সত্যিকারের নায়ক এই যুবক, গরিব পড়ুয়াদের পড়াতে অধ্যাপনার সঙ্গে করেন কুলিগিরী

Antara Nag

Updated on:

Advertisements

সকলেই ভাবেন নিজে ভালো একটা পেয়ে নিজেকে ও নিজের পরিবারকে সুখী রাখবেন। এর মধ্যে ভুল বা অন্যায় কিছুই নেই। কিন্তু পরিবারকে বাদ দিয়ে সাধারণ মানুষের কথা ক’জনই বা ভাবেন? তবে পৃথিবীতে ব্যতিক্রমী অনেক মানুষ রয়েছেন যারা গরীব অসহায় মানুষের কথা ভেবে অনেক কাজ করে থাকেন।

Advertisements

এমন এক ব্যক্তি হলেন ওড়িশার নাগেশু পাত্র। পেশায় তিনি একজন অধ্যাপক। দিনের বেলা এক বেসরকারি কলেজে অতিথি অধ্যাপক হিসেবে কাজ করেন তিনি। আর রাতের বেলা শুরু হয় গরীব ছেলেমেয়েদের জন্য তাঁর কোচিং সেন্টার। তবে অধ্যাপক ছাড়াও আরও একটি পরিচয় আছে তাঁর। এই কোচিং সেন্টারের খরচ যোগানোর জন্যই রাতের অন্ধকারে কুলির কাজে করেন নাগেশু। যাতে গরীব পড়ুয়ারা কোনো খরচ ছাড়াই তাঁর সেই কোচিং সেন্টারে পড়াশোনা করতে পারে।

Advertisements

ইদানীং ‘মুনলাইটিং’ বলে একটি শব্দ বেশ প্রচলিত হয়ে উঠেছে। দিনের বেলা একটি চাকরি করে, অতিরিক্ত উপার্জনের জন্য রাতের বেলা আরও একটি কাজে যুক্ত থাকাকেই এই নামে ডাকা হয়। সেই হিসেবে নাগেশুও সেটাই করছেন। তবে তফাত হল অন্যেরা করেন নিজের জন্য, আর তিনি করেন অন্যের জন্য। তিনি অতিরিক্ত উপার্জনের পথে চলেছেন এক মানবিক কারণে। বেরহামপুর রেল স্টেশনে তিনি অন্যের মোট বয়ে কুলির কাজ করে থাকেন, যাতে সেই টাকায় ওই কোচিংয়ের শিক্ষকদের মাইনে দেওয়া যায়।

Advertisements

নাগেশুর দিন শুরু হয় বেসরকারি এক কলেজে অধ্যাপনার মাধ্যমে। আর রাতে তিনি খোলা কোচিং সেন্টারে গিয়ে পড়ান। তারপর রাত গড়ালেই শিক্ষকতা, অধ্যাপনা ছেড়ে বেরহামপুর রেল স্টেশনে চলে কুলি হিসেবে কাজ করতে। আসলে কোভিডের সময় থেকে তিনি গরিব ছেলেমেয়েদের পড়ানো শুরু করেছিলেন। আর ধীরে ধীরে পড়ুয়া সংখ্যা বাড়তে থাকায় সেটি কোচিং সেন্টারের রূপ নেয়। এই মুহূর্তে তাঁর কোচিংয়ে শুধু অষ্টম থেকে দ্বাদশ শ্রেণির অসংখ্য পড়ুয়া পড়তে আসে। তাদের পড়ানোর দায়িত্ব নিয়েছেন মোট চারজন শিক্ষক। নাগেশু বেতন না নিলেও, ওই চারজনকে বেতন বাবদ মাসে ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা দিতে হয় তাকে। তাই এই অর্থ জোগাড় করতেই বেরহামপুর স্টেশনে শ্রমজীবী মানুষদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কুলির ভূমিকা পালন করেন তিনি।

তার বাড়িতে আছেন বাবা ও মা। নিজের সংসার চালনোর জন্য অতিথি অধ্যাপকের চাকরিটি করেন নাগেশু। কিন্তু অধ্যাপকের চাকরি করার পর দিনের শেষে কুলির কাজ করতে তার বিন্দু মাত্র লজ্জা লাগে না। একথা ৩১ বছরের নাগেশুই জানান। তিনি বলেন, লোকে যা বলে বলুক, আমি পড়াতে ভালবাসি। এবং ওই দরিদ্র পড়ুয়াদের পড়ানো একটি মহৎ কাজ, আর এই কাজটি আমি করে যাব।

Advertisements