Donald Trump On Gaza: ডোনাল্ড ট্রাম্প দ্বিতীয়বারের জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষমতায় এসে নিল কিছু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত। ডোনাল্ড ট্রাম্পের মুখে শোনা গেল গাজা দখলের কথা। কেন এই সিদ্ধান্ত নিলেন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প? তিনি ঘোষণা করেছেন যে, প্যালেস্তিনীয়দের অন্যত্র সরিয়ে গাজাকে ‘পশ্চিম এশিয়ার তটভূমি’তে পরিণত করবেন। আমেরিকা যুদ্ধ পরিস্থিতিতে বরাবর সমর্থন করে এসেছে ইজরায়েলকে, তবুও ইজরায়েল-প্যালেস্তাইন, দুই পৃথক দেশের তত্ত্বকেই সমর্থন করছে।
যদিও কূটনীতিকরা মনে করছেন যে, ট্রাম্প গাজা (Donald Trump On Gaza)নিয়ে যে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তা আমেরিকার বিদেশনীতির পরিপন্থী হবে। সেই কারণেই তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েছেন ট্রাম্প। এছাড়া ডোনাল্ড ট্রাম্প ইজরায়েল-প্যালেস্তাইনের মধ্যে সমঝোতা গড়ে তোলার জন্য সাহায্য প্রার্থী হয়েছিলেন সৌদি আরবের। তারাও তীব্র সমালোচনা করেছে। সৌদি আরবের বিদেশ মন্ত্রক স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে যে, প্যালেস্তিনীয়দের অধিকারচ্যুত করা, তাঁদের উচ্ছেদ করার চেষ্টা কোনরকম ভাবে বরদাস্ত করা হবে না।
ইজরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে ডোনাল্ড ট্রাম্প হোয়াইট হাউজে যৌথ সাংবাদিক বৈঠক করেন। সেখানে তিনি বলেছেন, আমেরিকা গাজা অধিগ্রহণ (Donald Trump On Gaza) করে সেখানে কাজ করবে। এই সিদ্ধান্ত মোটেই কোন হালকা সিদ্ধান্ত নয়। সকলের সঙ্গে আলোচনা করেই এই সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া গেছে। ট্রাম্প জানিয়েছেন, গাজায় ধ্বংসপ্রাপ্ত বাড়িঘর সরিয়ে ফেলা হবে। পাশাপাশি সরিয়ে দেওয়া হবে সমস্ত বোমা, বিস্ফোরক, অস্ত্রশস্ত্র। জনগণের সুবিধার্থে আবারো আবাসন গড়ে তোলা হবে এবং কর্মসংস্থানের সুযোগ করা হবে। গাজার অর্থনৈতিক উন্নয়নের চেষ্টা করা হবে, সর্বোপরি বলা চলে জায়গাটিকে সাধারণ মানুষের বাসযোগ্য করে তোলা হবে। ট্রাম্পের কথায় সেদিন যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজাকে নতুন করে সাজানোর কথা উঠে আসলেও, ঘরছাড়া প্যালেস্তিনীয়দের সেখানে পুনর্বাসন দেওয়ার কথা শোনা যায়নি। বরং ‘মানবিকতার খাতিরে’ মিশর এবং জর্ডানের মতো দেশে ঘরছাড়া প্যালেস্তিনীয়দের চলে যাওয়ার পক্ষে আবারও সওয়াল করেছেন ট্রাম্প।
ট্রাম্পের বক্তব্য, খুব সহজেই গাজাকে একটি আন্তর্জাতিক প্ল্যাটফর্ম হিসেবে গড়ে তোলা যাবে। এখানে পরিবর্তন করা সম্ভব এবং পৃথিবীর সব দেশের প্রতিনিধিরা সেখানে গিয়ে থাকতে পারেন। সেখানে প্যালেস্তিনীয়রাও বাস করতে পারেন এবং পাশাপাশি বহু মানুষ বাস করতে পারেন। গাজায় আমেরিকা সেনা নামানোর বিষয়ে ট্রাম্প মন্তব্য করেন যে, গাজার জন্য যেটুকু প্রয়োজনীয়তা করা হবে, এমনকি সেনা মোতায়ন করা হতে পারে। ট্রাম্পের এই মন্তব্য সমর্থন করেছেন নেতানিয়াহুও। ইজরায়েলের ভালো বন্ধু হল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং সেই কারণে ট্রাম্পের পরিকল্পনা গুরুত্ব দিয়ে দেখা উচিত। ইতিহাস বদলানো এভাবেই সম্ভব। ট্রাম্পের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা অন্য রকম। এতে সন্ত্রাসে জর্জরিত গাজার ভবিষ্যৎও পাল্টে যাবে বলে মত নেতানিয়াহুর।
কিন্তু এই মন্তব্যের তীব্র সমালোচনা করেছে সাধারণ প্যালেস্তিনীয় নাগরিক, হামাস এবং প্যালেস্তাইন-সমর্থকরা। সৌদি আরবও ট্রাম্পের সমালোচনায় সরব হয়েছে। হামাস নেতা সামি আবু জুহরি জানিয়েছেন, ট্রাম্পের এই হাস্যকর মন্তব্যের (Donald Trump On Gaza) জন্য পশ্চিমে অশান্তিকর পরিবেশ সৃষ্টি হতে পারে। আমাদের বক্তব্য ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্তে আবার নতুন করে উত্তেজনা সৃষ্টি হবে। ট্রাম্পের এই মন্তব্যে ইজরায়েল এবং হামাসের মধ্যে যে সমঝোতা প্রক্রিয়া চলছে, তাতেও বাধা সৃষ্টি করতে পারে বলে মত কূটনীতিকদেরও।
আরও পড়ুন: ২০৫ জন ভারতীয়কে পাঠানো হলো অমৃতসরে, কেন এমন করল আমেরিকা?
