পৌষমেলার মাঠে নির্মাণ নিয়ে নারাজ মুখ্যমন্ত্রী

Madhab Das

Updated on:

Advertisements

নিজস্ব প্রতিবেদন : গত শনিবার থেকে শান্তিনিকেতনের পৌষ মেলার মাঠে পাঁচিল দেওয়া নিয়ে দফায় দফায় বিক্ষোভের সৃষ্টি হয়। শনিবার থেকেই স্থানীয়ভাবে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন এলাকার ব্যবসায়ী সমিতির সদস্যরা। সেদিন নির্মাণকার্য চলাকালীন ব্যবসায়ী সমিতির সদস্যরা ঘটনাস্থলে এসে সরিয়ে দেন নির্মাণকারী ঠিকাদারকে। পরে রবিবারও পরিস্থিতি সরগরম থাকে। তবে এর মাঝেই বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ লাইট ও সিসিটিভি ক্যামেরা লাগিয়ে রাতারাতি কাজ চালানোর মত পদক্ষেপ নেয়। সোমবার পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে ওঠে, আর এই পরিস্থিতিতে এদিন বিক্ষুব্ধ জনতা নবনির্মিত পাঁচিল সহ ভেঙে দেয় বিশ্বভারতীর ঐতিহ্যবাহী মেলার মাঠের কংক্রিটের ফটক।

Advertisements

Advertisements

পাশাপাশি বিক্ষোভকারীরা সোমবার বিশ্বভারতীর অস্থায়ী ক্যাম্পেও ভাঙচুর চালায়। আর এরপরেই রাজ্যের রাজ্যপাল জগদীপ ধনকর মুখ্যমন্ত্রীকে ফোন করেন। রাজ্যপালের সাথে কথোপকথনের বিষয় নিয়ে সোমবার বিকালে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সাংবাদিক বৈঠকে জানান, “বিশ্বভারতীর বিষয়ে রাজ্যপাল আমাকে ফোন করেছিলেন, আমার কথা হয়েছে। আমি রাজ্যপালকে জানিয়েছি, এটা কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয় তাই এই বিষয়ে আমি কিছু বলবো না।”

Advertisements

তবে এর পাশাপাশি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এদিন আরও বলেন, “বিশ্বকবির উদ্দেশ্যই ছিল ফাঁকা জায়গায়, প্রকৃতির পরিবেশে, খোলা আলোয়, পাখির কিচিরমিচির ডাকে, গাছতলায় শিক্ষার মুক্ত পরিবেশ তৈরি করা। যার জন্যই শান্তিনিকেতনে তিনি এই বিশ্ববিদ্যালয় তৈরি করেছিলেন।প্রকৃতির সঙ্গে তার যোগ রয়েছে। সেখানে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য নষ্ট করে পাঁচিল চাইনা। বিষয়টি নিয়ে জেলাশাসককে বিশ্বভারতীর উপাচার্য ও ছাত্র-ছাত্রীদের সাথে কথা বলতে বলেছি।”

পাশাপাশি মুখ্যমন্ত্রীর অভিযোগ, “মাঠে নির্মাণকার্য চালানোর সময় নিরাপত্তার দায়িত্বে বহিরাগতরা ছিলেন। আর বহিরাগতদের থাকা স্থানীয় মানুষদের পছন্দ হয়নি।”

যদিও পৌষমেলার মাঠে পাঁচিল দেওয়া নিয়ে বিশ্বভারতীর কর্ম সমিতির সদস্য ডাক্তার সুশোভন ব্যানার্জি জানান, “মূলত দুটি কারণে মেলার মাঠ ঘিরে ফেলা হচ্ছে। প্রথম কারণ হলো নিরাপত্তা আর দ্বিতীয় কারণ হলো বিশ্বভারতীর সম্পত্তি রক্ষা করা। কারণ বিশ্বভারতীর সম্পত্তি কেবলমাত্র বিশ্বভারতীর কয়েকজন অধ্যাপক অধ্যাপিকা অথবা পড়ুয়াদের নয়। এই সম্পত্তির গোটা ভারতের।” পাশাপাশি তিনি আরও জানান, “যারা ভাবছেন এই মাঠ পাঁচিল দিয়ে ঘিরে দেওয়া হলে খেলাধুলা এবং প্রাতঃভ্রমণ বন্ধ হয়ে যাবে তারা ভুল ভাবছেন। খেলাধুলা এবং প্রাতঃভ্রমণের জন্য এই মাঠ খোলা থাকবে। মাঠের নির্মাণকার্য চলাকালীন এদিনের এমন বিক্ষোভ ও ভাঙচুর নিয়ে বিশ্বভারতীর পক্ষ থেকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রককে জানানো হবে।”

অন্যদিকে বিশ্বভারতীতে এমন বিক্ষোভ নিয়ে সোমবার বীরভূম জেলা বিজেপি সভাপতি শ্যামাপদ মন্ডল তৃণমূলকে দায়ী করে জানিয়েছেন, “এটা সাধারণের কাজ নয়। কারণ এখানে তৃণমূল নেতা নরেশ বাউরির এবং আরও কয়েকজন তৃণমূল নেতৃত্ব সেখানে দাঁড়িয়ে কাজ করছেন। তৃণমূল পূর্বপরিকল্পিতভাবে এই কাজটা করছে। কারণ একটাই, বিশ্বভারতী কেন্দ্র সরকারের নিয়ন্ত্রণে। আর রাগের বিষয় হলো বিশ্বভারতী নিয়ে তারা ব্যবসা ইত্যাদি করতে পারে না। বিশ্বভারতী বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপ নিতে হলে সাধারণ মানুষকে অনুরোধ করবো আইনের পথে হাঁটুন।”

যদিও এদিনের এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে তৃণমূল নেতৃত্বের তরফ থেকে দাবি করা হয়, “এখানে রাজনীতির কোনো সম্পর্ক নেই। মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত বিক্ষোভের প্রতিফলন ঘটেছে এদিন।”

Advertisements