নিজস্ব প্রতিবেদন : খাতায়-কলমে বিজেপি বিধায়ক। তবে দলবদলের পর এখন তৃণমূল নেতা মুকুল রায় গত শুক্রবার তৃণমূল নেতা-কর্মীদের সামনেই সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে বেফাঁস মন্তব্য করেন। তিনি সাংবাদিকদের মুখোমুখি হলে উপনির্বাচনের প্রশ্ন উঠলে তার মুখ থেকে শোনা যায়, “দেখা যাক উপনির্বাচন হোক এবং উপনির্বাচনে ভারতীয় জনতা পার্টির পক্ষ থেকে আমি বলতে পারি তৃণমূল কংগ্রেস পর্যুদস্ত হবে এবং এখানে, কৃষ্ণনগরে ভারতীয় জনতা পার্টি তার স্বমহিমায় প্রতিষ্ঠা করবে। নিজের জায়গায় নিজের অবস্থানে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করবে। তৃণমূল কংগ্রেস হেরে যাবে এখানে।”
এই ঘটনা সামনে আসতেই শোরগোল পড়ে যায় রাজ্য রাজনীতিতে। স্বাভাবিকভাবেই এই ঘটনা অস্বস্তিতে ফেলে শাসকদল তৃণমূলকে। সঙ্গত কারণেই বিভিন্ন মহল থেকে প্রশ্ন আসতে শুরু করেছে কেন মুকুল রায় এহেন মন্তব্য করে ফেললেন। আর এমন মন্তব্যের সেই কারণই প্রকাশ্যে এলো।
মুকুল রায়ের ঘনিষ্ঠ মহল মুকুল রায়ের এমন অসংলগ্নতার কারণ হিসাবে মনে করছেন, ‘বয়স বাড়ছে’। অন্যদিকে মুকুল রায়ের পুত্র শুভ্রাংশু রায় একটি সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, “বাবার অনেক কথায় মনে থাকছে না। পুরনো কথা মনে করতে পারছেন না। এমনকি সাম্প্রতিক বেশ কিছু কথা হঠাৎ হঠাৎ ভুলে যাচ্ছেন। তৎক্ষণাৎ আবার সেসব সম্পর্কে জ্ঞান আসছে।” অর্থাৎ শরীরে-মনে বিধ্বস্ত মুকুল রায় সামগ্রিক চাপটা নিতে পারছেন না।
পাশাপাশি শুভ্রাংশু রায় এটাও জানিয়েছেন, “মা চলে যাওয়ার পর বাবা সেই ধাক্কা সামলাতে পারছেন না। সোডিয়াম পটাশিয়ামের সমস্যা রয়েছে। এ নিয়ে চিকিৎসাও চলছে। যে কারণে বর্তমানে বাবার কোনো কথাই ধরা উচিত নয়। আশা করি বাবার অনুরাগীরা এই কঠিন সময়ে বাবার পাশেই থাকবেন।”
গত বিধানসভা নির্বাচন শেষ হওয়ার পর থেকেই মুকুল রায়ের জীবনে নাটকীয় পরিবর্তন ঘটতে শুরু করে। ভোটের পরেই তিনি এবং তার স্ত্রী দুজনেই করোনা আক্রান্ত হন। করোনা আক্রান্ত হয়ে মুকুল রায়ের স্ত্রী দীর্ঘ লড়াইয়ের পর অবশেষে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন। অন্যদিকে রাজনৈতিক ক্ষেত্রেও বিজেপির সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি পদ এবং প্রথমবার ভোটে জিতে বিজেপি ত্যাগ করে পুরনো দল তৃণমূলে ফিরে আসেন।
এসবের মধ্যেই তাকে নিয়ে ক্রমবর্ধমান বিতর্ক চলতে থাকে বঙ্গ রাজনীতিতে। মুকুল রায় তৃণমূলে নাম লেখালেও খাতায়-কলমে বিজেপির বিধায়ক থাকার পাশাপাশি তাকেই করা হয় বিধানসভার পিএসসি চেয়ারম্যান। এ নিয়ে একাধিকবার নানান জলঘোলা হয়েছে। তবে এই সকল জলঘোলার মধ্যে সম্প্রতি তৃণমূল থেকে তৃণমূলেরই এমন পরাজয়ের ভবিষ্যদ্বাণী বিতর্ককে আরও বাড়িয়ে তুলেছে। পাশাপাশি তার রাজনৈতিক ভবিষ্যত নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন রাজনৈতিক মহলের একাংশ।