নিজস্ব প্রতিবেদন : ভারতীয় গণতন্ত্র বিশ্বের বৃহত্তম গণতন্ত্র। প্রায় ১৩০ কোটি জনগণের প্রতিনিধিত্ব করেন এদেশের নির্বাচিত প্রতিনিধিরা। পাঁচ বছরের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের দায়িত্ব থাকে তাদের নির্বাচিত কেন্দ্রের জনগণের দাবিদাওয়া সরকারের কাছে তুলে ধরা, পূরন করা।
কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই সংসদের দুই কক্ষের সাংসদদের ও রাজ্যের বিধান সভার নির্বাচিত বিধায়কদের বিভিন্ন কারণে পদ ছাড়তে দেখা যায়। যা গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে ক্ষতিগ্ৰস্ত করে তোলে।
বর্তমানে শুভেন্দু অধিকারীর পদত্যাগ পত্র নিয়েও শুরু হয়েছে পুরাতন সেই সাংবিধানিক দড়ি টানাটানি। যদি অধ্যক্ষ এই পদত্যাগ পত্র গ্ৰহণ নাও করেন সাংবিধানিকভাবে কিন্তু শুভেন্দু অধিকারীর অন্য দলে যাওয়া বা নিজের দল গড়ার ক্ষেত্রে কোন বাধার সৃষ্টি করবে না। আইনগত কিছু বাঁধা থাকলে বিধায়করা স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করতে পারেন। সেক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট দল ওই বিধায়ক পদ খারিজ করতে পারে মাত্র।
বিধায়কদের ক্ষেত্রে পদ ছাড়ার জন্য কোন কারণ দেখানোর প্রয়োজন হয়না। কিন্তু অবশ্যই তা হতে হয় স্বাধীন ইচ্ছার দ্বারা। যাতে এই পদ ছাড়া নিয়ে অন্য রাজনৈতিক দল বা কোন গোষ্ঠী রাজনৈতিক সুবিধা না নেয়, প্ররোচনা করতে না পারে সরকারি ব্যবস্থায়।
এছাড়াও এটা দেখা হয় অপ্রয়োজনীয় নির্বাচন করে সরকারের অর্থের অপচয় যাতে না হয়। কারণ জনগণের অধিকার আছে সরকার বা দলীয় প্রতিনিধিদের কাছ থেকে সাংবিধানিক অধিকারগুলি পাওয়া।
সংবিধান আর্টিকেল ১৯০ ধারায় (Vacation of seat) বিধায়কদের পদত্যাগ করার অধিকার দিয়েছে।
আর্টিকেল ১৯০(৩)(b) বলা হয়েছে পদত্যাগ করার সময় নিজের হাতে পদত্যাগপত্র লিখতে হবে, স্পিকারকে অ্যাড্রেস করতে হবে এবং অবশ্যই পদত্যাগপত্র স্পিকারের দ্বারা গৃহিত হতে হবে।
সংবিধান স্পিকারকেও পদত্যাগপত্র গ্ৰহণের ক্ষেত্রে sub-clause (b) ধারায় কিছু দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, স্পিকার বিধায়কের পদত্যাগ যথার্থ মনে করেন তিনি পদত্যাগ গ্ৰহণ করবেন। যদি মনে হয় স্বাধীনভাবে এই পদত্যাক দেওয়া হয়নি তবে তিনি পদত্যাগ গ্ৰহণ নাও করতে পারেন।
বিধায়কদের পদত্যাগের পদ্ধতিগুলি হল–
১) লিখিত হতে হবে।
২) বিধায়কের নিজের হাতে পদত্যাগপত্র লিখিত হতে হবে।
৩) অ্যাড্রেস করতে হবে স্পিকার বা চেয়ারম্যানকে।
৪) ১৯০ ধারায় গৃহীত হতে হবে স্পিকার বা চেয়ারম্যানের দ্বারা।
৫) বিধায়কের পদত্যাগের কারণ অনুসন্ধান করতে হবে।
৬) অনুসন্ধানের পর সন্তুষ্ট হলেই স্পিকার পদত্যাগপত্র গ্ৰহণের সিদ্ধান্ত নেবেন। যদি মনে করেন এই পদত্যাগ সঠিক নয় তিনি এই পদত্যাগপত্র নাও গ্ৰহণ করতে পারেন।
এক্ষেত্রে শুভেন্দু অধিকারী ইতিমধ্যেই রাজ্যপালকে তাঁর পদত্যাগ পত্র জমা দেওয়ার কথা লিখিত ভাবে জানিয়েছেন। সাংবিধানিকভাবে এটাও সুচিন্তিত পদক্ষেপে শুভেন্দু অধিকারীর বলে মনে করছেন সাংবিধানিক বিশেষজ্ঞরা।