রাজনৈতিক বিশ্লেষক তথা মানবাধিকার কর্মী ওমর বদর বলেন, ট্রাম্পের এই নীতি কার্যকর নাও হতে পারে। আমেরিকার মূল উদ্দেশ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে ঘরছাড়া প্যালেস্তিনীয়দের অন্য দেশে ফেলে দেওয়া, অনির্দিষ্টকালের জন্য প্যালেস্তাইনের উপর দখলদারি কায়েম করা। আমেরিকান-আরব অ্যান্টি-ডিসক্রিমিনেশন কমিটির এগজিকিউটিভ ডিরেক্টর আবেদ আয়ুবের বক্তব্য, ট্রাম্পের এই মন্তব্যকে মেনে নেওয়া যায় না। ওঁর পরিকল্পনা (Donald Trump On Gaza) আন্তর্জাতিক আইনের পরিপন্থী। তিনি কোনভাবেই আন্তর্জাতিক আইন মানছেন না।
আটল্যান্টিক কাউন্সিলের সদস্য, প্যালেস্তিনীয়-আমেরিকান আহমেদ ফুয়াদ আলখাতিব বলেন, গাজা কোন রিয়েল এস্টেট প্রজেক্ট নয় যে যখন ইচ্ছে তাকে দখল করা যায়। গাজা হলো প্যালেস্তিনীয় নাগরিকদের মাতৃভূমি। প্রকাশ্যে একটি জাতিকে নির্মূল করার ডাক দিচ্ছেন ট্রাম্প। গণহত্যাকারী, যুদ্ধাপরাধীর পাশে দাঁড়িয়ে এসব বলছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। আসল সমস্যা থেকে নজর ঘোরাতেই ট্রাম্প এসব বলছেন, এভাবে গাজা দখল করা যাবে না বলে দাবি ডেমোক্র্যাটিক সেনেটর ক্রিস মার্ফির।
এছাড়াও সমালোচনার ঝড় উঠেছে ঘরছাড়া প্যালেস্তিনীয় মিশর এবং জর্ডানে থিতু হবার পরামর্শ দেওয়াতে। আরব দেশগুলি ইতিমধ্যেই সেই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে। সৌদি আরব সাফ জানিয়ে দিয়েছে, প্যালেস্তিনীয়দের উৎখাত করা যাবে না। পৃথক প্যালেস্তাইন রাষ্ট্র ব্যাতীত ইজরায়েলের সঙ্গে কোনও রকম সম্পর্কে অনাগ্রহী তারা। গোটা আরো দুনিয়ার কাছেই নিজের মাটি থেকে উৎখাত হওয়ার ব্যাপারটি অত্যন্ত সংবেদনশীল। ট্রাম্পের এই প্রস্তাব খারিজ করে দিয়েছে সৌদি আরব। তাদের এই অবস্থান পশ্চিম এশিয়ার ভূরাজনীতির জন্য অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। এতদিন ইজরায়েল এবং প্যালেস্তাইন, দুটি পৃথক রাষ্ট্রেই অনুমোদন ছিল আমেরিকা এবং রাষ্ট্রপুঞ্জের। ওয়েস্টব্যাঙ্ক, পূর্ব জেরুসালেম, গাজা এবং ১৯৬৭ সালের যুদ্ধে ইজরায়েল যে যে এলাকা জবরদখল করেছিল, সম্প্রতি প্যালেস্তিনীয়রা নিজস্ব পৃথক রাষ্ট্র চান।