নিজস্ব প্রতিবেদন : সদ্য প্রয়াত পঞ্চায়েত মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায় (Subrata Mukhopadhyay) ছিলেন সদাহাস্য ব্যক্তি। তিনি ছিলেন বাংলার কনিষ্ঠতম মন্ত্রী। তবে তিনি কখনও কখনও এমন কিছু কর্মকান্ড করেছেন যাতে বিচলিত হয়ে পড়েছিলেন অন্যান্যরা। তিনি বিধানসভায় হাজির অন্যান্য বিধায়ক, মন্ত্রী ও অধ্যক্ষকে বিচলিত করেছিলেন বিধানসভা কক্ষে ‘চোলিকে পিছে কেয়া হে’ গান বাজিয়ে। তারপর কি হয়েছিল জানেন!
সেদিনের সেই বিচিত্র পরিস্থিতি এখনো হয়তো অনেকেই ভুলতে পারবেন না। বিধানসভা কক্ষে তারস্বরে বাড়ছে হিন্দি গান ‘চোলিকে পিছে কেয়া হে’। কিন্তু কোথায় থেকে তা বাজছে তা কেউ ঠাওর করতে পারেননি। তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসু নিজের স্বভাব সিদ্ধ ভঙ্গিতেই নিজের আসনে বসে থাকলেও স্পিকার হাসিম আব্দুল হালিম রীতিমতো বিচলিত হন।
বিধান সভা কক্ষে তারস্বরে বাজা এই গানে যখন তা জলসার ময়দান রূপ নিয়েছে তখন স্পিকার কি করবেন বুঝে উঠতে না পেরে অবশেষে মার্শালকে ডাকেন। মার্শালকে আদেশ দেন কোথায় থেকে এই গান বাজছে তা খুঁজে বের করতে। কিন্তু মার্শাল টের পাচ্ছিলেন না কোথায় থেকে এমন গান বাজছে। এমন সময় সিপিআইএমের এক বিধায়ক বলে উঠেন, “স্যার, স্যার, গান বাজছে সুব্রত বাবুর চাদরের ভিতর থেকে।”
সুব্রত বাবু তখন বসতেন বিরোধী বেঞ্চের প্রথম সারিতে। সেখানে গিয়ে মার্শাল আবিষ্কার করেন, সিপিআইএমের ওই বিধায়কের কথাই সত্যি। তারপর তিনি সুব্রতবাবুকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘স্যার, চাদরের ভেতর থেকে ওই যন্ত্রটি বের করে দিন তা নাহলে বাধ্য হবো জোর করে বের করে নিতে।’ সুব্রত বাবু তখন তার চাদর সরাতেই দেখা যায় তার বাঁ হাতের বগলে রয়েছে একটি টেপ রেকর্ডার। মার্শাল টেপ রেকর্ডারটি নিয়ে এসে জমা দেন স্পিকারের কাছে।
স্পিকার সেই টেপ রেকর্ডারটি হাতে পেয়ে বিধান সভা কক্ষে তা বেআইনি বলে ঘোষণা করেন এবং বাজেয়াপ্ত করেন। স্পিকারের সেই সিদ্ধান্তকে বেঞ্চ চাপড়ে সমর্থন জানান বাম বিধায়করা। তবে এই ঘটনায় ওই টেপ রেকর্ডারটি বাজেয়াপ্ত ঘোষণা হওয়ায় ওয়ালে নামেন কংগ্রেস বিধায়করা। ঘটনাকে নিয়ে বিধানসভা কক্ষে শুরু হয় শোরগোল।
কিন্তু প্রশ্ন হলো কেন সুব্রত মুখোপাধ্যায় বিধান সভা কক্ষে এমন ছেলে মানুষের মত হাবভাব করেছিলেন। আসলে তিনি কোন ছেলেমানুষি করেননি, তিনি ছিলেন পোড়খাওয়া রাজনীতিবিদ। যে কারণে একটি ঘটনার প্রতিবাদ করতেই তিনি এমনটা করেছিলেন। সেই ঘটনাটি হল বিধান সভা কক্ষে ঘটে যাওয়া এই ঘটনার দু’দিন আগেই সল্টলেক স্টেডিয়ামে তৎকালীন ক্রীড়া ও যুব কল্যাণ মন্ত্রী সুভাষ চক্রবর্তীর উদ্যোগে আয়োজিত হয়েছিল একটি জলসা। সেই জলসা যেহেতু সরকারি উদ্যোগে আয়োজিত হয়েছিল সেই কারণে রাজ্যের সংস্কৃতি জগতের অনেকেই আপত্তি তুলেছিলেন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে সুব্রত মুখোপাধ্যায় বিধান সভা কক্ষে এমন অবাক করা কান্ড ঘটিয়েছিলেন।
বিধান সভা কক্ষে সুব্রত মুখোপাধ্যায় যে টেপ রেকর্ডারটি বাজিয়েছিলেন সেটি তিনি উপহার পেয়েছিলেন বিদেশ সফরে। এই টেপ রেকর্ডারটি বাজেয়াপ্ত ঘোষণার পর তিনি স্পিকারকে অনুরোধ করেন তা ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য। তবে স্পিকার সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের বারবার অনুরোধ সত্ত্বেও তা ফিরিয়ে দিতে রাজি হননি। পরে এই কথাটি কানে যায় মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসুর। তিনি তা শুনে স্পিকারকে বলেন, “যা হওয়ায় তা হয়েছে। ওই টেপ রেকর্ডারটি কোন দোষ করেনি। এটি সুব্রত বাবুর উপহার পাওয়া। ওটি ওকে ফিরিয়ে দিন।” জ্যোতি বসুর সেই কথা মত স্পিকার হালিম তা পরে সুব্রত মুখোপাধ্যায়কে ফিরিয়ে দেন।