নিজস্ব প্রতিবেদন : উন্নয়নকে হাতিয়াড় করে ২১ এর ভোটে বিজপির সঙ্গে সম্মুখসমরে নামতে চলেছে তৃণমূল। তা স্পষ্ট হয়ে উঠছে ভোটের মুখে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের একের পর এক প্রকল্প ঘোষণায়। জেলায় জেলায় ব্লকে ব্লকে সরকারি সুবিধা পৌঁছে দিতে এবার তাঁর নতুন রাজনৈতিক অস্ত্র, ‘দুয়ারে সরকার’।
তৃণমূলের অন্দরে দলীয় বিদ্রোহ, দশ বছর ক্ষমতায় থাকা তৃণমূল সরকারের বিরুদ্ধে জনসাধারণের স্বাভাবিক ক্ষোভ সেই সঙ্গে সর্ব ভারতীয় বিজেপির প্রবল রাজনৈতিক আক্রমণের বিরুদ্ধে উন্নয়নই যে মমতার লড়াইয়ের একমাত্র হাতিয়ার তাতে কোন সন্দেহ নেই।
বিনামূল্যে ট্যাব বিলি : করোনা মহামারীর কারণে বন্ধ স্কুল, কলেজ। এতে সবচেয়ে সমস্যায় পড়েছে নিম্ন আয়ের পরিবারের ছেলেমেয়েরা। এই সব পরিবারের ছেলেমেয়েদের পক্ষে সম্ভব হয়নি অনলাইন ব্যবস্থায় শিক্ষা গ্ৰহণ করা। রাজ্য সরকার এমন ৯ লক্ষ অল্প আয়ের পরিবারের ছেলেমেয়েদের হাতে ট্যাব তুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
সেই সঙ্গে ঘোষণা করেছেন, অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত রাজ্যের বেশ কয়েকটি স্কুলে ট্যাব দেওয়া হবে যার মাধ্যমে অনলাইন ক্লাস করতে পারবেন শিক্ষক-শিক্ষিকারা।
এর আগেই রাজ্যের স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের জন্য সবুজ সাথী প্রকল্পে সাইকেল দেন, বিনামূল্যে বই, খাতা, জুতো ও মিড ডে মিলের ব্যবস্থা করেছেন।
স্কলারশিপ : আদিবাসী পরিবারের ছাত্র-ছাত্রীদের জন্যেও ঘোষণা করেছেন ১০০ শতাংশ স্কলারশিপের। এছাড়াও আদিবাসী পরিবারের জন্য গড়া হবে ১০ লক্ষ বাড়ি।
করোনা টেস্ট : সেই সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী ঘোষণা করেছেন, বেসরকারি ভাবে rt-pcr টেস্ট করার খরচ কমে যাবার কথা। যেখানে মাত্র ৯৫০ টাকায় করানো যাবে টেস্ট।
ডিএ : রাজ্য সরকারের কর্মচারীদের জন্যেও কল্পতরু হিসাবে ঘোষণা করেছেন ডিএ দেওয়ার ব্যবস্থা। লোকসভা ভোটে রাজ্যে সরকারি কর্মচারীদের একাংশের ভোট গিয়েছিল বিজেপির দিকে। বিধানসভা ভোটে তারই আগাম প্রতিরোধ হিসাবে এই ব্যবস্থা বলে মনে করা হচ্ছে।
দুয়ারে সরকার : মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, ভোটের মুখে জনগণের আরও কাছে পৌঁছাতে চাইছে রাজ্য সরকার। ১লা ডিসেম্বর থেকে ৩০ জানুয়ারি পর্যন্ত চলবে ক্যাম্প। মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশমতো এবার থেকে ব্লকে ব্লকে ক্যাম্প করতে হবে সব দফতরকে নিয়ে। সেখানে কোনও মানুষ যদি বলেন, আমার এটা দরকার, সেটা সঙ্গে সঙ্গে দিতে হবে। আর যদি সম্ভব না হয়, তা হলে তা পরে দিতে হবে। তালিকা তৈরি করে সেই অনুযায়ী ধীরে ধীরে মানুষের হাতে পরিষেবা পৌঁছে দিতে হবে।
স্বাস্থ্য সাথী প্রকল্প : এযাবৎ স্বাস্থ্য বীমা সংক্রান্ত পশ্চিমবঙ্গ সরকারের স্বাস্থ্য সাথী প্রকল্প সীমিত ছিল কিছু নির্দিষ্ট মানুষের মধ্যে। কিন্তু ২১ এর ভোটের আগে মুখ্যমন্ত্রীর মোক্ষম চাল, সবার জন্য স্বাস্থ্য সাথী প্রকল্প। অর্থাৎ এখন থেকে পশ্চিমবঙ্গের যেকোনো বাসিন্দা স্বাস্থ্য সাথী প্রকল্পের আবেদন করতে পারবেন।
এই প্রকল্পের আওতায় রাজ্য ছাড়াও ভিনরাজ্য মিলিয়ে মোট ১৫০০টি সরকারি বা বেসরকারি হাসপাতালে বা নার্সিংহোমে চিকিৎসার জন্য ৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত বিমা পাওয়া যাবে। এই ব্যবস্থা সম্পূর্ণ ক্যাশলেস বলে জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
রাজ্যের জেলায় জেলায়, ব্লকে ব্লকে উন্নয়নের দুর্গ গড়ে বিজেপির মোকাবিলায় কোমর বেঁধে যে নামছে তৃণমূল তা স্পষ্ট। এখন দেখার প্রতিপক্ষ বিজেপির বিরুদ্ধে এই উন্নয়ন ২১ এর ভোটে তৃণমূলকে জয় এনে দেয় কিনা।