হিমাদ্রি মণ্ডল : জন্ম থেকেই শরীরের গুরুত্বপূর্ণ দুটি অঙ্গ দুই হাত নেই, হাত আর পা দুটোর কাজই সামাল দেয় পা। আর্থিক অনটন সেটাও ছোট থেকে তাকে তিলে তিলে টের দিয়েছে। আর এসব সবকিছুকে পরাস্ত করে নিজের পায়ের উপর ভর করেই পাস করেছে মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিক, কলেজের শিক্ষা। ভাবতে অবাক লাগছে না! এমনই মিরাক্কেল এই ‘জগন্নাথ’। এখন রোজগারের তাগিদে প্রাইভেট টিউশনকে অবলম্বন করেছে। আর এর পরেও তার শারীরিক প্রতিবন্ধকতা, আর্থিক অনটন তাকে থামিয়ে রাখতে পারেনি দেশের দুর্দিনে। লকডাউনের মাঝেই সে ছুটে চলেছে দুঃস্থ মানুষদের সহযোগিতার জন্য। পৌঁছে দিচ্ছে প্যাকেট বন্দি খাবার।
মানুষের পাশে দাঁড়াতে যে লাগে শুধুই মানসিকতা, প্রতিবন্ধকতা কোনদিনই বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে না সেই নজির গড়লো বীরভূমের সিউড়ির জগন্নাথ মাহারা। বীরভূমের সিউড়ির হাটজানবাজারের দরিদ্র পরিবারের সন্তান জগন্নাথ। ছোট থেকে দুটি হাত না থাকায় গুরুজনেরা নাম রাখেন ‘জগন্নাথ’। চরম দারিদ্রতা ও প্রতিবন্ধকতাকে জয় করেই তার বড় হয়ে ওঠা।
করোনা ভাইরাসের কারণে দেশজুড়ে জারি হয়েছে লকডাউন। এমত অবস্থায় রাস্তার পাশে না খেয়ে অনাহারে দিন কাটাচ্ছে বহু মানুষ। তাদেরকে দেখে নিজে ঠিক থাকতে পারেনি সে। টিউশন পড়িয়ে যেটুকু উপার্জন হয় সেই সমস্ত টাকা দিয়ে তাদের পাশে দাঁড়াচ্ছে। নিয়ম করে প্রত্যেকদিন খাবার খাওয়াচ্ছে তাদের। আর তার এই মানসিকতাকে দেখে পাশে দাঁড়িয়েছে তার বন্ধু-বান্ধবী ও কিছু স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। তার এই কাজের সাথে হাতে হাত মিলিয়ে তারাও এখন সাধারণ দুঃস্থ মানুষদের খাবার পরিবেশন করছেন প্রত্যেকদিন।
জগন্নাথ জানান, ছোট থেকেই চরম দারিদ্রতার মধ্যে মানুষ হয়েছি। আমার দুটি হাত নেই জন্ম থেকেই। টিউশন পরিয়ে যেটুকু রোজগার হয় সেই টাকা দিয়ে রাস্তার পাশে শুয়ে থাকা দুঃস্থ মানুষদের খাবারের ব্যবস্থা করছিলাম। কিন্তু মাঝ পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায় আমার আর্থিক দুরাবস্থা। তখন আমার বন্ধু বান্ধবীরা আমার সঙ্গ দেয়, তারাও নিজেরা কিছু কিছু করে টাকা দিয়ে আমার হাতে তুলে দেয়। একসাথে সবাই মিলে খাবার দিচ্ছিলাম। এরপর কিছু স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাও আমার পাশে এসে দাঁড়িয়েছে তাদের সকলকে ধন্যবাদ।
আর দেশের দুর্দিনে যখন অজস্র মানুষ অসহায় ভাবে দিন কাটাচ্ছেন ঠিক সে সময় এই জগন্নাথের এইভাবে তাদের পাশে দাঁড়ানোর ঘটনা সত্যিই নজিরবিহীন। এই ‘জগন্নাথ’-ই এখন দেশের কাছে মুখ উজ্জ্বল করছে বীরভূমের, এই ‘জগন্নাথ’-ই বিশ্বের কাছে উদাহরণ হয়ে উঠছে একজন প্রকৃত মানুষের প্রতীক হিসেবে।