নিজস্ব প্রতিবেদন : গত সোমবার পূর্ব-মধ্য বঙ্গোপসাগর জন্ম নেওয়ার পর ঘূর্ণিঝড় ইয়াস-এর পরমায়ু প্রায় শেষের দিকে। ওড়িশায় এই ঘূর্ণিঝড় আছড়ে পড়ার পর তা ধীরে ধীরে ঝাড়খণ্ডের দিকে এগিয়ে চলেছে। ঝাড়খন্ডে প্রবেশ করার সাথে সাথেই এই ঘূর্ণিঝড় শক্তি হারাবে এবং গভীর নিম্নচাপে পরিণত হবে বলেই পূর্বাভাস হাওয়া অফিসের।
সদ্য বঙ্গোপসাগরে তৈরি হওয়া এই ঘূর্ণিঝড়ের নাম নিয়ে বাংলায় একাধিক বিতর্ক তৈরি হয়। কেউ কেউ এই ঘূর্ণিঝড়কে ‘যশ’ নামে ডাকলেও আদতে এর নাম হল ‘ইয়াস’। এই শব্দটি আদতে ফারসি শব্দ। এই ঘূর্ণিঝড়ের নামকরণ করেছে ওমান। ‘ইয়াস’, এই শব্দটির একাধিক অর্থ রয়েছে। একটি অর্থ হল ‘মরিয়া’। অন্য যে অর্থ রয়েছে তা হলো ‘হতাশা’ বা ‘দুঃখ’। আবার অনেকে এই শব্দের অর্থ জুঁই ফুলের মতো সাদা অথবা ফুলের গাছ কেউ বুঝে থাকেন।
সারা বিশ্বজুড়ে ১১টি সংস্থা রয়েছে যারা ঘূর্ণিঝড়ের নামকরণ করে থাকে। মূলত যে মহাসাগরে ঘূর্ণিঝড় তৈরি হচ্ছে সেই মহাসাগরীয় এলাকায় যে সকল দেশগুলি থেকে থাকে তারা এই নামকরণ করে থাকে। ঘূর্ণিঝড়ের নামকরণের পরিপ্রেক্ষিতে সনাক্ত করা এবং সতর্কতার ক্ষেত্রে অসুবিধা হয় না। ওয়ার্ল্ড মেটেরোলজিক্যাল অর্গানাইজেশন ও ইউনাইটেড নেশনস ইকোনমিত অ্যান্ড সোশ্যাল কমিশন ফর এশিয়ার সদস্য দেশগুলি এই ঘূর্ণিঝড়ের নামকরণ করে থাকে।
২০০৪ সাল থেকে বঙ্গোপসাগর এবং আরব সাগরে তৈরি হওয়া ঘূর্ণিঝড়গুলির নামকরণ করে আসছে বাংলাদেশ, ভারত, ইরান, মালদ্বীপ, মায়ানমর, ওমান, পাকিস্তান, কাতার, সৌদি আরব, শ্রীলঙ্কা, থাইল্যান্ড, সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং ইয়েমেন। ২০০৪ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত আটটি দেশ আটটি করে ৬৪টি ঘূর্ণিঝড়ের নামের তালিকা প্রকাশ করেছিল। আর সেই তালিকায় শেষ নাম ছিল আম্ফান। এরপর নতুন করে তালিকা প্রকাশ করা হয়।
নতুন করে তালিকা প্রকাশ করার ক্ষেত্রে ১৩টি দেশ ১৬৯টি ঘূর্ণিঝড়ের নামকরণ করে। বঙ্গোপসাগর, আরব সাগর এবং উত্তর ভারত মহাসাগরে আগামী দিনে যে সকল ঘূর্ণিঝড় তৈরি হবে তার নাম এই ১৬৯টি নামের তালিকা থেকে পরপর বেছে নেওয়া হবে। যার মধ্যে ইতিমধ্যেই তৈরি হওয়া ঘূর্ণিঝড়গুলি হল নিসর্গ, গতি, নিভার, বুরেভি, তাওকতে এবং ইয়াস।
