মাকুরের ঠকাঠক শব্দে তাঁতিপাড়া আঁকড়ে ধরে রেখেছে তাঁত শিল্প

লাল্টু : বীরভূমের রাজনগর ব্লকের তাঁতিপাড়া গ্রাম, গ্রামের ঢুকলেই কানে আসবে মাকুরের ঠকাঠক শব্দ, সকাল থেকেই গ্রামের বেশিরভাগ পরিবার ও তাদের লোকজন লেগে পড়ে তাঁতের কাজে। গ্রামের বেশিরভাগ বাসিন্দাদের মূল জীবিকা তাঁত শিল্প। হাতে গোনা কয়েকজন বেছে নিয়েছেন অন্য জীবিকা। আর সে কারণেই এত সংখ্যক তাঁতির বাস নিয়ে গড়ে ওঠা এই গ্রামের নাম তাঁতিপাড়া।

তাঁত শিল্পের সাথে যুক্ত রয়েছেন এমন পরিবারের সংখ্যা বীরভূমে প্রায় ৫০০০০। তবে তার মধ্যে প্রায় ১ হাজার তাঁত শিল্পীর বাস বীরভূমের রাজনগর ব্লকের এই গ্রামে, জেলার বুকে যা রেকর্ড। সর্বসাকুল্যে এই গ্রামে দেড় হাজার পরিবারের বাস। আর এই দেড় হাজার পরিবারের মধ্যে ১ হাজার পরিবারের মূল জীবিকা তাঁত।

তাঁতিপাড়ার তাঁত শিল্পীদের সারা বছর কাজের মন্দা থাকলেও পুজোর আগে ফুরসৎ মিলে না এদের। এই সকল পরিবারদের সদস্যরা এই সময় কেউবা তসরের গুঁটি থেকে সুতো বের করতে ব্যস্ত, কেউবা লাটাইয়ে গুঁটোয় সুতো, আবার কেউ বুনে তাঁত।

আর এই তাঁত শিল্পের বর্তমানে হস্তচালিত তাঁতের পাশাপাশি ঠাঁই পেয়েছে যন্ত্রচালিত তাঁতও। তবে হস্তচালিত তাঁত এই তৈরি হয় রেশমের শাড়ি, তসর ও ধুতি। এইসব শাড়ির মূল উপাদান হলো রেশম, তসর, গুঁটি সুতো, জরি। আর এই সকল উপাদান বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই মহাজনরা সরবরাহ করে থাকেন তাঁত শিল্পীদের। শিল্পীদের লাভের গুড় খেয়ে নেয় মধ্যস্থকারীরাই। এমন কথায় শোনা গেল তাঁত শিল্পী রবীন্দ্রনাথ দত্তের মুখ থেকে।

রেশম ও তসর গুটি উৎপাদনের জন্য বীরভূমের দুবরাজপুর ব্লকের পন্ডিতপুর, বোলপুরের মুলুক, শ্রীনিকেতনের মত আটটি জায়গায় তৈরি করা হয়েছে সরকারি খামার। এই সকল জায়গাগুলিতে যেমন তসর গুটি তৈরি করা হয়, পাশাপাশি শিল্পীদের দেওয়া হয় প্রশিক্ষণও। এখন আবার তাঁতে বোনা কাপড়ে রং তুলির কাজে আরও বেশি বাড়ানো হয়েছে চাহিদা।

তাঁত শিল্পী অনুপ দাস জানান, “তাঁতি পাড়ার হাতে বোনা কাপড়ের চাহিদা দেশে ও বিদেশে ব্যাপক, সুনামও যথেষ্ট।”

কিন্তু এই তাঁত শিল্প দীর্ঘদিন ধরে সরকারি পদক্ষেপ ছাড়া ধুঁকতে বসেছে। যদিও এখন অনেকেই বিনামূল্যে যন্ত্র চালিত তাঁত যন্ত্র পেয়েছেন, তবুও হস্তচালিত তাঁত শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখতে দ্রুত সরকারি পদক্ষেপের প্রয়োজন।