নিজস্ব প্রতিবেদন : গেণ্ডা বাদ্যকর, সচরাচর শহরতলীর বা বড় বড় শহরের কেউ চেনেন না। কারণ তিনি বীরভূমের মত মফস্বল এলাকার খয়রাশোল ব্লকের প্রত্যন্ত গ্রাম রসা গ্রামের বাসিন্দা। তাঁর মধ্যে ছিল এক বিরল প্রতিভা। তিনি বট গাছের পাতার মাধ্যমে পুরাতন হিন্দি গান থেকে শুরু করে, দেশাত্মবোধক গান, ভক্তিমূলক গান অনায়াসে তুলে ধরতেন। আর সেই সকল গান শুনে মন ভরতো বীরভূম, বর্ধমান, এমনকি ঝাড়খণ্ডের মানুষদের। বছর তিনেক আগে ইনারই বট পাতার সুরের একটি গান সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়। আর সেই ভাইরাল হওয়া ভিডিও কয়েক লক্ষ মানুষ দেখে ওই বৃদ্ধের প্রশংসায় পঞ্চমুখ হন।
তবে দুঃখের খবর এটাই যে এই বিরল প্রতিভার মানুষটি শনিবার সকলকে ছেড়ে চলে গেলেন। জীবিত অবস্থায় তার প্রবল আর্থিক দুরবস্থার মধ্যে দিন কেটেছে। ছোট্ট মাটির বাড়িতে ছিল তার বাস। পরে সরকারি সাহায্যের জন্য প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা প্রকল্পে আবেদন করেছিলেন। তবে জীবিত অবস্থায় সেই বাড়ি আর তার দেখে যাওয়া হলো না।
https://www.facebook.com/amarbirbhum/videos/2391392917805544/
জীবিত অবস্থায় তিনি বাসে করে বীরভূমের বিভিন্ন এলাকা ছাড়াও বর্ধমান ও ঝাড়খণ্ডের বিভিন্ন এলাকায় যেতেন। এবং সেই সকল জায়গায় বট পাতার মাধ্যমে গান তুলে ধরতেন ও সাধারণ মানুষদের মন ভোলাতেন। তার পরিবর্তে সামান্য কিছু আর্থিক সাহায্য আসতো, যা দিয়েই চলতো নিজের খরচ। তবে তিনি অর্থ উপার্জনের জন্যই এমনটা করতেন তা নয়, তিনি জীবিত অবস্থায় জানিয়েছিলেন, সখের বশে এলাকায় এলাকায় ঘুরে ঘুরে এমন বট পাতার মাধ্যমে গানের সুর তুলে ধরতেন।
https://www.facebook.com/amarbirbhum/videos/2485826098329221/
গেণ্ডা বাদ্যকরের বার্ধক্যের পাশাপাশি আরও সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছিল তার ভাঙ্গা পা। যদিও তা ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে উঠেছিল, কিন্তু লকডাউন পরিস্থিতিতে আর ভালোভাবে চিকিৎসা হয়নি। তবে শেষের দিকেও তিনি আশায় বসেছিলেন তার প্রতিভার যোগ্য সম্মান মিলবে বলে। বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে তাকে নিয়ে খবরও সম্প্রচারিত হয়েছে। কিন্তু শেষ সম্মান ছাড়াই তাকে ৭৭ বছর বয়সে চলে যেতে হল পৃথিবী ছেড়ে। আর তার পৃথিবী ছেড়ে চলে যাওয়ার পর রয়ে গেল তার ওই বট পাতার মাধ্যমে গাওয়া কিছু গানের ক্যামেরাবন্দী ছবি, রয়ে গেল সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হওয়া কিছু ভিডিও।