মমতার সঙ্গে মুখ দেখাদেখি বন্ধ হয়েছিল সুব্রতর, তাতেও করে দেখিয়েছিলেন মুখোপাধ্যায়

Shyamali Das

Published on:

Advertisements

নিজস্ব প্রতিবেদন : রাজ্যে তখন চলছে বাম শাসন। তবে এই বাম শাসনের মাঝেই ২০০০ সালে কলকাতা পৌরনিগমের ক্ষমতা দখল করতে সক্ষম হয়েছিল তৃণমূল। তৃণমূল কলকাতা পৌরনিগমের ক্ষমতায় আসতে মেয়র হন সুব্রত মুখোপাধ্যায় (Subrata Mukhopadhyay)। তবে মেয়র হওয়ার পরে তৃণমূলের সঙ্গে তার দূরত্ব তৈরি হয়। দূরত্ব এতটাই তৈরি হয়েছিল যে, মমতা এবং সুব্রতর মুখ দেখাদেখি একপ্রকার বন্ধ হয়ে গিয়েছিল।

Advertisements

কলকাতার মেয়র পদে বসার পর সুব্রত মুখোপাধ্যায় রোজ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Mamata Bandopadhyay) বাড়ি যেতেন। দূরত্ব তৈরি হওয়ার পর সেটাও বন্ধ হয়ে যায়। তবে এই বিষয়টি নিয়ে প্রকাশ্যে কোনদিন মুখ খোলেননি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। অন্যদিকে এসবের মাঝেই সুব্রত মুখোপাধ্যায় মন্তব্য করেছিলেন, ‘আমি যদি মেয়র হতে না পারি, কেউ হতে পারবে না।’

Advertisements

প্রথমে এই বিষয়টি কেউ টের না পেলেও ২০০৫ সালে সুব্রত মুখোপাধ্যায় নিজস্ব মঞ্চ তৈরি করেন। এরপর কংগ্রেসের সঙ্গে জোট করে ভোটের ময়দানে নেমে পড়েছিলেন তিনি। ২০০৬ সালে পৌরসভা নির্বাচনের সময় সুব্রত মুখোপাধ্যায় নিজের ৮৭ নম্বর ওয়ার্ড থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। সেই সময় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে ভোটের প্রচারে নেমেছিলেন। তৃণমূলের হয়ে ওই কেন্দ্রে প্রার্থী হয়েছিলেন শোভন দেব চট্টোপাধ্যায় (Sovan Deb Chattopadhyay)।

Advertisements

ভোটের প্রচারে গিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছিলেন, “শোভনদেব হেরে যাওয়া মানে আমি হেরে যাওয়া। তাই এই অঞ্চলের শুভবুদ্ধিসম্পন্ন নাগরিকদের কাছে আমার অনুরোধ, বিশ্বাসঘাতককে ভোট দেবেন না। মীরজাফরকে ভোট দেবেন না।, ভোট দেবেন শোভনদেবকে।” এর পাল্টা হিসেবে সুব্রত মুখোপাধ্যায় বলেছিলেন, “যিনি কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূল তৈরি করেছিলেন, তিনি সিরাজদৌল্লা। আর আমি হয়ে গেলাম মীরজাফর!”

এই ভোটে শোভন দেব চট্টোপাধ্যায়ের হয়ে দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রচার শেষমেষ কাজে আসেনি। ততদিনে কলকাতা পৌরনিগমের অন্যতম সেরা মেয়র হিসেবে বিবেচিত হওয়া সুব্রত মুখোপাধ্যায়ই ভোট গণনার দিন শেষ হাসি হাসেন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যেখানে এই নির্বাচনে বলেছিলেন, ‘শোভনদেব হেরে যাওয়া মানে আমি হেরে যাওয়া’, সেখানেও করে দেখিয়েছিলেন সুব্রত মুখোপাধ্যায়। যদিও পরে আবার এই সকল বিবাদ ভুলে ফের একে অপরের কাছে আসেন মমতা ও সুব্রত।

সদ্য বিধানসভা ভোটে জয়লাভ করার পর সিবিআই রাজ্যের এই মন্ত্রীকে গ্রেপ্তার করলে ছুটে যেতে দেখা গিয়েছিল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেই। গতকাল অর্থাৎ বৃহস্পতিবার রাতে সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের প্রয়াণে স্তব্ধ হয়ে পড়েন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, “জীবনে অনেক দুর্যোগ দেখেছি। কিন্তু সুব্রতদার মৃত্যুটা আমার কাছে ভীষণ-ভীষণ বড় দুর্যোগ। সুব্রতদার মতো মানুষ, এত হাসিখুশি মানুষ, এত কর্মঠ মানুষ, পার্টি অন্ত প্রাণ, বিধানসভা অন্ত প্রাণ আর হবে কিনা, সন্দেহ আছে।”

Advertisements