Burimar Chocolate: কালীপুজোর সময় বুড়ীমার বাজি নিয়ে কথা উঠলেই সবার মনে এক অদ্ভুত আনন্দ আর উত্তেজনা তৈরি হয়। তবে, বুড়ীমা কে? তাঁর নামের পেছনে রয়েছে একটি হৃদয় বিদারক গল্প, যা কালীপুজোর আনন্দকে করেছে আরও চমকপ্রদ। আসুন, জানি কিভাবে এই অসাধারন নারী এক নতুন অধ্যায় রচনা করলেন বাজির জগতে, যে গল্পটি আজও আমাদের মনকে স্পর্শ করে।
অন্নপূর্ণা দাস, যিনি সর্বাধিক পরিচিত বুড়ীমা নামে, ১৯৪৮ সালে বাজির ব্যবসা শুরু করেন। তাঁর জীবন ছিল এক কঠিন পরীক্ষার মাঠ। দেশভাগের পর তিনি এক অমানবিক পরিস্থিতির সম্মুখীন হন। তাঁর স্বামী এক অদম্য রোগে মারা যাওয়ার পর দুই ছেলেকে নিয়ে সংসার চালানো ছিল তাঁর কাছে একটি দুরূহ কাজ। প্রথমে তিনি বিড়ির ব্যবসা শুরু করেন, তারপর সেলাইয়ের কাজ — কিন্তু কোন কিছুতেই সফলতা পাননি। তখন শেষবারের মতো, কালীপুজোর আগে তিনি বাজির দোকান দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন, এবং এটাই (Burimar Chocolate) ছিল তাঁর জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দেওয়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত।
বুড়ীমা তখন গোল গোল ছোট বাজি তৈরি করেন, যেগুলিকে তিনি ‘চকোলেট বোমা’ নাম দেন। এই নতুন নামটি বাজারে এক বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনে। সামান্য কয়েক মাসের মধ্যে, বুড়ীমার চকোলেট বোমা হয়ে ওঠে জনসাধারণের প্রিয়। এটি ছিল কালীপুজোর অপরিহার্য একটি অংশ, এবং তাঁর সাফল্যের ফলে তিনি হাওড়ার পিয়ারিমোহন মুখার্জি স্ট্রিটে একটি বাড়ি তৈরি করেন, যেখানে আজও তাঁর কাজের স্মৃতি জীবিত রয়েছে।
আরো পড়ুন: বন্ধ হতে চলেছে জিও সিনেমা, মুকেশ অম্বানীর দারুণ চমক, Disney+ Hotstar-এর সঙ্গে বিশাল চুক্তি
কিন্তু ১৯৯৬ সালে দেশে শব্দবাজি নিষিদ্ধ হলে বুড়ীমা ফায়ারওয়ার্কস্ এবং চকোলেট বোমা তৈরি বন্ধ করেন। তবে এই নিষেধাজ্ঞা তাঁর ব্যবসাকে স্তব্ধ করেনি। বরং, তিনি আতশবাজির নতুন ধরন তৈরি করতে শুরু করেন, যা দ্রুত জনপ্রিয়তা পায়। ১৯৯৫ সালে অন্নপূর্ণা দাস প্রয়াত হন, কিন্তু তাঁর পরিবারের সদস্যরা ব্যবসাটি ধরে রেখেছেন এবং আজও বুড়ীমার নাম মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে, যার ফলে তাঁর কাজের অবদান সারা দেশে প্রশংসিত হচ্ছে।
আজও বুড়ীমার বাজির (Burimar Chocolate) খ্যাতি সারা দেশে অটুট। কালীপুজোর রাতে, বেলুড়ে বহু মানুষ এসে তাঁর আতসবাজি কেনেন, আর সেখানে শুরু হয় এক নতুন কাহিনি। বুড়ীমার বাজি মানেই একটি ঐতিহ্য, যা কালীপুজোর আকাশে রঙিন আলো ছড়িয়ে দেয়। এভাবে, তাঁর জীবনের গল্প আমাদের শিখিয়ে দেয় যে, সংকটের সময়েও আশা হারানো উচিত নয়। এই গল্পটি শুধু একটি নারীর সংগ্রামের কাহিনি নয়, বরং এক নতুন ইতিহাসের জন্মদাত্রী, যিনি স্বপ্ন ও সাধনার মাধ্যমে অন্ধকারকে আলোকিত করেছেন।