নিজস্ব প্রতিবেদন : সোশ্যাল মিডিয়ায় মাঝে মধ্যেই এমনকিছু অনুপ্রেরণাদায়ী ভিডিও ভাইরাল হয় যেগুলি দেখে প্রতিটি মানুষ অনুপ্রাণিত হন। কিছু ভিডিওতে দেখা যায় যে, অসুস্থ বাবা মায়ের সেবা করবার জন্য ছোট্ট ছেলে রাস্তায় রাস্তায় জিনিস ফেরি করে বেড়াচ্ছে, আবার কখনো কিছু ভিডিওতে সন্তানকে বড় করার জন্য বাবা-মায়ের আত্মত্যাগ চোখে পড়ে। সম্প্রতি যে ভিডিওটি ভাইরাল হয়েছে সেখানে সন্তানের প্রতি বাবা মায়ের দায়িত্ববোধের স্ফূরণ ঘটেছে।
অনেক সময়ই দেখা যায় যে, অভাবের সংসারে অন্নসংস্থান করার জন্য স্বামী-স্ত্রী দুজনকেই কাজ করতে হয়, সন্তানকে সেই মুহূর্তে দেখাশোনা কে করবেন এই নিয়ে একটি জটিলতার সৃষ্টি হয়। যে রকমটা হয়েছিল চীনের বাসিন্দা লি এর ক্ষেত্রে। তবে লি খুব সুন্দরভাবে এই সমস্যার সমাধান করেছেন আর একই সাথে নিজের কাজ ও সন্তানের প্রতি দায়িত্ববোধ এর নজির তৈরি করেছেন।
একটি ছোট বাড়িতে ভাড়া থাকেন তারা, নুন আনতে পান্তা ফুরানোর সংসারে স্বামী-স্ত্রী দুজনকেই কাজ করতে হয়। তাই দুজনে মিলেই মেয়ের দেখাশোনা করার সময় ভাগ করে নিয়েছেন। সকালের দিকে মেয়ের যত্ন লি নেন আর সন্ধ্যায় মেয়েকে সামলান লি এর স্ত্রী।
ডেলিভারি বয়ের কাজ করেন লি, খাবার ডেলিভারি করার সময় ২ বছরের মেয়েকে নিয়েই কাজ করতে বেরিয়ে যান তিনি। ২ বছরের মেয়েকে নিজের সঙ্গে শক্ত করে বেঁধে নিয়ে বাইকে চেপেই কাজ করেন তিনি, সেই সাথে মেয়ের দিকে নজরও রাখেন। ডেলিভারি বক্সের সাথে সন্তানকে নিয়ে লির ডেলিভারি কাজ করার এই ভিডিও South China morning post এর টুইটার অ্যাকাউন্ট থেকে পোস্ট করা হয় আর মুহূর্তের মধ্যেই সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়ে। ৮০ হাজারেরও বেশি মানুষ দেখেছেন এই ভিডিওটি।
লি-এর কথায়, “মেয়ের বয়স যখন ছয় মাস তখন থেকেই বাইকে করে মেয়েকে নিয়ে ঘুরে বেড়ান তিনি। প্রথম প্রথম মেয়েকে ডেলিভারি বাক্সের উপর বসিয়ে দিতে একটু অসুবিধা হতো। তবে পরের দিকে অভ্যাস হয়ে গেছে।”
লি এর কথায়, “মেয়েকে সাথে নিয়ে কাজ করবার জন্য সবসময় একটি ছোট্ট গদি, দুধ খাওয়ানোর বোতলও ডায়াপার সাথে রাখাই থাকে।”
ছোট্ট মেয়েকে সাথে নিয়ে কাজের প্রসঙ্গে লি আরও বলেছেন, “মেয়েকে সাথে নিয়ে কাজ করার ক্ষেত্রে কাজের খুব একটা অসুবিধা হয় না। কারণ ডেলিভারির কাজের সময় খুব একটা জ্বালায় না মেয়ে। বরং মেয়ে সঙ্গে থাকলে ক্লান্তি দূর হয়ে যায়। ছোট্ট মেয়ের সঙ্গ,হাসি মুখই উজ্জীবিত করে তোলে।” বাবা মেয়ে এই ভাবেই যেন হয়ে ওঠেন সহযোদ্ধা, দুজনে মিলেই এই কাজটাকে উপভোগ করেন।
সন্তানকে সাথে নিয়ে ডেলিভারি বয়ের কাজ করা, রাস্তাঘাটে দ্রুতগতিতে বেরোনো এর মধ্যে একটা ঝুঁকি তো থেকেই যায়। এই কারণে কোথাও না কোথাও কিছুটা অপরাধবোধও কাজ করে তার মধ্যে, কিন্তু উপায় নেই অভাব বড় বালাই! তবে এই অভাব-অনটনের মধ্যেই শান্তি খুঁজে পেয়েছেন তারা। লি এর কথায়, “অল্পতেই ভালো আছে আমরা। সত্যিকথা বলতে সুখী থাকার জন্য খুব একটা অর্থের প্রয়োজন নেই।”
This delivery courier has the cutest colleague: his two-year-old daughter. pic.twitter.com/EYTQlVIrzL
— South China Morning Post (@SCMPNews) March 29, 2021
[aaroporuntag]
সন্তানকে মানুষের মতো মানুষ করার লক্ষ্যে এখন এগিয়ে চলেছেন এই দম্পতি আর এই লড়াইয়ে তাদের ছোট্ট মেয়েও শামিল হয়ে গেছে। লি এর ডেলিভারি করার সময় কার সেই ভিডিও দেখে তাই বাকরুদ্ধ হয়ে গিয়েছেন নেটিজেনরা।