নিজস্ব প্রতিবেদন : রয়েছে একটা স্কুটি, সেই স্কুটির পিছনে বাঁধা একটি পুরাতন বই ভর্তি বাক্স। বাক্সের উপর লেখা রয়েছে মোবাইল নাম্বার, কেউ যদি পুরাতন বই দান করতে চান তাহলে তিনি ওই স্কুটি নিয়ে ছুটে যান তার বাড়িতে। লক্ষ্য একটাই কয়েকশো দুঃস্থ পড়ুয়াদের যেন পড়াশোনা বইয়ের অভাবে আটকে না যায়। গত দুই বছর ধরে এই ভাবেই পুরাতন বই সংগ্রহ করে কয়েকশো দুঃস্থ পড়ুয়াকে স্কুলছুট থেকে রক্ষা করেছেন। দুস্থ ও মেধাবী স্কুল-কলেজ পড়ুয়াদের পাশে নিয়মিত দাঁড়িয়ে তাদের উৎসাহিত করেছেন। মাত্র ২৮ বছর বয়সী সন্দীপ কুমার নামে এই যুবক এই সকল কাজের জন্য তৈরি করেছেন ‘ওপেন আইজ ফাইন্ডেশন’ নামে একটি সংস্থা।
হরিয়ানার ভিওয়ানি জেলার অন্তর্গত ধানিমৌ গ্রামে সন্দীপ কুমার জন্মগ্রহণ করার পর গ্রামের স্কুলে দ্বাদশ শ্রেণী পর্যন্ত পড়াশোনা করে চলে যান চণ্ডীগড়ে। সেখানে স্নাতক হওয়ার পর শিক্ষকতাকে পেশা হিসাবে বেছে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন তিনি। শুরু করেন জুনিয়র বেসিক ট্রেনিং, সেই ট্রেনিং-এর সুবাদে বিভিন্ন সরকারি এবং বেসরকারি স্কুলে শিক্ষকতা করানোর সুযোগ পান তিনি। জুনিয়র বেসিক ট্রেনিং এর ফাইনাল বর্ষে বিভিন্ন সরকারি স্কুলে পড়াশোনা করানোর সময় শিক্ষা নিয়ে সাধারণ দুঃস্থ পড়ুয়াদের অবস্থা তাকে ভীষণভাবে নাড়া দেয়। তিনি দেখেন, এই সকল পড়ুয়াদের শেখার অদম্য ইচ্ছা রয়েছে অথচ যখন কোন কিছু লিখতে বলা হয় তখন ওই সকল শিক্ষানবিশরা শিক্ষকের দিকে তাকিয়ে থাকে। কারণ সন্দীপ কুমার সেদিনের সেই বাস্তব দেখতে পান। দেখতে পান বেশিরভাগ দরিদ্র ছাত্রের কাছে হয় পেন অথবা খাতা নেই, কারোর কারোর কাছে আবার পাঠ্যবই টুকুও নেই। বহু সরকারি স্কুলে বই খাতা কেনার টাকা দেওয়া হলেও অভাবের তাড়নায় তাদের অভিভাবকরা সেগুলো খরচ করে ফেলেন।
Chandigarh:Sandeep Kumar goes door-to-door to collect books for poor children.He has collected around 10000 books till now;says,“Today 200 children are benefiting from this initiative.For taking books,one fills up form assuring that after fulfilling his purpose,he’ll return them” pic.twitter.com/YdW12nq8Tm
— ANI (@ANI) August 17, 2019
এরপর সন্দীপ কুমার নিজের সঞ্চয় থেকে বেশকিছু ছাত্রছাত্রীকে বই খাতা পেন্সিল কিনে দিতে শুরু করেন। আর এই কথা ছড়িয়ে পড়তেই প্রচুর ছাত্র-ছাত্রী ওই শিক্ষকের কাছে বই খাতার আবদার করতে শুরু করে। খরচ যোগাতে জোগাতে অবশেষে তাঁর মাথাতে পুরাতন বই জোগাড় করার ভাবনা আসে। আর ভাবনা থেকে নেমে পড়েন সেই কাজে।
বেশিরভাগ পড়ুয়া এক ক্লাস থেকে অন্য ক্লাসে উঠার সময় আগের ক্লাসের বই তারা বিক্রি করে দেয় অথবা বাড়িতে বাক্সবন্দি করে রেখে দেয়। সেই সকল পুরাতন পাঠ্য বই, আগের ক্লাসে বেঁচে যাওয়া খাতার অংশ, জ্যামিতি বক্স, পুরাতন পেন এসব বাড়ি বাড়ি গিয়ে তিনি সংগ্রহ করে দুঃস্থ দরিদ্র ছাত্রছাত্রীদের হাতে তুলে দিতে শুরু করেন। এভাবেই চণ্ডীগড়ের বিস্তীর্ণ এলাকায় পরিচিতি বারে তাঁর, এলাকার বিভিন্ন বাড়ি থেকে তার নাম্বারে ফোন আসে পুরাতন বই, খাতা, পেন সংগ্রহ করার জন্য। আর ফোন এলেই তিনি স্কুটি নিয়ে ছুটে যান নির্দিষ্ট ঠিকানায়।
সন্দীপ কুমারের এই উদ্যোগে বর্তমানে আপ্লুত হয়ে অন্যান্য অনেক যুবক তাঁর পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন। সকলের প্রচেষ্টায় তৈরি হয়েছে ওপেন আইজ ফাউন্ডেশন নামে একটি সংস্থা। বর্তমানে প্রায় ২০০ জন চন্ডিগড় এলাকায় পুরাতন বই-খাতা জোগাড় করার কাজে নিযুক্ত হয়েছেন। সংস্থার নিজস্ব অফিস রয়েছে, যেখানে গিয়েও পুরাতন বই দেওয়া যেতে পারে। এইভাবে গত ২ বছরে প্রায় ১০০০০ বই বিলি করে ফেলেছেন তিনি এবং তাঁরা। দুঃস্থ দরিদ্র পড়ুয়াদের কাছে সন্দীপ কুমার হয়ে উঠেছেন প্রাণের ‘মাস্টারজি’।