নিজস্ব প্রতিবেদন : শুধু মাত্র বীরভূম নয়, বাংলা ছাড়িয়ে দেশের রাজনৈতিক মঞ্চে অনুব্রত মন্ডল এক পরিচিত নাম ও রঙিন চরিত্র। মমতার অতিপ্রিয় কেষ্ট দীর্ঘদিন ধরে দক্ষতার সঙ্গে সামলাচ্ছে বীরভূমের তৃণমূল দূর্গ। বীরভূমে তাঁর নামে বাঘে গুরুতে একঘাটে জল খায়। বিরোধীদের অভিযোগ, বীরভূম চলে তৃণমূলের জেলা সভাপতি দাদা অনুব্রত মন্ডলের নামে।
তাঁর এক একটি ডায়লগ বাঙলার জনসমাজে প্রবাদে পরিনত হয়েছে। পাঁচন, গুড় বাতাসা নকুল দানা, ঠেঙিয়ে পগাড় পার করে দেবো, উন্নয়ন দাঁড়িয়ে আছে রাস্তায়, চড়াম চড়ামের মতো বক্তব্য একদিকে যেমন বাংলার রাজনীতিতে রঙ লাগিয়েছে তেমন সহজ, মেঠো ভাষার এই বাস্তবধর্মী বক্তব্য তাঁর দলীয় কর্মীদের কাছ থেকে আদায় করে নিয়েছে সঠিক কাজ। যা তাকে এনে দিয়েছে বীরভূমে জয়ের সাফল্য।
বীরভূমের রাজপাট থেকে গ্ৰামীন মেঠো ঝাঁঝালো ভাষায় আক্রমণ হেনেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী থেকে বাংলার প্রবাদপ্রতীম কবি শঙ্খ ঘোষকেও!
অনুব্রত মণ্ডলের এক একটি বিতর্কিত মন্তব্য তাকে সমস্যায় ফেলার বদলে দিয়েছে আরও বেশি রাজনৈতিক মাইলেজ এবং তা স্বীকার করে নিচ্ছেন বিরোধী শিবিরের লোকেরাও!
কখনো বিরোধীদের হাত পা ভেঙে দেওয়ার নিদান দিয়ে বলেন, ‘ঠুঁটো জগন্নাথের মতো দেখছিস? হাত-পা নাই নাকি তোদের? নুলো হয়ে গিয়েছিস?বেড়িয়ে হাত-পা ভেঙে দে ইয়ার্কি বটে!”
সাংবাদিকরা এই মন্তব্য উস্কানি দেওয়ার সামিল নয়কি বলে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘মাঠে চলতে গেলে গুরু বসে গেলে তাকে দু’ঘা দিতে হয়!’
শঙ্খ ঘোষ অনুব্রত মন্ডলের রাস্তায় দাঁড়িয়ে আছে উন্নয়ন বক্তব্য নিয়ে কবিতায় উল্লেখ করেন, ‘এই বীরভূমী/উত্তাল ঢেউ পেরিয়ে এসে/পেয়েছি শেষে তীর্থভূমি/দেখ খুলে তোর তিন নয়ন/রাজ্য জুড়ে খড়গ হাতে/দাঁড়িয়ে আছে উন্নয়ন।’
এর পাল্টা অনুব্রত মণ্ডল বলেন, ‘বড় বড় কথা বলছেন কবি? এ কোন কবি? আমরা তো কবি বলতে জানতাম রবীন্দ্রনাথ-নজরুলকে। এ কোন নতুন কবি উঠে এসেছেন, যে আমার উন্নয়ন নিয়ে কথা বলছেন।’
আরও বলেন, ‘কবির নাম শঙ্খ রাখা ঠিক হয়নি। শঙ্খ নামের অপমান করছেন উনি। এখনো বলছি রাস্তায় উন্নয়ন দাঁড়িয়ে আছে। শঙ্খ একটা পবিত্র জিনিস। সব পবিত্র কাজে লাগে শঙ্খ। তাই শঙ্খ ভুল করলে দেবতাদের অসম্মান হয়। সে কারণে বলছি ওর নাম শঙ্খ রাখা ঠিক হয়নি।’
NRC নিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী সম্বন্ধে বলেন, ‘দেশে এত প্রধানমন্ত্রী এলেন আর শুধু আপনার মাথায় এই সব এলো!’ হঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, ‘বাংলায় NRC করতে এলে চামড়া গুটিয়ে দেব।’
কখনো বলেন, ‘বিজেপির কথা শুনে কেউ ঝামেলা করবেন না, তাহলে গরু পেটানোর মতো পেটান।’ বিজেপি সম্বন্ধে তিনি আরও বলেন, ‘পশ্চিমবঙ্গে কয়েকটা ছাগল পাগল আছে, ওদের কথা শুনে লাভ কি!’
JNU সম্বন্ধে সোজাসাপ্টা ভাষায় তিনি বলেন, ‘JNU এ করেছে, ক্ষমতা থাকলে এখানে করুক, সুটিয়ে লাল করে দেবো।’
বীরভূমে বসে খোদ নরেন্দ্র মোদী সম্বন্ধে কিছু বলতে তাঁর দ্বিধা হয়না, সরাসরি বলেছেন, ‘একটা অপদার্থ প্রধানমন্ত্রী। ২০ বার চিন গেছে। চিনের দালাল!’
বর্তমান সময়ে তৃণমূলের দলীয় সংগঠনে যখন অন্য জেলাগুলিতে নানা রাজনৈতিক অস্থিরতা, ভাঙন দেখা যাচ্ছে তখন বীরভূমের কেষ্টদা একা হাতে পাঁচন দিয়েই দলীয় সংগঠন শক্ত হাতে ধরে রেখেছেন। দল চালাচ্ছে স্বমহিমায়। আর বর্তমান মুহূর্তেও হুঁশিয়ারি দিয়ে দলীয় কর্মীদের নিদান দিয়েছেন, ‘ঠেঙিয়ে পগাড় পার করে দেওয়ার।’