নিজস্ব প্রতিবেদন : হিপ জয়েন্টে ফ্র্যাকচার! যার ফলশ্রুতি স্বরূপ গত চার বছর ধরে তিনি শয্যাশায়ী। হাঁটা চলার শক্তি বলতে নেই। অসহ্য যন্ত্রনা নিত্যসঙ্গী হয়ে উঠেছিল। দুটি পা ছোট-বড় হয়ে পড়েছিল। অসহায়হীনভাবে দিন কাটছিল সিউড়ি ১ নং ব্লকের রায়পুর গ্রামের বাসিন্দা বছর ষাটেকের রেনুকা দলুইয়ের।
রেণুকা দেবী অসহ্য এই যন্ত্রণা থেকে দ্রুত মুক্তি খুঁজছিলেন। কিন্তু মুক্তি খুঁজলেও সিউড়ির মত মফস্বলে এই সমস্যা উপশমের নেই কোনও পরিকাঠামো। নেই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকও। দিশাহারা হয়ে হতদরিদ্র দিনমজুর পরিবারের এই মহিলা ঘুরেছিলেন বর্ধমান থেকে শুরু করে কলকাতার নামীদামী হাসপাতালে। খরচের বহর শুনে পিছিয়ে আসতে হয়েছে বারবার। অবশেষে মফস্বল শহর সিউড়িতেই সুরাহা হলো সমস্যার।
কলকাতার সুপরিচিত শল্য চিকিৎসক (অস্থি) গোপাল ঘোষ এগিয়ে এসেছেন, ঝুঁকি নিয়েছেন। কৃত্রিম অঙ্গের মাধ্যমে সফল প্রতিস্থাপন করেছেন ওই দিনমজুর পরিবারের মহিলার হিপ জয়েন্টের। যন্ত্রনার হাত থেকে মুক্তি পেয়ে এবং স্বাভাবিক হাঁটা চলা করতে পারবেন নিশ্চিত জেনে মুখে হাসি ফুটেছে মহিলার। মঙ্গলবার প্রায় ঘন্টা দুয়েকের অস্ত্রোপ্রচারের মধ্যে দিয়ে বীরভূম জেলায় প্রথমবারের সফলতার নজির রেখেছে হিপ জয়েন্ট প্রতিস্থাপন।
ডাঃ গোপাল ঘোষ জানিয়েছেন, “এই অস্ত্রোপ্রচার খুবই ব্যয়বহুল। পাশাপাশি প্রয়োজন উন্নত পরিকাঠামোর। আর অপারেশনের ক্ষেত্রে কোনোটিরই সংস্থান ছিল না। ঝুঁকি নিতে হয়েছে। এই সব অস্ত্রোপ্রচারে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকি থাকে সংক্রমণের। একবার সংক্রমণ থাবা বসালে রোগীকে স্বাভাবিক ছন্দে ফেরানো অসম্ভব। এক্ষেত্রে সমস্ত প্রক্রিয়াটাই সফলতার সাথে হয়েছে।”
জানা গেছে, ওই মহিলার স্বাস্থ্যসাথী কার্ডও ছিল। কিন্তু হিপ জয়েন্ট রিপ্লেসমেন্টের জন্য যে কৃত্রিম অঙ্গের প্রয়োজন হয় তার বেশিরভাগই বিদেশি কোম্পানীর। যে কারণে সেই অঙ্গ কিনতেই ফুরিয়েছে স্বাস্থ্যসাথী কার্ডের বরাদ্দের পুরোটাই। আর এই পরিস্থিতি বিশেষ করে রোগীর আর্থিক অবস্থার কথা বিবেচনা করে কোনও পারিশ্রমিকই নেন নি চিকিৎসক সহ তার সহযোগীরা। এটাও এক মহান নজির।
সফল ভাবে অস্ত্রোপ্রচারের পর রেনুকা দলুইয়ের একমাত্র ছেলে প্রশান্ত দলুই জানিয়েছেন, “গত কয়েক বছর মা যে কি পরিমাণ কষ্ট পেয়েছে তা আমিই জানি। দিনমজুরি করে খেটে খাওয়া পরিবারের সদস্য আমরা। দেড় বছর আগে বাবা মারা গেছেন। অভাবের সংসার মায়ের চিকিৎসা কি করে করবো তাই ভেবে পাচ্ছিলাম না। চিকিৎসকরা এগিয়ে এসেছেন। মা সুস্থ হয়ে উঠবে জেনে খুব ভালো লাগছে।”