৩৪ বছরের চাকরি জীবনে ৭১ বার বদলি, IAS অফিসারের সততার পুরস্কার

Madhab Das

Published on:

Advertisements

নিজস্ব প্রতিবেদন : সরকারি কাজ যা হবে নিয়ম মেনে হবে। এই মন্ত্র মেনে চলতে গিয়ে ৩৪ বছরের চাকরি জীবনে ৭১ বার বদলি হতে হয়েছে। পাননি শেষ ৬ মাসের বেতন। কিন্তু দুর্নীতি ও অন্যায়ের কাছে মাথা নত করেননি কোনদিন IAS অফিসার প্রদীপ কাশনি। বিরল শ্রেণীর এই সৎ অফিসার যতদিন কাজ করছেন, ততদিন মেনে চলেছেন প্রশাসনিক নিয়ম। কর্ম জীবনে একটা কথাই বলেছেন, ‘জো হোগা কায়াদা সে হোগা।’

Advertisements

দুর্নীতি আর অসততা যখন প্রশাসনের রন্ধ্রে রন্ধ্রে, প্রশাসনের ভিতরে যখন নানা ধরনের ঘুঘুর বাসা। প্রশাসনের ছিদ্র গলে দুর্নীতি যখন স্বাভাবিকে পরিণত হয়ে গেছে তখন সততার আদর্শ নিয়ে কাজ করে গিয়েছেন প্রদীপ কাশনি তাঁর সমস্ত কর্মজীবনে। যা এক বিরল দৃষ্টান্ত বর্তমান সময়ে। যদিও এর মূল্য‌ চোকাতে হয়েছে প্রদীপ কাশনিকে।

Advertisements

হরিয়ানার চরখি দাদরির, প্রদীপ কাশনি ১৯৮৪ সালে হরিয়ানা সিভিল সার্ভিসে যোগদান করেন। ১৯৯৭ সালে আইএস অফিসার হিসাবে দায়িত্বভার গ্ৰহণ করেন। তাঁর স্ত্রী নীলম কাশনিও আইএস অফিসার হিসাবে দায়িত্ব পালন করে বর্তমানে অবসর গ্ৰহণ করেছেন। প্রদীপ কাশনিকে অবশ্য ৬ মাস আগেই অবসর গ্ৰহণ করতে হয়েছে শেষ ৬ মাস মাইনে না পেয়ে।

Advertisements

কিন্তু কর্মজীবনে প্রশাসনের অন্দরমহলে আপোষ করেননি কোন দুর্নীতির সঙ্গে। প্রতিবাদ করেছেন। মুখোমুখি হয়েছেন অন্যায়ের বিরুদ্ধে। ফলে একদিকে যেমন শাসকের বিরাগভাজন হয়েছেন তেমন স্বীকার হয়েছেন নানা ধরনের ষড়যন্ত্রের। বদলি হতে হয়েছে একাধিকবার।

হরিয়ানার ভূপেন্দ্র সিং হুদার আমলে ২০১৬ সালে ১২ বার এবং সেপ্টেম্বর মাসে তিনবার তাকে বদলি করা হয়। সাংবাদিকদের তিনি জানান, প্রশাসনের দুর্নীতি কোন স্তরে পৌঁছেছে। যেখানে ৫ লক্ষ টাকার একটা কাজের জন্য উচ্চপদস্থ অফিসাররা ১ কোটি টাকা পর্যন্ত নেন। টাকা না পেলে কাজ ফেলে রাখা হয়। একেই ভারতে লাল ফিতের ফাঁস বলা হয়। যার সঙ্গে জড়িত প্রশাসনের বহু কর্মী।

প্রদীপ কাশনির শেষ পোস্টিং ছিল হরিয়ানার ল্যান্ড ইউজ বোর্ডে। সেখানে তিনি দেখেন বোর্ডের জন্য কোন নথি, ফাইল বা‌ কর্মী নেই। কেন্দ্রিয় প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনালের কাছে আবেদন করেন। তিনি RTI করলে জানতে পারেন বোর্ডটি বন্ধ আছে। ভূমি ব্যবহার বোর্ড প্রথমে পরিবেশ অধি দপ্তরের অধীনে ছিল। পরে কৃষি দফতরের অধীনে চলে আসে। কৃষি বিভাগ বোর্ডটিকে বন্ধের পরামর্শ দেয়। এরপরই বোর্ডটি ২০০৮ সালে বন্ধ হয়ে যায়। তাই প্রদীপ কাশনিকে বাধ্য হয়ে শেষ‌ ৬ মাস বেতন না নিয়ে অবসর গ্ৰহণ করতে হয়।

তিনি জানান, “মনোহর লাল খট্টর সরকারের নির্দেশ ছিল, দুই বছর আগে অফিসারদের কোন বদলি করা যাবে না।অফিসাররা তাদের কাজের জন্য দায়বদ্ধ। যদি কোন অফিসারের কাজে ভুল ধরা পড়ে তাহলে সেই অফিসারের শাস্তি হবে। অফিসারদের দুই বছর আগে বদলি করার সিদ্ধান্ত সিভিল সার্ভিস বোর্ড নেবে। তবে বদলির কারণ জানতে হবে। কিন্তু আমার ক্ষেত্রে এই নিয়ম মানা হয়নি।”

প্রদীপ কাশনি নিজেই জানিয়েছেন সাম্যবাদ ভাবধারায় তিনি বড়ো হয়ে উঠেছেন। বাবা ছিলেন সমাজতান্ত্রিক কর্মী ও ছোট্ট পত্রিকার সম্পাদক। বাবার কাছে পাওয়া মূল্যবোধ থেকে তিনি কখনো সরে আসেনি। বর্তমানে তিনি কংগ্ৰেস দলে যোগ দিয়েছেন। শুধুমাত্র রাজনীতির জন্য নয়, সাম্য ও দুর্নীতি মুক্ত সমাজ গড়ার লক্ষ্যে।

Advertisements