3 Reasons for not eating Boroi before Saraswati Puja on Basant Panchami: পৌরাণিক বিশ্বাস অনুসারে হিন্দু ধর্মের বহু দেবতার মধ্যে দেবী সরস্বতী হলেন বিদ্যা ও জ্ঞানের দেবী। আর মাত্র কয়েক দিনের অপেক্ষা, তার পরেই আসছে দেবী সরস্বতীর আরাধনার দিন। প্রতি বছর মাঘ মাসের শুক্ল পক্ষের পঞ্চমী তিথিতে মহা সমারোহে পালিত হয় বিদ্যার দেবী সরস্বতীর পুজো। শাস্ত্র অনুসারে এই দিনটি বসন্ত পঞ্চমী (Basant panchami) বা শ্রী পঞ্চমী নামেও পরিচিত। এই বছর বসন্ত পঞ্চমী বা সরস্বতী পুজো অনুষ্ঠিত হবে আগামী ১৪ই ফেব্রুয়ারি।
হিন্দু ধর্মাবলম্বী মানুষরা প্রতিটি দেব দেবীর পুজো করার সময় নির্দিষ্ট কিছু প্রথা মেনে চলেন। সরস্বতী পুজোকে কেন্দ্র করেও বহু প্রথা প্রচলিত আছে। তার মধ্যে বিশেষ একটি উল্লেখযোগ্য প্রথা হলো সরস্বতী পুজোর দিন বাগদেবীর আরাধনার আগে কুল না খাওয়া। এদিকে সরস্বতী পুজোর আগেই বাজারে এসে গেছে টক মিষ্টি বিভিন্ন প্রজাতির কুল। তাই অনেকেই মনে করেন কুল তো সাধারন একটা ফল, তবে সরস্বতী পুজোর আগে এই ফল না খাওয়ার পেছনে যুক্তি কি? জ্যোতিষ বিশেষজ্ঞরা বলেন সরস্বতী পুজোর আগে কুল না খাওয়ার পিছনে নানা কারণ রয়েছে। জেনে নিন সে গুলি কি কি।
১) পৌরাণিক কারণ
প্রচলিত পৌরাণিক কাহিনী অনুসারে জানা যায় একবার মহাজ্ঞানী ব্যাসদেব বিদ্যার দেবী সরস্বতীকে তুষ্ট করতে বদ্রিকাশ্রমে কঠোর তপস্যায় বসেছিলেন। তবে এই তপস্যা শুরু করার আগে সাধন স্থানে একটি কুলের বীজ রেখে এসেছিলেন স্বয়ং দেবী সরস্বতী। শুধু তাই নয়, দেবী ব্যাসদেবের কাছে শর্ত রেখেছিলেন যতদিন এই কুলের বীজ অঙ্কুরিত হয়ে বড় গাছ হবে, সেই গাছে নতুন কুল হবে এবং সেই কুল পেকে মহর্ষি ব্যাসদেবের মাথায় পরবে ততদিন পর্যন্ত তাকে তপস্যা চালিয়ে যেতে হবে। দেবীর শর্ত মেনে নিয়ে ব্যাসদেব তপস্যা শুরু করেন। যে দিন তার মাথায় ওই গাছের নতুন কুল পরে সেই দিনটি ছিল মাঘ মাসের শুক্ল পক্ষের পঞ্চমী তিথি অর্থাৎ বসন্ত পঞ্চমী (Basant panchami)। এদিন তিনি বুঝতে পারেন দেবী সরস্বতী তার তপস্যায় সন্তুষ্ট হয়েছেন।
২) বৈজ্ঞানিক কারণ
বিজ্ঞান গবেষকরা বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গি দিয়েও এই কুল না খাওয়ার বিষয়টিকে বিবেচনা করেছেন। সরস্বতী পুজো অর্থাৎ বসন্ত পঞ্চমী (Basant panchami) যে সময় অনুষ্ঠিত হয় ঋতুর ভিত্তিতে তা শীতের অবসান ও বসন্তের শুরুর সময়। এ সময় আবহাওয়াতে অল্প ঠান্ডা ও অল্প গরম অনুভূত হয়। ঋতু পরিবর্তনের এই সময় এই কারণেই নানা রকম অসুখের প্রাদুর্ভাব লক্ষ্য করা যায়। সরস্বতী পুজোর সময়ই কুল পাকতে শুরু করে। তার আগে কাঁচা কুল খেয়ে ফেললে পেটের গোলমাল হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়। এই বৈজ্ঞানিক যুক্তি অনুসারে সরস্বতী পুজোর আগে কুল খেতে বারণ করা হয়।
৩) সামাজিক কারণ
আমাদের দেশের অর্থনীতির মূল মানদণ্ড হলো কৃষি। সেই সঙ্গে ধর্মবিশ্বাসে পরিপূর্ণ এই দেশে, যে কোন নতুন ফসল কে প্রথমে ঈশ্বরের উদ্দেশ্য উত্সর্গ করা হয়। ঈশ্বরকে নিবেদন করার পর প্রসাদ হিসেবে তা খাওয়ার প্রথা চলে আসছে আমাদের মধ্যে। এই প্রচলিত লোক বিশ্বাসের কারণেই নতুন ধান উঠলে নবান্ন উত্সব পালন করা হয়। সেই উৎসবে ধনের দেবী লক্ষীকে নতুন ধান নিবেদন করে তারপরে অন্য হিসেবে তা গ্রহণ করেন সাধারণ মানুষ। শীতকালের শেষের দিকে এই সময়টিতে কুল গাছে কুলে ভরে ওঠে এবং তা পাকতে শুরু করে। তাই এই সময়ের ফল কুলকে আগে দেবী সরস্বতীর কাছে নিবেদন করা হয়। তারপর হিন্দু বাঙালিরা এই ফলটিকে নিজেরা প্রসাদ হিসেবে গ্রহণ করেন।