শর্মিষ্ঠা চ্যাটার্জী : গোল্ডেন ম্যানের প্রয়াণে ফিরে দেখা তাঁর সঙ্গীত জীবনের ফেলে আসা দিনগুলিকে। বাপি লাহিড়ীর গাওয়া গান মানেই সে এক অন্যরকম ব্যাপার। চিরকালই তাঁর গান মানেই বেশ একটা উদ্দাম নাচের ছন্দ আসবেই।
ডিস্কো ডান্সার, ডান্স ডান্স ছবির গান এখনও সমানভাবে মাতিয়ে দিতে পারে। আশির দশকে বাপিদার গলায় ছিল জাদু। বাংলার ছবির জগতে, অমরপ্রেম, ছবির সেই বিখ্যাত গান,’চিরদিনই তুমি যে আমার’, এখনও যেনো প্রেমের গানের তালিকায় প্রথমের দিকেই রয়েছে।
তবে এমন বিখ্যাত শিল্পী একবার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন গানের জগৎ থেকে বিদায় নেবেন কিন্তু এর পেছনে ঠিক কি কারণ ছিল? গানের জগতের আর এক স্বনামধন্য ব্যক্তিত্ব কিশোর কুমারের প্রয়াণের পরই এমন কথা ভেবেছিলেন বাপিদা।
কিশোরকুমার কে অত্যন্ত ভালোবাসতেন বাপি লাহিড়ী সেইসঙ্গে কিশোর কুমার সেইসময় বহু গান বাপিদার সুরে গেয়েছিলেন এই কারণে সম্পর্ক এত ঘনিষ্ঠ ছিল যে কিশোর কুমারের প্রয়াণের পর অত্যন্ত ভেঙে পড়েছিলেন বাপি লাহিড়ী। শোকে মুহ্যমান হয়ে ভেবেছিলেন আর কোনো গানে সুর না দেওয়ার কথা। যদিও পরবর্তীকালে অনুরাগীদের কথা চিন্তা করে সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করেন।
কলকাতা থেকে মুম্বই পাড়ি দিয়েছিলেন মাত্র উনিশ বছর বয়সে। তারপরেই ১৯৭৩ সালে ‘ননহা শিকারি ‘ছবিতে সুরকার হিসেবে তিনি তাঁর কেরিয়ার শুরু করেন। ১৯৭২ এ বাংলা ছবি দাদুতে সুর দিয়েছিলেন। প্রথম থেকে সুরের জাদুতে বেশ নজর কেড়েছিলেন বাপি লাহিড়ী।
সেই সময়ের এক অসাধ্য সাধন করে দেখিয়েছিলেন তিনি। তৎকালীন রফি ও কিশোর কুমারের মধ্যে গান নিয়ে যে প্রতিযোগিতা বজায় ছিল সেই রেষারেষি ভেঙে তিনি একসাথে দুজনকে জখমী ছবিতে গান গাইয়ে ইতিহাস রচনা করেছিলেন গানের জগতে। ৫০০ টিরও বেশি গানে সুর দিয়েছেন তিনি তাই তাঁর নাম গিনিস বুক অফ ওয়ার্ল্ডসে উঠে যায়।
সোনার গয়নার প্রতি এক অন্যরকম টান ছিল তাঁর। তাই তো তাঁকে গোল্ডেন ম্যান বলা হতো। গলায় আটটি সোনার চেন নজর কেড়ে নিত সর্বদা। গলায় একটি গণেশের লকেট ছিল। এমনকি বাপি লাহিড়ী র সোনার চেন ভালো লেগেছিল মাইকেল জ্যাকসনের ও।
একজন সমাজসেবক হিসেবেও কাজ করে গিয়েছেন তিনি। স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা জাস্টিস ফর উডোসে তাঁর অবদানের জন্য বাপি লাহিড়ীকে ‘হাউজ অফ দ্য লর্ড’ সম্মানও দেওয়া হয়েছিল। একাধারে তিনি সুরকার, গায়ক এবং সমাজসেবক ছিলেন।