Demise of Ratan Tata: প্রয়াত হলেন ভারতের অন্যতম উদ্যোগপতি রতন টাটা, আশ্বাস দিয়েও চলে গেলেন না ফেরার দেশে

Prosun Kanti Das

Updated on:

Advertisements

Demise of Ratan Tata: নিজেকে প্রতিযোগিতা থেকে বরাবরই দূরে রাখতে পছন্দ করতেন তিনি। বিলাসবহুল জীবনের থেকে সাদামাটা জীবনকেই তিনি বেছে নিয়েছিলেন। জীবনের ৮৬টা বছর তিনি অন্যের জন্য তথা দেশের জন্য নানারকম অবদান রেখে গেছেন। তাঁর অসুস্থতার খবর পেয়ে তাই আশঙ্কা, উদ্বেগ নিয়ে দিন কাটছিল। শেষপর্যন্ত সকলকে ছেড়ে পরলোক যাত্রা করলেন টাটার গোষ্ঠীর চেয়ারম্যান রতন টাটা। ভারতীয় শিল্পজগতের উজ্জ্বলতম নক্ষত্র রতন টাটা চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবেন ইতিহাসের পাতায়।

Advertisements

অনুরাগীরা এমনিতেই কয়েকদিন ধরে চিন্তায় ছিলেন তার শরীর নিয়ে। বয়সের ভারে তার চেহারা ন্যুব্জ হচ্ছিল এবং চিন্তা বাড়ছিল অনুরাগীদের। সম্প্রতি তিনি খুবই অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং এই খবরটি সামনে আসতেই রীতিমতো চাঞ্চল্যকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। মনের জোর তার বরাবর ছিল তাই সকলকে আশ্বস্ত করেছিলেন তিনি। বার্ধক্যজনিত কারণে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন এবং সেইজন্যই গেছিলেন রুটিন চেকআপ করাতে। সকলকে আশ্বাস দিয়ে বলেছিলেন যে উদ্বেগের কোন কারণ নেই। তবে সমস্ত আশঙ্কাকে সত্যি করেদিলেন(Demise of Ratan Tata) তিনি। মুম্বইয়ের ব্রিচ ক্যান্ডি হাসপাতালে রুটিন চেকআপের জন্যই ভর্তি হন তিনি, কিন্তু ক্রমশ অবস্থার অবনতি হয় এবং ‘সঙ্কটজনক’ অবস্থায় তাঁকে ICU-তে ভর্তি করা হয়।

Advertisements

অবশেষে TATA Group-এর সঙ্গে যোগাযোগ করলে তারা স্বীকার করেন রতন টাটার শারীরিক পরিস্থিতির ক্রমশই অবনতি ঘটতে শুরু করেছে। রতন টাটা রীতিমতো মৃত্যুর (Demise of Ratan Tata) সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন, কিন্তু শেষ পর্যন্ত বৃহস্পতিবার তাঁর মৃত্যুর খবরে সিলমোহর পড়ল। রতন টাটার জন্ম হয়েছিল ১৯৩৭ সালের ২৮ ডিসেম্বর মাসে মুম্বইয়ে পারসিক পরিবারে। তাঁর বাবার নাম ছিল নভল টাটার এবং তাঁর জন্ম হয়েছিল গুজরাতের সুরতে। পরবর্তীকালে তাঁকে টাটা পরিবার দত্তক নিয়েছিল এবং রতন টাটার মা ছিল সুনি টাটা যিনি সরাসরিভাবে জামশেদজি টাটার পরিবারের অংশ। রতন টাটার পিতামহ হরমসজি টাটা জন্মসূত্রেই ওই পরিবারের সদস্য। যখন তাঁর ১০ বছর বয়স, তাঁর মা-বাবা আলাদা হয়ে যান। তাঁর নিজের ভাইয়ের নাম জিমি টাটা এবং সৎভাই হলো নোয়েল টাটা। নভল টাটা দ্বিতীয় বার বিয়ে করেন সিমোন টাটাকে। নোয়েল তাঁদেরই সন্তান।

Advertisements

রতন টাটার স্কুলজীবন প্রথমে কেটেছে মুম্বই এবং শিমলাতে। তবে পরবর্তীকালে নিউ ইয়র্কের রিভারডেল কান্ট্রি স্কুলে পড়তে যান তিনি। পরবর্তীকালে তিনি ১৯৫৯ সালে স্থাপত্য নিয়ে স্নাতকস্তরে ভর্তি হন কর্নেল ইউনিভার্সিটিতে। প্রথমে TATA Group-এ ম্যানেজার পদের দায়িত্ব পান রতন টাটা। ১৯৯১ সালে জেআরডি টাটা TATA Sons-এর দায়িত্ব ছাড়লে রতন টাটাকে নিজের উত্তরাধিকারী ঘোষণা করেন। রতন টাটার হাতে TATA Group-এর দায়িত্ব আসে মাত্র ২১ বছর বয়েসে। কোম্পানির অগ্রগতির পেছনে তাঁর অবদান অনস্বীকার্য। মধ্যবিত্তকে প্রথম চারচাকার স্বপ্ন তিনি দেখিয়েছিলেন।

আরো পড়ুন: একদিকে শিল্পজগতে নক্ষত্র পতন, অন্যদিকে পিতৃহারা হলো ‘গোয়া’-‘স্প্রাইট’রা

২০১২ সালে ৭৫ বছর বয়েসে TATA Group-এর এগজিকিউটিভ ক্ষমতা ছেড়ে দেন তিনি। আত্মীয় সাইরাস মিস্ত্রিকে দায়িত্ব দিলেও ২০১৬ সালে সাইরাসকে Tata Sons-এর চেয়ারম্যান পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। ফের অন্তর্বর্তীকালীন দায়িত্বে ফেরেন রতন টাটা। এর পর, ২০১৭ সালে নটরাজন চন্দ্রশেখরণকে TATA Sons-এর অন্তর্বর্তীকালীন চেয়ারম্যান ঘোষণা করা হয়। জীবনের শেষের দিকে তিনি নিজেকে সমাজ সেবামূলক কাজেই বেশি জড়িয়ে রাখতেন।

রতন টাটা ২০০০ সালে ‘পদ্মভূষণ’ সম্মান লাভ করেন এবং ২০০৮ সালে পান ‘পদ্মবিভূষণ সম্মান’। এছাড়াও তিনি মহারাষ্ট্র, অসম সরকার থেকে সম্মান লাভ করেন। ইউনিভার্সিটি অফ কেমব্রিজ, লন্ডন স্কুল অফ ইকনমিক্স, আইআইটি বম্বে, ইয়েল ইউনিভার্সিটি, রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ, রাজা তৃতীয় চার্লসের থেকেও বিশেষ ভাবে সম্মানিত হন। অবিবাহিত হিসাবে তিনি জীবন কাটিয়ে দেন। নিজের জীবনের প্রেম সম্পর্কে তিনি স্বীকার করে নেন একটি সংবাদমাধ্যমের ইন্টারভিউতে। বিয়ের পিঁড়িতে বসার উপক্রম হয়েছিল চারবার কিন্তু কোনবার সফল হয়নি। কিন্তু দেশের কোটি কোটি মানুষের ভালবাসা, আশীর্বাদ ছিল তাঁর প্রধান সম্পদ। তাঁর মৃত্যুতে (Demise of Ratan Tata) শুধু ভারতে নয়, গোটা বিশ্বে নেমে এসেছে শোকের ছায়া।

Advertisements