নিজস্ব প্রতিবেদন : মানুষের উদ্দেশ্য যদি মহৎ হয় তাহলে লক্ষ্য পূরণের পথে যতই বাধা আসুক না কেন, সাফল্য একদিন আসবেই। তাই নিজের সামর্থের দিকে না তাকিয়ে আমাদের লক্ষ্যটাকেই সবসময় বৃহৎ করে তুলতে হয়। আর নিজের অধ্যবসায়ে দৃঢ় থাকলেই মানুষ নিজের আয়ত্তের বাইরে থাকা জিনিসকেও একদিন আয়ত্তাধীন করতে পারেন। কেরালা নিবাসী একজন নিজের দৃঢ়তা, কাজের প্রতি ঐকান্তিকতা ও কঠোর পরিশ্রমের মধ্য দিয়ে এই কথাটিরই সত্যতা প্রমাণ করলেন।
পৃথিবীর অনেক উন্নত দেশেই বৈদ্যুতিন গাড়ির ব্যবহার চলছে। ভারতের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের বড় বড় গবেষকরা এই বৈদ্যুতিন গাড়ির প্রযুক্তিবিষয়ক গবেষণায় ব্যস্ত। এইরকম সময়েই কেরালার কোডাঙ্গালুর এডাভিলানগুরের বাসিন্দা নিশার দীর্ঘদিনের পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর বৈদ্যুতিন গাড়ি বানিয়ে সকলকে তাক লাগিয়ে দিলেন। দীর্ঘদিন ধরে চেষ্টা করার পর অবশেষে আজ তিনি সফল।
সবথেকে আশ্চর্যের বিষয় হলো এটাই যে নিশার কোন ইঞ্জিনিয়ার বা গবেষক নন, তিনি একজন সাইকেল মেকানিক। হ্যাঁ, সাইকেল রিপিয়ারিং ও টায়ার পাংচারের কাজ করতে করতেই চাকা নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা শুরু করে দেন নিশার। বিভিন্ন জায়গা থেকে যন্ত্রাংশ নিয়ে এসে নিজের বাস্তব বুদ্ধিকে কাজে লাগিয়ে বৈদ্যুতিন বাইক বানাতে চেষ্টা করেন। নিজের চেষ্টায় আজ তিনি সফল। ১৭৫ কেজি ওজনের একটি বৈদ্যুতিন বাইক তিনি তৈরি করেছেন। বাইকটির নাম তিনি দিয়েছেন ‘Mass’।
জীবাশ্ম জ্বালানি দ্বারা পরিচালিত গাড়ির ভবিষ্যত বিকল্পই হলো বৈদ্যুতিন গাড়ি। কারণ বৈদ্যুতিন এই গাড়ির ব্যবহার যেমন পরিবেশকে দূষিত করে না তেমনি তা উন্নত প্রযুক্তি বিদ্যার ও প্রমাণ দেয়। এইরকম একটি উন্নত প্রযুক্তির বাইক বানাতে নিশারের এক লক্ষ টাকা ব্যয় হয়েছে।
নিশার জানিয়েছেন, তার প্রস্তুত করা এই বাইকটিতে একবার চার্জ দিলে ২৫ কিলোমিটার অবধি চলবে। আবার এই বাইকে যদি উন্নত মানের ব্যাটারি ব্যবহার করা হয় তাহলে এটি ৬০ কিলোমিটার পর্যন্ত চালানো যাবে।
লিফ্ট নির্মাণের জন্য ব্যবহৃত একটি মোটরকে উন্নত করেই এই বৈদ্যুতিন বাইকের ইঞ্জিন প্রস্তুত করেছেন নিশার। এই মোটরটি তিনি দিল্লি থেকে অর্ডার দিয়ে আনিয়েছেন। এইভাবেই বিভিন্ন জায়গা থেকে বাইকের অন্যান্য পার্টসগুলি সংগ্রহ করেছেন তিনি। নিশারের ই-বাইক এখন সম্পূর্ণ রূপে প্রস্তুত, অপেক্ষা শুধু অনুমোদনের।
এই প্রসঙ্গে নিশার জানিয়েছেন, মোটরভিকেল ডিপার্টমেন্ট থেকে অনুমোদন পেলেই তিনি ই-বাইকটি রাস্তায় বার করবেন।
নিশারের এই ই-বাইক প্রস্তুতিতে সাফল্য আবার ও প্রমাণ করে দিল যে শিক্ষা সবসময় ডিগ্রি’তে বা কাগজে মেলে না, আসল শিক্ষা প্রমাণিত হয় কার্যক্ষেত্রে। তাই কোনরকম ডিগ্রি না থাকা সত্ত্বেও একজন ইঞ্জিনিয়ার ও গবেষকের কাজ করে দেখালেন নিশার।