নিজস্ব প্রতিবেদন : রাঢ় বাংলার লোকসঙ্গীত থেকে রিমেক্স গানের দৌলতে আধুনিক প্রজন্মের হৃদয় জয় করে এবার ‘গাঁদা ফুল’ শাস্ত্রীয় সঙ্গীত শিল্পীদের স্পর্শে নতুন রূপে আত্মপ্রকাশ করছে। একটি লোকসঙ্গীতের এমন ভুবন জয়ের আগে দেশের মানুষ এমনভাবে দেখেনি।
সোনি মিউজিক এবার রতন কাহারকে নিয়েই বানালো গাঁদা ফুলের গানের ভিডিও। যেখানে আগের মতোই থাকবে জ্যাকলিন ফার্নান্ডেজ। তবে এই গাঁদা ফুল গানটি তবলা বিট মিক্সের মাধ্যমে পরিচালনার দায়িত্বে আছেন বিখ্যাত সঙ্গীত কম্পোজার বিক্রম ঘোষ ও পরিচালক অরিন্দম শীল।
অখ্যাত বাঙালি লোকসঙ্গীত শিল্পী রতন কাহারের নাম এতদিন কেউ না জানলেও তাঁর গান ‘গাঁদা ফুল’ সত্তরের দশক থেকেই জনপ্রিয়। স্বীকৃতি না মিললেও দারিদ্রের সঙ্গে লড়াই করে সারাজীবন ধরে বীরভূমের মাটির গান বেঁধে আসছেন। জীবন সায়াহ্নে এসে মিলেছে তাঁর সেই গান রচনার স্বীকৃতি।
গাঁদা ফুল এখন পপ সঙ্গীত শিল্পী বাদশার রিমেক্সের কল্যাণে সারা ভারতে জনপ্রিয়। যদিও এই লোকসঙ্গীত গানটির আধুনিকিকরণ নিয়ে বিতর্ক থাকলেও এই রিমেক্স গানের দৌলতেই বীরভূমের অখ্যাত এই শিল্পি এখন সারা ভারতে পরিচিত। এমনকি অধিকাংশ বাঙালি এই গান শুনে থাকলেও জানতেন না তাঁর আসল রচিয়তার নাম। রিমেক্স গানের কল্যাণে এই গান এখন সারা ভারতে যেমন জনপ্রিয় তেমন জীবন সায়াহ্নে এসে রতন কাহার পেয়েছেন এই গানের জন্য স্বীকৃতি ও আর্থিক মূল্য।
১৯৭২ সালে রতন কাহারের রচিত ও ঝুমুর তালে সুরারোপিত এই গানটি আকাশবাণীতে প্রথম প্রচারিত হয়। এরপর ১৯৭৬ সালে স্বপ্না চক্রবর্তীর কন্ঠে প্রচারিত হলে গানটি তুমুল জনপ্রিয়তা পায়। কিন্ত অশোকা ব্যানারের রেকর্ডে গীতিকার হিসাবে রতন কাহারের নাম উল্লেখ করা হয়নি। ছিল প্রচলিত গান বলে উল্লেখ। যদিও এই গান ১৯৭২ সালে আকাশবাণীতে রতন কাহার গেয়েছিলেন।
২০২০ সালে ২৫ মার্চ সোনি মিউজিকের ব্যানারে পায়েল দেবের কন্ঠে বাদশার রিমেক্স গানে দুটি লাইন ব্যবহার হয় রতন কাহারের অনুমতি ছাড়াই। এনিয়ে সমালোচনা শুরু হলে বাদশা ভিডিও বার্তায় জানান গান রিমেক্সের সময় আসল রচিয়তার নাম জানতেন না। তবু তিনি দুঃখ প্রকাশ করেন ও আর্থিক মূল্য দেন।
পঞ্চাশ বছর ধরে এই গানটি মানুষের মুখে মুখে ঘুরছে। কেন ছুঁয়ে যায় মানুষের মনে এই গান। রতন কাহার জানিয়েছেন, “একজন পতিতার সুন্দরি কন্যাকে নিয়ে এই গান তিনি লেখেন। যে কন্যা স্বীকৃতি পায়নি তাঁর বাবার। সেই দুঃখের কথা বঞ্চিত পতিতা শুনিয়েছিলেন রতন কাহারকে। সেই জীবনের দুঃখের কথাই রচনা করেছিলেন রতন কাহার তাঁর এই গাঁদা ফুলের গানে।”
তাই হয়তো গাঁদা ফুলের গানে, অবহেলিত দারিদ্রের মধ্যে পতিতা মায়ের কাছে বেড়ে ওঠা বড় লোকের বেটির দুঃখের সুর, মানুষের হৃদয়ে এমনভাবে আজও বেজে চলেছে।