পরপর দুবার কর্কট রোগের মারণ থাবার কবল এড়িয়ে মৃত্যুকে জয় করে ফিরে এসেছিলেন অভিনেত্রী ঐন্দ্রিলা। ঐন্দ্রিলা যেন সাধারণ মানুষের কাছে জীবন যুদ্ধে লড়াই করবার অনুপ্রেরণার প্রতিভু হয়ে উঠেছিলেন। মাত্র ১৬ বছর বয়সে তার শরীরে প্রথমবারের মতো কর্কট রোগের উপস্থিতি ধরা পড়ে। সেবার সুস্থ হয়ে ফিরে এলেও তার পাঁচ বছর পর আবারো তিনি সেই একই রোগের কবলে পড়েন। তবে জীবনের শেষ যুদ্ধে এসে ব্রেন স্ট্রোকের মতো মারণ রোগের সামনাসামনি হন। এবার হয়তো তার আর ফোনিক্স হয়ে ওঠা হলো না। কিন্তু মৃত্যুর সঙ্গে চোখে চোখ রেখে লড়েছেন জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত। ১লা নভেম্বর ব্রেন স্টোকে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তির পর থেকেই তার সহকর্মী, আত্মীয়, পরিজন থেকে শুরু করে প্রতিটি অনুরাগীগণেরই একই আশা ছিল এই বুঝি কোন ভালো খবর এলো। তবে সত্যিই মানুষ নিয়তির কাছে বড় অসহায়।
রবিবার দুপুর ১টা নাগাদ অভিনেত্রীর মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়তেই শোকস্তব্ধ হয়ে যায় গোটা ইন্ডাস্ট্রি সহ সোশ্যাল মিডিয়া। আজ ঐন্দ্রিলার প্রয়াণের দিনে বারবার করে উঠে আসছে কিছুদিন আগে সৌরভ গাঙ্গুলীর দাদাগিরি অনুষ্ঠানে এসে তার সেই নাচের ভিডিওটি। ঐন্দ্রিলা দাদাগিরিতে এসেছিলেন দ্বিতীয়বার ক্যান্সার সারিয়ে ওঠার কিছুদিন পর। সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে সেদিন দাদাগিরির মঞ্চে একাই সমস্ত আলো শুষে নিয়েছিলেন ঐন্দ্রিলা।
ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে বিখ্যাত গায়ক অরিজিত সিং এর গাওয়া ‘দেখো আলোয় আলো আকাশ’ গানটির সাথে দারুন ভাবে নেচে চলেছেন অভিনেত্রী। মুগ্ধ হয়ে সেই পারফরম্যান্স দেখেছিল গোটা বাংলা। নাচের প্রতিটি ছত্রে-ছত্রে ফুটে উঠেছিল তার অফুরান জীবনী শক্তি। ‘এত আনন্দ আয়োজন সবই বৃথা তোমায় ছাড়া’ গানটিতে ঐন্দ্রিলার সেই নাচ জল এনে দিয়েছিল স্টুডিওতে থাকা প্রতিটি দর্শক এবং টিভির ওপারে থাকা প্রতিটি মানুষের চোখের কোনে। যা দেখে সেদিন আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েছিলেন স্বয়ং সৌরভ গাঙ্গুলীও।
ঐন্দ্রিলাকে দেখে এবং সেদিন তার জীবনের লড়াইয়ের গল্প শুনে অভিভূত হয়ে গিয়েছিলেন লড়াইয়ের অপর এক প্রতিভু সৌরভ গাঙ্গুলী নিজেও। পোডিয়াম ছেড়ে ঐন্দ্রিলার কাছে এসে তাকে জড়িয়ে ধরেন সৌরভ। উচ্ছ্বসিত সৌরভ নিজেও সেদিন বলে ওঠেন, ‘এত আনন্দ আয়োজন সবই বৃথা তোমায় ছাড়া’। সৌরভ সেদিন আরো বলেছিলেন, “এখানে যারা আছেন, সবার আয়ু যেন তোমার লাগে।” সে আশীর্বাদ হয়তো ঐন্দ্রিলার জন্য যথেষ্ট ছিল না, কিন্তু মৃত্যুর সাথে ঐন্দ্রিলার এই অসম যুদ্ধের হার না মানা প্রয়াসকে কুর্নিশ জানিয়েছিলেন সৌরভ সহ উপস্থিত সকলেই।
শুধু আশীর্বাদই নয় সেদিন সৌরভ গাঙ্গুলী ঐন্দ্রিলার মনের একান্ত ইচ্ছাও পূরণ করেছিলেন। সাধারণত ভাব গম্ভীর সৌরভ গাঙ্গুলিকে সচরাচর ক্যামেরার সামনে নাচতে না দেখা গেলেও, ঐন্দ্রিলার সাধ পূরণে সেদিন মন খুলে নেচেছিলেন সৌরভ। বিখ্যাত গান ‘জেহনসিব’ এ সৌরভের সাথে সাথে মঞ্চে গানে বল ডান্স করেছিলেন ঐন্দ্রিলাও। বস্তুত এটাই ছিল টেলিভিশনের পর্দায় ঐন্দ্রিলার শেষ স্টেজ শো। গত ১লা নভেম্বরে ব্রেন স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হন হাওড়ার একটি বেসরকারি হাসপাতালে। গত কুড়ি দিনের মৃত্যুর সঙ্গে অসম যুদ্ধে লড়াই করে আজ মাত্র ২৪ বছর বয়সে হার মানলেন ‘হার না মানা’ ঐন্দ্রিলা। তার এই হঠাৎ চলে যাওয়ায় শোকস্তব্ধ গোটা টলিউড ইন্ডাস্ট্রি সহ তার কাছের মানুষজন ও ভক্ত, অনুরাগীগণ।