La Nina: লা নিনা সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে আদৌ কি জানেন আপনারা? জানলে অবাক হবেন অবশ্যই। এটি হলো একটি জলবায়ু ঘটনা যা গ্রীষ্মমন্ডলীয় প্রশান্ত মহাসাগরে ঘটে। এটি এল নিনো-সাউদার্ন অসিলেশন (ENSO) নামে একটি বৃহত্তর জলবায়ু প্যাটার্নের অংশ, যা গ্রীষ্মমন্ডলীয় প্রশান্ত মহাসাগরে মহাসাগরের তাপমাত্রা এবং বায়ুমণ্ডলীয় চাপের একটি চক্রাকার পরিবর্তন।
কিভাবে কাজ করে এটি? লা নিনার (La Nina) সময়, গ্রীষ্মমন্ডলীয় প্রশান্ত মহাসাগর জুড়ে বাণিজ্য বায়ু পূর্ব থেকে পশ্চিমে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি শক্তিশালী হয়। এটি উষ্ণ পৃষ্ঠের জলকে দক্ষিণ আমেরিকার উপকূল থেকে দূরে এবং এশিয়ার দিকে ঠেলে দেয়। এই উষ্ণ জল সরে যাওয়ার সাথে সাথে গভীর সমুদ্র থেকে ঠাণ্ডা জল ভূপৃষ্ঠে উঠে আসে, একটি প্রক্রিয়া যা আপওয়েলিং নামে পরিচিত। পূর্ব প্রশান্ত মহাসাগরে পৃষ্ঠের জলের এই শীতলতাই লা নিনাকে সংজ্ঞায়িত করে।
লা নিনা (La Nina) সারা বিশ্বের আবহাওয়ার ধরণগুলিতে উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলতে পারে। দক্ষিণ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, দক্ষিণ আমেরিকার কিছু অংশ এবং পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগরে বৃষ্টিপাত বেড়েছে। অস্ট্রেলিয়া, ইন্দোনেশিয়া এবং আফ্রিকার কিছু অংশে খরা। উত্তর-পূর্ব মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং কানাডায় হালকা শীত। দক্ষিণ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে উষ্ণ এবং শুষ্ক অবস্থা। আটলান্টিক অববাহিকায় হ্যারিকেনের কার্যকলাপে পরিবর্তনের পিছনেও এর দায় রয়েছে।
লা নিনা (La Nina) সাধারণত প্রতি দুই থেকে সাত বছরে ঘটে, তবে তাদের ফ্রিকোয়েন্সি এবং তীব্রতা পরিবর্তিত হতে পারে। এগুলি কয়েক মাস বা এমনকি এক বছর বা তারও বেশি সময় ধরে চলতে পারে। কিছু গবেষণায় দেখা গেছে যে গ্লোবাল ওয়ার্মিং লা নিনা ঘটনাকে আরও ঘন ঘন বা শক্তিশালী করে তুলতে পারে। লা নিনা একটি জটিল জলবায়ু ঘটনা যা সারা বিশ্বের আবহাওয়ার ধরণগুলিতে উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলতে পারে।
আরো পড়ুন: দুর্গাপুজোয় রোদ ঝলমলে দিন নাকি ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি? জানিয়ে দিল আবহাওয়া অফিস
এমনকি ভারতে প্রভাব ফেলতে পারে লা নিনা। এবিষয়ে সতর্কবার্তা দিয়েছে ওয়ার্ল্ড মেট্রলজিক্যাল অর্গানাইজেশন। এই বছরের শীতেই দেখা যাবে লা নিনার প্রভাব। লা নিনার প্রভাবে উত্তর ভারতে পড়তে চলেছে চরম মাত্রায় শীত। লা নিনা এত সহজে সকলকে মুক্তি দেবে না বিশ্ব প্রকৃতি এমনটাই নির্দেশ করছে। লা নিনার অর্থ শিশুকন্যা। এটি এল নিনোর বিপরীত অবস্থা। বায়ু সঞ্চলনের স্বাভাবিক অবস্থান প্রশান্ত মহাসাগরে অক্ষরেখা বরাবর বায়ু পূর্ব দিকের উচ্চচাপ বলয় থেকে পশ্চিম দিকে প্রবাহিত হয়।
সমূদ্রের পৃষ্ঠের উষ্ণতা স্বাভাবিক উষ্ণতা অপেক্ষা ৪ ডিগ্রি কমে গেলে পেরু-চিলি উপকূল বরাবর যে শীতল সমুদ্রস্রোত প্রবাহিত হয় তাকে লা-নিনা বলে। লা-নিনাকে মাঝে মাঝে বলা হয় এল-ভিয়েজো ও প্রতি এল-নিনো বা সহজভাবে “এক শীতল ঘটনা”।প্রশান্ত মহাসাগরের নিরক্ষীয় অঞ্চলে প্রবাহিত দক্ষিণ-পূর্ব আয়ন বায়ু শক্তিশালী হলে সমুদ্রের পৃষ্ঠ পশ্চিম দিকে তাড়িত হয়। তখন পেরু ও ইকুয়েডর সংলগ্ন সমুদ্রের নীচ থেকে প্লাঙ্কটন মিশ্রিত শীতল জলের ঊধ্বগামী আর্বত ঘটে। এতে সমুদ্রপৃষ্ঠের জলের তাপমাত্রা অনেকটা কমে যায়। এই শীতল ঘটনা বা পর্যায়ের মাধ্যমেই লা-নিনার উৎপত্তি হয়। এই ঘটনাকে এল-নিনো দক্ষিণী দোলনের শীতল অবস্থা । লা নিনার হাত থেকে এ বছরের শীতে মুক্তি পাওয়া যাবে না।