শুধু নয় ভারত, আরও ৭টি দেশের সাথে চিনের সীমান্ত বিবাদের তালিকা

Madhab Das

Updated on:

Advertisements

নিজস্ব প্রতিবেদন : লাদাখে চিনা সেনাদের বাড়বাড়ন্তেও নতুন ছকের ইঙ্গিত পাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন তিব্বত অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের প্রধান লবসাং সাঙ্গে। তিনি জানিয়েছেন, “চিনা আগ্রাসনের মুখে পড়তেই হবে ভারতকে। শি জিন পিংয়ের নেতৃত্বে চিনের কমিউনিস্ট পার্টি আসলে ভারতের উপমহাদেশীয় এলাকায় নিজের প্রভাব বিস্তার করার ছক কষছে অনেকদিন থেকেই। যেভাবে তারা তিব্বতের উপর নিজের ক্ষমতা কায়েম করেছে, সেভাবেই এবার ভারতের পাশেই থাকা নেপালের উপর ক্ষমতা কায়েম করার লক্ষ্যে তাঁরা এগোচ্ছে। আর সেই কারণেই দীর্ঘদিন ধরে ভারত ও নেপালের মধ্যে গড়ে ওঠা সুসম্পর্কে এখন চিড় ধরতে বসেছে।”

Advertisements

Advertisements

বিশ্বের দীর্ঘতম স্থল সীমান্ত প্রায় ২২,১১৭ কিমি, যেখানে ১০টি দেশের সাথে সীমান্ত ভাগ করে নিয়েছে চিন। আর বেশিরভাগ দেশের সাথেই চিনের সীমান্ত বিবাদ চোখে পড়ে। কেবলমাত্র পাকিস্তান ছাড়া। কারণ, চিন ছাড়া এই দেশটি গোটা বিশ্বের কাছে ক্যান্সারের ব্যাধির মতো। চিন যেন এই দেশকে বেতন দিয়ে পুষছে। আসুন দেখে নেওয়া যাক, চিনের সঙ্গে অন্যান্য দেশের সীমান্ত বিবাদের তালিকা। আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের রিপোর্ট অনুযায়ী এই তালিকা করা হয়েছে।

Advertisements

জাপান : সেনকাকু বা দিয়াওউ দ্বীপপুঞ্জ। এই সমস্ত জায়গাকে ১৮৯৫ সাল থেকে জাপান নিজেদের বলে দাবি করে আসছে। বিগত ১২০ বছর ধরে জাপানের অধিবাসীরা এই দ্বীপপুঞ্জগুলিতে বসবাস করে আসছে। তবে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর যখন আমেরিকা এই দ্বীপপুঞ্জ দখল করে নেয় তখন সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্য পরিস্থিতি একটু বদলে যায়। আর পরে ১৯৭০ সালে ঐতিহাসিকভাবে ওই ভূখণ্ড তাদের বলে দাবি করে চিন। আর এর পর থেকেই চিনের সাথে জাপানের বিবাদ দীর্ঘ কয়েক দশকের।

ভিয়েতনাম : ভিয়েতনামের বৃহৎ অংশকে (মিং রাজবংশ ১৩৬৮-১৬৪৪) চিন ঐতিহাসিক ভাবে নিজেদের বলে দাবি করেছে। এর পাশাপাশি ম্যাকসেলফ্লিড চর, প্যারাসেল দ্বীপপুঞ্জ ও দক্ষিণ চীন সাগর এবং স্পার্টলি দ্বীপপুঞ্জের একাংশ নিজেদের বলে দাবি জানায় চিন। ভিয়েতনামের সাথে যে কারণে চিনের বিবাদ দীর্ঘদিনের। এমনকি যুদ্ধ পর্যন্ত হয়েছে।

দক্ষিণ কোরিয়া : সীমান্ত এলাকা নিয়ে দক্ষিণ কোরিয়ার সাথে ও চীনের দীর্ঘদিনের বিবাদ। পূর্ব চীন সাগরে কিছুটা অংশ ছাড়া দক্ষিণ কোরিয়ার ঐতিহাসিক ভূখণ্ড (ইয়ান রাজবংশ ১২৭১-১৩৬৮) নিজেদের বলে দাবি করে চিন।

