নিজস্ব প্রতিবেদন : সোমবার ছিল নন্দীগ্রামে তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সভা। শুভেন্দু অধিকারীর বিজেপিতে যোগদানের পর এই প্রথম নন্দীগ্রামে পা রাখলেন তিনি। আর এই সভা থেকে নির্বাচনের আগে বড় চমক দিলেন তিনি। নন্দীগ্রাম বিধানসভায় তিনি নিজেই প্রার্থী হিসেবে অংশগ্রহণ করবেন তা জানিয়ে দিলেন।
মূলত শুভেন্দু অধিকারীকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেওয়ার জন্যই এই ঘোষণা বলে মনে করছেন রাজনৈতিক মহলের বিশেষজ্ঞরা। কারণ এই বিধানসভা কেন্দ্র থেকেই ২০১৬ সালে বিশাল ভোটের ব্যবধানে জয়লাভ করেছিলেন প্রাক্তন পরিবহনমন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারী।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তব্য রাখার সময় বলেন, “এবারে নন্দীগ্রামে এমন কাউকে প্রার্থী করব ভাবছি যে আপনাদের কাছে পড়ে থেকে আপনাদের কাজ করবে। ভালো কাউকেই প্রার্থী করবো। ভাবছিলাম আমি নিজেই যদি দাঁড়াই তাহলে কেমন হয়?”
এর পরেই তিনি নন্দীগ্রামের প্রাকৃতিক বিবরণ নিয়ে বলেন, “একটু গ্রামের জায়গা, আমার মনের জায়গা। আমি হয়তো ভোটের আগে বেশি আসতে পারবো না। আমাকে ২৯৪ আসনেই লড়াই করতে হবে। আপনারাই সব করে দেবেন। ভোটের পরে যা করার করবো। নন্দীগ্রামের সাথে আমার আত্মার টান। আমার জন্য লাকি নন্দীগ্রাম।”
তবে এর পরেই তিনি স্পষ্ট করে জানান প্রার্থী হওয়ার বিষয়ে। বলেন, “আমি আমার দলের রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সীকে বলব যেন আমার নামটা নন্দীগ্রাম থেকে প্রার্থী হিসেবে রাখে। আমি নন্দীগ্রামের মানুষদের জন্য কাজ করতে চাই।”
তবে নন্দীগ্রাম থেকে প্রার্থী হলেও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ভবানীপুর কেন্দ্রও ছাড়বেন না। তিনি জানিয়েছেন, “ভবানীপুর আমার বোন হলে, নন্দীগ্রাম আমার মেজো বোন। পারলে দুটো আসনেই লড়বো। সুব্রত বক্সীকে অনুরোধ করবো দুটো জায়গাতেই আমার নামটা দিয়ে দেওয়ার জন্য।”
অর্থাৎ মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনে তিনি ভবানীপুর এবং নন্দীগ্রাম এই দুটি বিধানসভা কেন্দ্র থেকে প্রার্থী হিসেবে লড়াইয়ে নামতে চলেছেন। এখন দেখে নেওয়া যাক ২০১৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ভবানীপুর কেন্দ্র থেকে কত শতাংশ ভোট পেয়ে জিতেছিলেন। আর এই নন্দীগ্রাম কেন্দ্রে যেহেতু আগের বিধানসভার প্রার্থী ছিলেন বর্তমান বিজেপি নেতা শুভেন্দু অধিকারী, সেখানেই তিনি কত শতাংশ ভোট পেয়ে জয়লাভ করেছিলেন।
ভবানীপুর বিধানসভা কেন্দ্রে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ২০১৬ সালে জয়লাভ করেছিলেন ৪৮.৫ শতাংশ ভোট পেয়ে। মোট ভোট পেয়েছিলেন ৬৫৫২০। দ্বিতীয় স্থানে ছিলেন দীপা দাশমুন্সি। প্রাপ্ত ভোটের সংখ্যা ছিল ৪০২১৯। অর্থাৎ মমতা ব্যানার্জি এখানে ২৫৩০২ ভোটে জয়লাভ করেছিলেন।
ওই বছর নন্দীগ্রাম বিধানসভা কেন্দ্রে তৃণমূলের হয়ে লড়াই করেছিলেন শুভেন্দু অধিকারী। এখানে শুভেন্দু অধিকারী জয়লাভ করেছিলেন ৬৭.২% ভোট পেয়ে। তার মোট প্রাপ্ত ভোটের সংখ্যা ছিল ১৩৪৬২৩। দ্বিতীয় স্থানে ছিলেন সিপিআইএমের আব্দুল কবির শেখ। তার প্রাপ্ত ভোট ছিল ৫৩৩৯৩। অর্থাৎ শুভেন্দু অধিকারী এখানে ৮১২৩০ ভোটে জয়লাভ করেছিলেন।
তবে বর্তমানে রাজনৈতিক সমীকরণ সম্পূর্ণ বদলে গেছে। ভূমিপুত্র শুভেন্দু অধিকারী এখন গেরুয়া শিবিরের অন্যতম নেতা। এই জায়গায় নন্দীগ্রামে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রার্থী হলে শুভেন্দু অধিকারী কোথায় প্রার্থী হন তাই এখন দেখার। তিনি কি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করে নন্দীগ্রামে ভোটে দাঁড়াবেন? নাকি অন্য কোথাও? আর যদি দুজনেই একই জায়গায় প্রার্থী হন সেক্ষেত্রে কে শেষ হাসি হাসবে তার দিকে তাকিয়ে রাজ্যের বাসিন্দারা।