ভারতীয়রা খাবার নিয়ে নানা গবেষণা করতে কে না ভালোবাসে? তাই হয়তো দেশজুড়ে রয়েছে ভিন্ন স্বাদের খাবার। বাড়ির গৃহিনী হোক বা বড়ো রেস্তোরাঁর শেফ সকলেই চেষ্টা করেন নতুন কিছু করার। সুযোগ পেলেই আমরাও খেয়ে দেখি সেই সব পদের স্বাদ, সে গন্ধরাজ রোল, গন্ধরাজ মোমো, কাঁচা লঙ্কা রসগোল্লা হোক আর অন্য কিছুই হোক, খাবার নিয়ে না করি না আমরা কেউই।
কিন্তু ভারতবর্ষে সকলের প্রিয় এমন কিছু খাবার রয়েছে যেগুলি আমরা ভারতীয় খাবার বলেই জানি। আসলে কিন্তু এই সব খাবার গুলো এসেছে নাকি বিদেশ এসেছে। সেই তালিকায় নাকি রয়েছে ডাল-ভাত থেকে শুরু করে বাটার চিকেনও। আসুন তাহলে জেনে নিন আপনার জানা কোন কোন ভারতীয় খাবার আসলে বিদেশি।
এলাচ, গোলাপজল এবং জাফরান ও ক্ষীর দিয়ে তৈরি সোনালি গোল গোল মিষ্টি, যার নাম গুলাব জামুন।তা আসলে ভারতের খাবার নয়। এটি পারস্য থেকে যখন হানাদাররা ভারতে এসেছিল, সেই সময় তারা সঙ্গে করে নিয়ে এসেছিল। এর নামের বিশেষ অর্থ আছে, ‘গুলাব’ একটি ফার্সি শব্দ, আর ‘গুল’ অর্থ ফুল এবং ‘আব’-এর অর্থ জল। তাহলে গুলাব এর মানে দাঁড়ালো যে জলের মধ্যে গোলাপের সুগন্ধি রয়েছে। আর ক্ষীর দিয়ে তৈরি ছোট ছোট বলগুলি জামের আকারে গড়া হতো তাই এর নাম জামুন। বলা হয় আগে এই ক্ষীরের বল গুলি মধুর শরবতে ভিজিয়ে রাখা হত, তারপর উপর থেকে চিনি ছড়িয়ে দেওয়া হত। তবে বর্তমানে রসে টইটম্বুর গুলাব জামুন ভারতীয়দের যে কোনও অনুষ্ঠানে জায়গা করে নিয়েছে। এখন আবার শীতে বিয়েবাড়িতে হট গুলাবজামুনের যথেষ্ট চল বেড়েছে
গরম কেশর জিলিপির সঙ্গে রাবরির যুগলবন্দী অসাধারণ মাত্রা আনে। আবার শীতের সকালে কচুরি- তরকারির সঙ্গে কয়েকটা জিলিপি হলে সারা দিনটাই ভালো হয়ে যায়। তবে, জানেন কি এই জিলিপিও ভারতের নয়। এর আবির্ভাব হয় মধ্যপ্রাচ্যে। এটিকে আরবিতে বলা হয় ‘জালাবিয়া’ আর ফারসিতে বলা হয় ‘জিলাবিয়া’ বলা হত। পারস্যদেশ থেকে আগত আক্রমণকারীরা ভারতে আসার সময় এই বিশেষ মিষ্টান্নটি ভারতে নিয়ে আসে। আর এটি এখন গোটা ভারতে বিখ্যাত। উত্তর ভারতীয়রা এটিকে আরো খাস্তা এবং পাতলা করে দিয়েছে। আর দক্ষিণের মানুষের পছন্দ মুচমুচে অথচ মোটা।
জানেন কি ডালে ভাতে বাঙালি বলা হলেও, আমাদের রোজকার ডাল-ভাত আসলে ভারতীয় খাবার নয়। প্রতিবেশি দেশ থেকে আগত এই খাবারকে একান্ত আপন করে আত্মায় মিশিয়ে নিয়েছে ভারতীয়রা। শুনে অবাক হলেও এটাই আসল সত্যি। রোজকার ডাল-ভাতের সঙ্গে একটু টক আচার পছন্দ করেন পশ্চিমবঙ্গ বাদে বাকি ভারতীয়রা। প্রকৃতপক্ষে এই খাবারটি নেপালি বংশোদ্ভূত। এই খাবারটি উত্তর ভারতীয় জনগণের মাধ্যমে ভারতের প্রতিটি রান্নাঘরে জায়গা করে নিয়েছে।