Niti Aayog: যদি আর্থিক স্বাস্থ্যের মাপকাঠি অনুযায়ী তালিকা তৈরি করা হয় তাহলে শেষের দিকে থাকবে পশ্চিমবঙ্গের নাম। এমনটাই জানিয়ে দিয়েছে নীতি আয়োগ।নীতি আয়োগের মত অনুসারে, ইতিমধ্যেই রাজ্যের পরিকাঠামো তৈরি-সহ মূলধনী খাতে খরচে অগ্রাধিকার দিতে হবে। শুধু তাই নয় বাড়াতে হবে রাজস্ব। কর বাবদ আয় এবং কর ছাড়া অন্যান্য আয়— দুই ক্ষেত্রেই। শীঘ্রই প্রয়োজন কঠোর আর্থিক শৃঙ্খলা, তাহলে হয়তো আর্থিক পরিস্থিতি কিছুটা সামাল দেওয়া যেতে পারে।
দেশের বড় বড় রাজ্যগুলোর অর্থনৈতিক পরিস্থিতি ২০২২-২৩ এ কি রকম ছিল তা নিয়ে নীতি আয়োগ (Niti Aayog)‘রাজকোষের স্বাস্থ্য সূচক’ প্রকাশ করা হয়েছে। রাজকোষের স্বাস্থ্যের মাপকাঠিতে মোট ১৮টি রাজ্যকে চারটি শ্রেণিতে ভাগ করা হয়েছে। তালিকার প্রথম শ্রেণীতে রয়েছে ওড়িশা, ছত্তীসগঢ়, গোয়া, ঝাড়খণ্ড ও গুজরাত। চতুর্থ কিংবা বলা যেতে পারে শেষের দিকের তালিকায় রয়েছে পশ্চিমবঙ্গ, কেরল, অন্ধ্রপ্রদেশ, পঞ্জাব।
নীতি আয়োগ (Niti Aayog) যে রিপোর্ট পেশ করেছে তা অনুযায়ী, এই শেষ সারির রাজ্যগুলি রীতিমতো হিমশিম খাচ্ছে রাজকোষ ঘাটতি ও রাজস্ব ঘাটতির লক্ষ্যমাত্রা ছুঁতে। রাজ্যের নিজস্ব আয় খুবই কম এবং পাশাপাশি বেড়েই চলেছে দেনার বোঝা। কিভাবে সেই দেনা শোধ করা হবে তার সবথেকে বড় চিন্তার বিষয়। তুলনায় সামনের সারিতে থাকা রাজ্যগুলি পরিকাঠামো তৈরিতে রাজ্যের জিডিপি-র প্রায় ৪% খরচ করছে। শুধুমাত্র কর ছাড়া অন্যান্য উৎস থেকে আয় বেড়ে চলেছে। এমনকি উদ্বৃত্ব রাজস্ব থাকছে। রাজস্ব আয়ের সামান্য অংশ ঋণের সুদ মেটাতে খরচ হচ্ছে তাদের।
পশ্চিমবঙ্গের চিত্র কেমন নিশ্চয়ই জানতে ইচ্ছা করছে? নীতি আয়োগের (Niti Aayog) রিপোর্ট বলছে, রাজ্যের মোট খরচের মধ্যে পরিকাঠামো তৈরিতে খরচের হার ২০২২-২৩-এ ৩%-এ নেমে এসেছে। যা জাতীয় গড়ের থেকে কম। ২০১৮-১৯-এও ৫%-এর বেশি ব্যয় হত। বর্তমানে মূলধনী খাতেও খরচ কমে গেছে। বরং বেড়ে গেছে সামাজিক খাতে ব্যয়। কিন্তু তা-ও জাতীয় গড়ের থেকে কম।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশ সীমান্ত নিয়ে বিস্ফোরক মন্তব্য করলেন মুখ্যমন্ত্রী, আঙুল কি বিএসএফের দিকে?
রাজ্যের আয়ের মূল উৎস হলো জিএসটি-তে রাজ্যের ভাগ। পাঁচ বছর ধরে তা বৃদ্ধি পাচ্ছে। তবে কর বাদ দিয়ে অন্যান্য খাত থেকে রাজ্যে যে আয় হত তা কমে যাচ্ছে পাঁচ বছর ধরে। বর্তমানে রাজ্য অনুদানের ওপর বেশি নির্ভরশীল হয়ে পড়ছে। আর্থিক শৃঙ্খলার ক্ষেত্রেও রাজস্ব ঘাটতি ওঠানামা করছে। রাজকোষ ঘাটতি সামান্য কমলেও তা ৩%-এর উপরে। রাজ্যের জিডিপি-র তুলনায় দেনার হার ২০১০-১১-এ ছিল ৪০.৭%। তা ২০১৮-১৯-এ কমে ৩৫.৭% হলেও ২০২০-২১-এ তা বেড়ে ৪২.৬%-এ চলে গিয়েছিল। ২০২২-২৩-এ তা কিছুটা কমে ৩৮.২%-এ নেমে এসেছে। তবে রাজ্যের রাজস্ব আয়ের ২০%-এর বেশি অর্থ ঋণ মেটাতেই চলে যাচ্ছে। নীতি আয়োগ এর বক্তব্য অনুসারে, পশ্চিমবঙ্গে উন্নয়নের জন্য খরচে টান পড়ছে।
নীতি আয়োগের(Niti Aayog)রিপোর্ট প্রকাশ করার পর ষোড়শ অর্থ কমিশনের চেয়ারম্যান অরবিন্দ পানাগাড়িয়া বলেন, যেসব রাজ্যগুলোর অর্থনৈতিক পরিস্থিতি খারাপের দিকে তাদের সঙ্গে বিশেষ আলোচনার প্রয়োজন। এই ষোড়শ অর্থ কমিশনই সিদ্ধান্ত নেবে ২০২৬ সালের ১ এপ্রিল থেকে পরবর্তী পাঁচ বছরের জন্য কেন্দ্রের কর বাবদ আয়ের কতখানি অংশ রাজ্যগুলির মধ্যে ভাগ করে দেওয়া হবে। সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে যে, কেন্দ্রের কর বাবদ আয়ের ৪১% রাজ্যগুলির মধ্যে বিলি করা হবে। রাজ্য সরকার অবশ্য দাবি করেছে যে, কেন্দ্রীয় করের ৫০ শতাংশ রাজ্যগুলোর মধ্যে ভাগ করা হোক। অবশ্য এই ব্যাপারে নীতি আয়োগের কর্তাদের মত অন্যরকম, আর্থিক অনুদান দেওয়ার পরিবর্তে যদি রাজ্যগুলোকে সঠিক পথ দেখানো হয় তাহলে এই সমস্যার সমাধান সম্ভব। অনুদান না দিয়ে যদি পরিকাঠামোকে উন্নত করা হয় তাহলে এইরকম পরিস্থিতির আর সামনাসামনি হতে হবে না। রাজ্যগুলোর উচিত আর্থিক শৃঙ্খলা মেনে আয় বুঝে ব্যয় করা।