অমরনাথ দত্ত : শান্তিনিকেতনের পৌষ মেলার মাঠে পাঁচিল দেওয়াকে কেন্দ্র করে গত তিনদিন ধরে নানান ঘটনার সাক্ষী হয়েছে দেশ। কখনো প্রশ্ন তোলা হয়েছে বিশ্বভারতীর উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তী এবং বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষের মেলার মাঠকে পাঁচিল দিয়ে ঘেরার মতো পদক্ষেপ নিয়ে, কখনো প্রশ্ন তোলা হয়েছে বিক্ষোভকারীদের ঐতিহ্যবাহী বিশ্বভারতীর সম্পত্তি নষ্ট করা নিয়ে। তবে এতকিছুর পরেও এযাবত মুখ খুলতে দেখা যায়নি বীরভূম জেলা তৃণমূল সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলকে। আর এবার মুখ খুললেন তিনি।
মঙ্গলবার বীরভূম জেলা তৃণমূল ভবনে তৃণমূলের জেলা কমিটির একটি বৈঠক ছিল। যে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে অনুব্রত মণ্ডল বিশ্বভারতীর পদক্ষেপ, তৃণমূল নেতাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ এবং আগামীদিনের সুরাহা নিয়ে নিজের বক্তব্য পেশ করেন।
তিনি তার মতামত জানানোর সময় প্রথমেই বলেন, “দেখুন বিশ্বভারতী নিয়ে আমি মাথা ঘামাই না। বিশ্বভারতী নিয়ে আমি ইন্টারেস্টেড নই। যেখানে মুখ্যমন্ত্রী আগামীকাল মিটিং ডাকতে বলেছেন, সেখানে ডিএম আগামীকাল মিটিং ডেকেছেন। আগামীকাল মিটিংয়ে কি হয় দেখুন।”
এর পাশাপাশি তিনি বিশ্বভারতী প্রসঙ্গে দিন বলেন, “তবে আমরা ছোট থেকে দেখিয়ে এসেছি রবীন্দ্রনাথের আদর্শ পাঁচিল দিয়ে ঘেরা নয়। খোলা জায়গার মধ্যে থাকবে। সেটাই হওয়া উচিত। আজ পর্যন্ত রবীন্দ্রনাথ কোনদিন বড় বড় পাঁচিল দিয়ে ঘিরে দেননি। কোর্টের অর্ডারে যেটা বলা আছে সেটা হল ডিমার্কেশন করা। সেখানে বলা হয়নি পাঁচিল দিয়ে ঘিরতে হবে অথবা ফেন্সিং করতে হবে। ডিমার্কেশন হয় পিলার দিয়ে। পিলার দিয়ে মেলার মাঠটা ডিমার্কেশন করতে হবে। তাই বলে মেলার মাঠে বড় বড় পাঁচিল, এটা ঠিক নয়। রবীন্দ্রনাথের আদর্শকে নষ্ট করা উচিত নয়।”
এর পরেই তিনি বলেন, “ওটা একচুয়ালি আশ্রম। রবীন্দ্রনাথ ইউনিভার্সিটি বলতেন না, তিনি আশ্রম বলতেন। ওই জন্য আশ্রম ঐরকম পাঁচিল দিয়ে ঘেরা হয় না। আশ্রম হয় খোলামেলা জায়গায়। রবীন্দ্রনাথের একটা গানও আছে।”
শান্তিনিকেতনের এমন ঘটনা নিয়ে বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ তৃণমূলের বিধায়ক নরেশ বাউরির সহ প্রাক্তন কাউন্সিলর নিয়ে মোট ৮ জনের বিরুদ্ধে শান্তিনিকেতন থানায় অভিযোগ দায়ের করে। যে ঘটনা নিয়ে অনুব্রত মণ্ডলের এদিন বলেন, “কে ওখানকার এক্স স্টুডেন্ট, সে ওখানে যেতেই পারে। কে গেল, না গেল, এখানে তৃণমূল পার্টির কোনো সম্পর্ক নেই। টিভি ফুটেজে যা দেখেছি আগের দিন ওখানে যখন ভিসি ছিলেন তখন বিজেপির অনেক লিডাররা ছিলেন। এসব রাজনৈতিক বিষয় নিয়ে বলতে আমি রাজি নয়। এই ঘটনায় তৃণমূল জড়িত নয় এবং তৃণমূল এই ব্যাপারে ইন্টারেস্টেড নয়। আমার মনে হয় একটা চক্রান্ত চলছে, রবীন্দ্রনাথকে মুছে দেওয়ার ব্যবস্থা চলছে।”
প্রসঙ্গত গত কালকের ঘটনার পর মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছিলেন, “বিশ্বভারতী একটা কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়। সুতরাং এবিষয়ে তিনি কিছু বলতে চান না।” তবে পৌষমেলার মাঠে পাঁচিল দেওয়াকে তিনি যে পছন্দ করছেন না তাও তিনি তার বার্তায় বুঝিয়ে দেন। তিনি জানান, “রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর খোলামেলা জায়গার জন্য শান্তিনিকেতন বিশ্বভারতী তৈরি করেছিলেন।” আর এদিনের অনুব্রত মণ্ডলের বক্তব্য থেকেও বোঝা যায় তিনিও পৌষমেলার মাঠে পাঁচিল দেওয়াটা পছন্দ করছেন না।