মোট ১৬৯টি ঘূর্ণিঝড়ের নাম
বাংলাদেশ : নিসর্গ, বিপর্যয়, অর্ণব, উপকূল, বর্ষণ, রজনী, নিশীথ, ঊর্মি, মেঘলা, সমীরণ, প্রতিকূল, সরবর, মহানিশা।
ভারত : গতি, তেজ, মুরাসু, আগ, ভায়ুম, ঝড়, প্রবাহ, নীড়, প্রভানজান, ঘূর্ণি, আমবুদ, জালাদি, ভিগা।
ইরান : নিভার, হামুন, আগভান, সিপান্দ, বুরান, আনাহিতা, আজআর, পোয়ান, আরশাম, হেনজামি, সাভাস, তাহামতান, তুফান।
মালদ্বীপ : বুরেভি, মিদহিল, কানি, ওডি, কিনাউ, এন্ধেরি, রিয়াউ, গুরুভা, কুবাংগি, হোরাংগু, থুনডি, ফানা।
মায়নমার : তাওকতে, মিগজায়ুম, নাগামান, কাজাথি, যাবাগজি, ইউয়ুম, মউইহু, কাউই, পিংকু, জিনগাউন, লিনইওনি,কাইকান, বাউপা।
ওমান : ইয়াস, রিমাল, সাইল, নাসিম, মুথন, সাদিম, দিমা, মানজর, রুকাম, ওয়াতাদ, আল-জারয, রাবাব, রাদ।
পাকিস্তান : গুলাব, আসনা, সাহাব, আফসান, মানাহিল, সুজানা, পারওয়ায, জান্নাতা, সারসার, বাদবান, সাররাব, গুলনার, ওয়াসেক।
কাতার : শাহীন, ডানা, লুলু, মউজ, সুহাইল, সাদাফ, রিম, রায়হান, আনবার, ওউদ, বাহার, সাফ, ফানার।
সৌদি আরব : জাওয়াদ, ফেনগাল, ঘাজির, আসিফ, সিদরাহ, হারিদ, ফাইদ, কাসির, নাখিল, হাবুব, বারেক, আরিম, ওয়াবিল।
শ্রীলঙ্কা : অশনি, শক্তি, জিগুম, গগনা, ভারামভা, গাজানা, নিবা, নিনাদা, ভিদুলি, ওঝা, সালিথা, রিভি, রুদু।
থাইল্যান্ড : সিতারাং, মনথা, থিয়ানুট, বুলান, ফুতালা, আইয়ারা, সামিংগ, কারইসন, মাতচা, মাহিংসা, ফারিওয়া, আাসুরি, থারা।
আরব আমিরাত : মানদউস, সেনইয়ার, আফুর, নাহ-হাম, কুফফাল, দামান, দিম, গারগুর, খুব, দিগল, আথমাদ, বুম, সাফার।
ইয়েমেন : মোখা, দিতওয়াহ, দিকসাম, সিরা, বাকহুর, ঘাওয়েযি, হাউফ, বালহাফ, ব্রম, শুকরা, ফারতাক, দারসাহ, সামহাহ।
[aaroporuntag]
আসতে চলা পরবর্তী ৭টি ঘূর্ণিঝড়ের নাম
১) গুলাব : নামকরণ করেছে পাকিস্তান।
২) শাহীন : কাতার এই নাম রেখেছে।
৩) জওয়াদ : সৌদি আরবের রাখা নাম।
৪) অশনি : নামকরণ করেছে শ্রীলঙ্কা।
৫) সিতরং : নাম রেখেছে থাইল্যান্ড।
৬) ম্যানডৌস : সংযুক্ত আরব আমিরশাহী এই নামকরণ করেছে।
৭) মোচা : ইয়েমেনের রাখা এই নাম।