নিজস্ব প্রতিবেদন : আমাদের বাঙালি পরিবারে কম বেশী সকল মানুষেরই দুধ ভীষণ প্রিয়। আমিষ থেকে নিরামিষভোজী সকল মানুষদের কাছে দুধ ভিটামিনের একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎস বলে পরিচিত। কিন্তু ভিটামিনের গুরুত্বপূর্ণ এই উৎসটিও আমরা নির্ভেজাল ভাবে পাচ্ছিনা। কারণ কিছু অসাধু ব্যবসায়ী অধিক পরিমাণে লাভের আশায় পুরো দুধটাই ভেজাল দিয়ে তৈরি করেন। হলদিয়ার বেসরকারি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের ছাত্রী বর্ণালী সাহা সম্প্রতি দেখিয়েছেন কীভাবে ভেজাল দুধ প্রস্তুত করা হয়।
যেখানে মাংস ভাগাড়ের হয়, সেখানে দুধ ভেজাল থাকাটাও অকল্পনীয় নয়। কিন্তু সবথেকে ক্ষতিকর ও চাঞ্চল্যকর তথ্য হলো এই ভেজাল দুধের প্রস্তুতির পদ্ধতি। গুঁড়ো দুধের সাথে ডিটারজেন্ট ও শ্যাম্পু মিশিয়ে ভেজাল দুধ তৈরি করা হয়। আর আসল দুধ ভেবে দিনের পর দিন আমরা এই ভেজাল দুধই খেয়ে থাকি। এই আসল দুধের সঙ্গে ভেজাল দুধের গন্ধ বর্ণ সবকিছুই হুবুহু এক হওয়ার কারণে দুধ ভেজাল না আসল তা ধরাও সম্ভব হয় না।
কিন্তু ব্যবসায়ীরা কেন দুধে ভেজাল না দিয়ে পুরো দুধটাই ভেজাল উপকরণ দিয়ে তৈরি করেন?
দীর্ঘসময়ের জন্য স্টোর করা সম্ভব : ভেজাল দুধ একদিনেরও বেশি সময় ধরে টাটকা থাকে।
নষ্ট হয় না : ভেজাল দুধকে কোন ভাবেই নষ্ট করা যায় না। এই দুধ নষ্ট হয় না। এর ফলে এই দুধ এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্তে পৌঁছে যায়।
সবথেকে বড় চাঞ্চল্যকর যে তথ্য উঠে আসছে তাতে দেখা যাচ্ছে যে ভেজাল দুধ ফুটিয়ে খেলেও ধরা যাবে না। অপরদিকে এই দুধ, ডিটারজেন্ট, শ্যাম্পু ইত্যাদি দিয়ে তৈরি হওয়ার কারণে আমাদের শরীরের জন্য ভেজাল দুধ মারাত্মক ক্ষতিকর। কিন্তু গবেষকরা এই সমস্যা থেকে সমাধানের উপায়ও বলেছেন। ভেজাল দুধের এই অন্ধকার দিকটির পাশে তারা আলোর দিশাও দেখিয়েছেন। কীভাবে বুঝবেন দুধ ভেজাল কিনা?
গবেষকরা বলছেন ভেজাল দুধে একটুকরো সোয়াবিন ফেলে দিন। যদি দুধ ভেজাল হয় তাহলে তা থেকে একটি ঝাঁঝালো গন্ধ বেরোবে। রাসায়নিক বিক্রিয়ার ফলে এই গন্ধ উৎপন্ন হবে। কারণ ভেজাল দুধে কস্টিক সোডা থাকে। আর সোয়াবিনের মধ্যে থাকা উৎসেচক কস্টিক সোডা দ্বারা জারিত হয়ে অ্যামোনিয়া উৎপন্ন করবে তাই ভেজাল দুধে যদি সোয়াবিন ফেলে দেন, তাহলে তা থেকে একটি ঝাঁঝালো গন্ধ বের হবে। যা খাঁটি দুধের ক্ষেত্রে হবে না।
ভেজাল দুধ সম্পর্কে জনসাধারণকে ওয়াকিবহাল করতে হলদিয়ার বেসরকারি ইঞ্জিনিয়ারিং ওই কলেজটি জনসচেতনতামূলক শিবির তৈরি করছে, যাতে বিভিন্ন স্কুলে গিয়ে শিশুদেরকে খাদ্য নিরাপত্তা বিষয়ে সচেতন করে তোলা যায়। কারণ ছোট থেকে যদি খাদ্য সম্পর্কে সচেতনতা তৈরি করা যায় তাহলে পরবর্তী প্রজন্ম সুস্থ ও স্বাভাবিক থাকবে নচেৎ পরবর্তী প্রজন্ম অপুষ্টি ও রোগের শিকার হবে যাতে দেশেরই ক্ষতি। তাই মানুষকে সচেতন করতে তাদের এই উদ্যোগ নিঃসন্দেহে সাধুবাদযোগ্য।