নিজস্ব প্রতিবেদন : এক কথায় বলতে গেলে নিম্নচাপ যে ঝড়কে জন্ম দেয় তাই হলো ঘূর্ণিঝড়। বিস্তৃত ভাবে বলতে গেলে, সমুদ্র পৃষ্ঠের তাপমাত্রা ২৬ ডিগ্রির বেশী হলেই সেই অঞ্চলে নিম্নচাপ সৃষ্টি হয়। তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাওয়ার সাথে সাথে সমুদ্রের জল বাষ্পিভূত হয়ে উপরে উঠে যায় এবং সমুদ্র পৃষ্ঠের উপর একটি বায়ুশূন্য স্থানের সৃষ্টি হয়। সেই শূন্যস্থানকে পূরণ করতে পারিপার্শ্বিক শীতল ও ভারী বাতাস সেই অঞ্চলে ছুটে আসে। এই দ্রুত ছুটে আসা ঠান্ডা বাতাস ঘূর্ণিঝড়ের জন্ম দেয়।
গতিবেগ অনুসারে আরও চারটি ভাগ আছে ঘূর্ণিঝড়ের। যে ঝড়ের গতিবেগ ঘণ্টায় ৬২ থেকে ৮৮ কিলোমিটার পর্যন্ত হয় তাদের বলা হয় ট্রপিক্যাল সাইক্লোন। ৮৯ থেকে ১১৭ কিলোমিটার গতিবেগ সম্পন্ন ঝড়কে বলা হয় সিভিয়ার সাইক্লোনিক স্টর্ম। আবার ঝড়ের গতিবেগ আরেকটু বেড়ে ১১৮ থেকে ১৬৫ কিলোমিটার পর্যন্ত হলে তাকে ভেরি সিভিয়ার সাইক্লোনিক স্টর্ম হিসেবে আখ্যা দেওয়া হয়। ১৬৬ থেকে ২২০ কিলোমিটার পর্যন্ত গতিবেগ হলে আবার ঝড়ের উপাধি হয় এক্সট্রিমলি সিভিয়ার সাইক্লোনিক স্টর্ম। সদ্য রাজ্যের উপর বয়ে যাওয়া আমফান সুপার সাইক্লোন।
ঘূর্ণিঝড়ের গঠন কিরকম হয়?
দুই ধরনের ঘূর্ণিঝড়ের ক্ষেত্রেই কিছু গঠনমূলক বৈশিষ্ট একই থাকে। তবে নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলের ঘূর্ণিঝড়ের থেকে ক্রান্তীয় অঞ্চলের ঘূর্ণিঝড়ের (নিরক্ষরেখার ৫ ডিগ্রি থেকে ২০ ডিগ্রি উত্তর ও দক্ষিণে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড়) গতিবেগ বেশী হয়। ঘূর্ণিঝড়ের সাধারণ যে গঠনমূলক বৈশিষ্ট্যগুলি আছে সেগুলি হলো
ঘূর্ণিঝড়ের ঝড়ের চোখ : এটি কেন্দ্রের চারপাশে মূলত কিউমুলোনিম্বাস মেঘের যে আস্তরণ তৈরি হয়, তাকে মেঘের দেওয়াল বলা হয়। এটির ব্যাসার্ধ ১০-১০০ কিলোমিটার পর্যন্ত হতে পারে। চোখ উপরে গেলে ঝড়ের গতিবেগ ধীরে ধীরে কমতে থাকে।
মেঘের দেওয়াল : কেন্দ্রের চারপাশে মূলত কিউমুলোনিম্বাস মেঘের যে আস্তরণ তৈরি হয়, তাকে মেঘের দেওয়াল বলা হয়। এই অঞ্চলে ঝড়ের গতিবেগ সর্বাধিক থাকে। ১০-২০ কিলোমিটার পর্যন্ত এটি বিস্তৃত হতে পারে তবে এই অংশটি যেখানে প্রভাব বিস্তার করে সেখানে ক্ষয়ক্ষতির সর্বাধিক হয়।
স্পাইরাল ব্যান্ড : মেঘের দেওয়ালকে ঘিরে থাকে দুটি স্পাইরাল ব্যান্ড। মেঘের দেওয়ালের চারদিকে দুটি স্পাইরাল ব্যান্ড থাকে যাকে উপগ্রহ থেকে দেখলে ছোটখাটো গ্যালাক্সি মনে হয়। এটি বেশ কয়েক কিলোমিটার দীর্ঘ হতে পারে। এই অঞ্চলের প্রভাব স্থলভাগে যেখানে পড়ে সেখানে বৃষ্টিপাত ঘটায় সেই কারণে এটির আরেক নাম রেইন ব্যান্ড।
বহিঃসীমা অঞ্চল : এটি ঘূর্ণিঝড়ের সবথেকে বাইরের অঞ্চল। যখন কোনো ঘূর্ণিঝড় স্থলভাগে প্রবেশ করে তখন সবার প্রথম এই অঞ্চলের প্রভাব পরে। এটিকে ঘূর্ণিঝড়ের সীমানাও বলা যায়।
গতিবেগ অনুযায়ী ঘূর্ণিঝড়ের পাঁচটি ভাগ রয়েছে
ট্রপিক্যাল সাইক্লোন : ঝড়ের গতিবেগ ঘণ্টায় ৬২ থেকে ৮৮ কিলোমিটার।
সিভিয়ার সাইক্লোনিক স্টর্ম : ঝড়ের গতিবেগ ঘণ্টায় ৮৯ থেকে ১১৭ কিলোমিটার।
ভেরি সিভিয়ার সাইক্লোনিক স্টর্ম : ঝড়ের গতিবেগ ঘণ্টায় ১১৮ থেকে ১৬৫ কিলোমিটার।
এক্সট্রিমলি সিভিয়ার সাইক্লোনিক স্টর্ম : ঝড়ের গতিবেগ ঘণ্টায় ১৬৬ থেকে ২২০ কিলোমিটার।
সুপার সাইক্লোন : ঝড়ের গতিবেগ ২২০ কিলোমিটারের অধিক।