তাইওয়ান : চিন তাইওয়ানকেও ছাড়ে নি। তাইওয়ানেরও বেশ কিছু অংশকে চিন নিজেদের বলে দাবি জানায়। বিশেষ করে ম্যাকসেলফ্লিড চর, প্যারাসেল দ্বীপপুঞ্জ, দক্ষিণ চিন সাগর ও স্প্রেটলি দ্বীপপুঞ্জ, স্কার্বো অঞ্চল নিজেদের বলে দাবি জানিয়ে চিন।

ব্রুনেই : এখানকার বিভিন্ন অংশকে চিন নিজেদের আগ্রাসন নীতি অনুযায়ী নিজেদের এলাকা বলে দাবি করে। স্প্রেটলি দ্বীপপুঞ্জের বিভিন্ন অংশে ছড়িয়ে রয়েছে ৭৫০টির বেশি ডুবো পাহাড়। রয়েছে প্রবাল প্রাচীর ও ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র দ্বীপ। এছাড়াও রয়েছে দক্ষিণ চীন সাগরের দ্বীপপুঞ্জ। এই দ্বীপপুঞ্জ এবং চিন সাগর এখন বিশ্বের সবথেকে ব্যস্ততম সমুদ্রপথ। ব্রুনেই স্প্রেটলি দ্বীপপুঞ্জের দক্ষিণ-পূর্ব অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ অঞ্চল লুইসা রিফ নিজেদের বলে দাবি জানায় চিন। যা একসময় উত্তেজনার সৃষ্টি করেছিল।

কিরঘিজস্তান : চিন কিরঘিজস্তানের বেশিরভাগ অংশকে নিজেদের বলে দাবি করে। এর মূলে রয়েছে ১৯ শতকে ওই স্থানগুলি রাশিয়া নিজেদের তদারকিতে আনার চেষ্টা।

মঙ্গোলিয়া : চিন মঙ্গোলিয়ার সমস্ত ঐতিহাসিক ভূখণ্ডকে (ইয়ান রাজবংশ ১২৭১-১৩৬৮) নিজেদের বলে দাবি করে। তবে চেঙ্গিস খাঁ নেতৃত্বে মঙ্গোলিয়া চিন দখল করেছিল।

ভারত : চিন অবৈধভাবে জম্মু-কাশ্মীরের প্রায় ৩৮ হাজার কিমি অংশ দখল করে নেয়। এছাড়াও ১৯৬৩ সালে চিন-পাক চুক্তির সময় থাকা ৫১৮০ কিমি ভারতীয় অঞ্চল দখল করে নেয় চিন। চিন-ভারতের সীমা বিরোধের কেন্দ্রে রয়েছে ৯০০০০ বর্গকিমি অরুণাচল প্রদেশ। তাকে চিন দক্ষিণ তিব্বতের অংশ বলে মনে করে।

চিনের আগ্রাসন নীতি নিয়ে বারংবার সরব হতে দেখা গিয়েছে লাদাখের বিখ্যাত গবেষক সোনম ওয়াংচুককে। তিনি তাঁর বিভিন্ন ভিডিও বার্তায় চীন ও চীনের ইতিহাস এবং তাদের আগ্রাসন নীতির কবলে পড়ে কিভাবে একের পর এক দেশ তাদের ভূখণ্ড হারিয়েছে তা স্মরণ করিয়ে দেন। পাশাপাশি তিনি চীনকে শায়েস্তা করার জন্য তাদের ভাতে মারার জন্য ভারতীয়দের চীনা পণ্য বর্জনের ডাক দিয়েছেন। তার ডাকে ইতিমধ্যেই সাড়া দিয়েছে দেশের বিপুলসংখ্যক মানুষ। আর চিনা পণ্য বর্জনের যে ডাক সেই ডাক আরও ত্বরান্বিত হয় গত ১৫ তারিখ রাতে লাদাখের গালওয়ানে ভারত ও চীন সেনাদের সংঘাত।

Advertisements