেটে নামলেও তা বিজেপির পক্ষে সম্ভব হয়নি। হিন্দু ভোট একত্রিত করে জয় লাভ করার এই কৌশলে ভরাডুবি হওয়ার পাশাপাশি বিজেপিকে রুখে দিতে সব ধর্মের মানুষেরা তৃণমূলকে অবলম্বন করেছে। এমনটাই মনে করছেন ওয়াকিবহাল মহলের একাংশ।
২) বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতারা একাধিকবার রাজ্যে এসে কৃষক, শ্রমিক এবং অন্যান্য সম্প্রদায়ের বাড়িতে মধ্যাহ্নভোজন করলেও সেই কৌশল সম্পূর্ণ মুখ থুবড়ে পড়েছে বলেও মনে করছেন ওয়াকিবহাল মহলের একাংশ। বরং এই কৌশলের বিরোধিতা করে তৃণমূল বারংবার প্রশ্ন তুলেছে করোনা এবং আমফানের সময় তারা কোথায় ছিলেন? যার ফলে বিজেপির এই কৌশল যেন বুমেরাং হয়ে গেল।
৩) বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতাদের বিরুদ্ধে তৃণমূল বারংবার ‘বহিরাগত’ তত্ত্ব দিয়ে বিঁধেছে। আর এই তথ্য ভোটবাক্সে অনেকটাই ফলপ্রসূ হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। কারণ এই তত্ত্বকে বাংলার সংস্কৃতি, ভাষা এবং আবেগের সাথে সামঞ্জস্য তৈরি করে বিজেপি তার খন্ডন করতে ব্যর্থ হয়।
৪) মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী শূন্যতা বিজেপির হারের অন্যতম কারণ বলে মনে করছেন ওয়াকিবহাল মহলের একাংশ। তাদের দাবি যেখানে বিপক্ষ অর্থাৎ তৃণমূলের জনপ্রিয় মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী রয়েছেন সেখানে বিজেপি কোনরকম মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী না এনে অনেকটাই ভুল করলো।
৫) স্থানীয় স্তরে বিজেপি নেতাদের গ্রহণযোগ্যতা বিজেপির এই খারাপ ফলাফলের জন্য অনেকটাই দায়ী বলে মনে করছেন ওয়াকিবহাল মহলের একাংশের। যেখানে বেশিরভাগ জেলাতেই তৃণমূলের স্থানীয় নেতারা বেশ জনপ্রিয়তা লাভ করেছেন সেই জায়গায় বিজেপি অনেকটাই পিছিয়ে।
৬) তৃণমূল নেতাদের দলে টানা বিজেপির হারের অন্যতম কারণ বলে মনে করা হচ্ছে। ওয়াকিবহাল মহলের একাংশের দাবি করেছেন, তৃণমূল ভেঙে বিজেপিতে যোগ করার খেলায় বিজেপি একসময় দুর্নীতিগ্রস্ত তৃণমূল নেতাদেরও ভুলে গিয়ে তাদের দলে নিয়ে নেয়। এটা যেমন বিজেপির অন্দরে গোষ্ঠী কোন্দলের সৃষ্টি করে ঠিক তেমনই সাধারণ মানুষও খুব একটা ভালো চোখে নেন নি।
৭) ভোটের আগে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাকে তৎপর করা এবং কাজে লাগানো বাংলার মানুষ ভালো চোখে নেননি বলেও অনেকে মনে করছেন। অনেকের মতেই, কেবলমাত্র ভোটের সময় এই সকল তদন্তকারী সংস্থাকে অতি সক্রিয় হতে দেখা যায়। অথচ সাধারণ মানুষ এর পরিপ্রেক্ষিতে তেমনটা লাভ পাননি। অর্থাৎ তদন্ত তদন্তের মতই থেকে গেছে আখেরে আমজনতার কিছু লাভ হয়নি। অনেকেরই প্রশ্ন, বছরের অন্যান্য সময় কেন এই সকল সংস্থাকে সেভাবে লাফিয়ে তদন্ত করতে দেখা যায় না?
৮) ভোটের আগেই লাগাতার পেট্রোল ডিজেল, রান্নার গ্যাস এবং নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম বৃদ্ধি অনেকটাই সাধারণ মানুষকে বিজেপির প্রতি বিরূপ হতে দেখা যায়। যার প্রভাব পড়েছে এবারের নির্বাচনে বলেও মনে করা হচ্ছে।
৯) ভোটের সময় হঠাৎ করে করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধি এবং সেই করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে কেন্দ্রের ব্যর্থতা। পাশাপাশি এই পরিস্থিতিকে হাতিয়ার করে তৃণমূল একের পর এক কেন্দ্রকে বিদ্ধ করা বহুলাংশে কাজে এসেছে বলে মনে করছেন ওয়াকিবহাল মহল।
[aaroporuntag]
১০) বিজেপির রাজ্য নেতাদের একাংশের ভাষাগত সংযমের অভাব বিজেপির ফলাফল খারাপ হওয়ার কারণ হিসেবে মনে করছেন ওয়াকিবহাল মহলের একাংশ। পাশাপাশি তৃণমূল যেভাবে বিজেপি নেতাদের এই ভাষাগত আক্রমণকে হাতিয়ার করে বিজেপি সেভাবে পাল্টা তৃণমূল নেতাদের ভাষাগত আক্রমণকে হাতিয়ার করতে অক্ষম হয়েছে বলে মত তাদের।