নিজস্ব প্রতিবেদন : শান্তিনিকেতনে পৌষ মেলার মাঠে প্রাচীর দেওয়াকে কেন্দ্র করে চলতি মাসের ১৫ তারিখ থেকে শুরু হয় বিক্ষোভ। স্থানীয় ব্যবসায়ী সমিতির সদস্যদের দাবি বিশ্বভারতীর খোলামেলা পরিবেশ বজায় রাখতে পৌষ মেলার মাঠে প্রাচীর দেওয়া যাবে না। আর তাদের এই বিক্ষোভের সাথে যুক্ত হন বোলপুরের স্থানীয় বাসিন্দারা এবং বিশ্বভারতীর প্রাক্তণ আশ্রমিকরা। তবে এই বিক্ষোভ ১৭ তারিখ সর্বোচ্চ মাত্রা ছাড়িয়ে যায়। বিক্ষুব্ধ উত্তেজিত জনতারা বিক্ষোভ চলাকালীন জেসিবি এনে পৌষ মেলার মাঠের বিশ্বভারতীর সম্পত্তি নষ্ট করেন এবং বিশ্বভারতী ক্যাম্পাসের আরও কিছু সম্পত্তিতে হাত দেন। এই ঘটনায় বিজেপি নেতারা তৃণমূল নেতাদের মদতে এমন ঘটনা ঘটেছে বলে অভিযোগ করে আসছেন। তবে তৃণমূলের পক্ষ থেকে এই ঘটনার সাথে রাজনীতির কোনো সম্পর্ক নেই বলে সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করা হয়।
আর সেদিনের এই ভাঙচুরের ঘটনায় বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ শান্তিনিকেতন থানায় দুবরাজপুরের বিধায়ক নরেশ বাউরী, স্থানীয় প্রাক্তন তৃণমূল কাউন্সিলর ওমর শেখ সহ আরও বেশ কয়েকজন তৃণমূল নেতার বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করে। পাশাপাশি বিশ্বভারতীর উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তী বিশ্বভারতীর সাথে সরাসরি অথবা পরোক্ষভাবে যুক্তদের উদ্দেশ্য করে একটি খোলা চিঠি লেখেন। যেখানে তিনি বিশ্বভারতীর বিভিন্ন জায়গায় প্রাচীর যাওয়া এবং অন্যান্য প্রসঙ্গ তুলে ধরেন। আর এই খোলা চিঠিতেই উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তী এক জায়গায় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে ‘বহিরাগত’ বলে উল্লেখ করেছেন। যেখানে তিনি লিখেছেন, ‘গুরুদেব রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর নিজে একজন বহিরাগত ছিলেন।’ আর রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে ‘বহিরাগত’ বলা প্রসঙ্গকে অনেকেই মেনে নিতে পারেননি। ঠিক তেমনই বিজেপি নেতা অনুপম হাজরা বিশ্বভারতীর সম্পত্তি নষ্ট করার বিরুদ্ধে আওয়াজ তুললেও, দোষীদের শাস্তির দাবি করলেও এই ‘বহিরাগত’ কথাটিতে মেনে নিতে পারছেন না। আর তারই সোজাসাপ্টা জবাব তিনি আমাদের দিয়েছেন প্রতিনিধিকে।
তিনি এদিন আমাদের জানিয়েছেন, “আমি গর্ববােধ করি যে বিশ্বভারতীর মতাে প্রতিষ্ঠানে ছােট থেকে পড়াশােনা করেছি, যে প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। তাই রবীন্দ্রনাথ আমার কাছে কোন ব্যক্তি না, এক আবেগের নাম। সেই জন্য তৃণমূলের দুষ্কৃতীদের দ্বারা বিশ্বভারতীর প্রাচীর ভেঙে দেওয়া যেমন মেনে নিতে পারিনি, ঠিক তেমনি ভাবে রবীন্দ্রনাথকে ‘বহিরাগত’ বলাটা আমার কাছে শ্রুতিমধুর মনে হয়নি। আমার মতাে বহু প্রাক্তনী এতে ব্যথিত। যাইহােক, যতক্ষণ না বিশ্বভারতীর তান্ডব লীলায় জড়িত দুষ্কৃতীরা কঠোর শাস্তি পাচ্ছেন, আমার শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানের জন্য লড়াই চলতে থাকবে, তার জন্য যদি আমাকে অনশন আন্দোলনেও নামতে হয়, নামতে রাজি আছি।”
প্রসঙ্গত, বিজেপি এই নেতা অনুপম হাজরাকে বারংবার অন্যায়ের বিরুদ্ধে মুখ খুলতে দেখা গিয়েছে। তিনি যখন বোলপুরের তৃণমূল সাংসদ ছিলেন তখনো তিনি অন্যায়কে কোনরকম ভাবে আপোষ করেননি। যে কারণে তাকে বারবার স্রোতের বিরুদ্ধে গিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় নানান ধরনের পোস্ট করতে দেখা যেত। আর এই সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট নিয়েই তিনি আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছিলেন। এমনকি স্রোতের বিরুদ্ধে গিয়ে তাকে একসময় সোশ্যাল মিডিয়া ত্যাগ পর্যন্ত করতে হয়। তারপর আবার যেদিন থেকে সোশ্যাল মিডিয়ায় ফিরে এসেছেন সেদিন থেকেই ফের পুরাতন ছন্দে।