রতন টাটা (Ratan Tata)-র সাধের কোম্পানি টাটা ইন্ডাস্ট্রি, নিত্য দিন বেঁচে থাকার জন্য যা যা প্রয়োজন তার যে-কোন একটা ধাপের সঙ্গে জড়িয়ে প্রবেশ করেছে আপনার জীবনে। গাড়ি হলে টাটা মোটরস (Tata motors) সঙ্গে ল্যান্ড রোভার-জাগুয়ার, ফ্লাইট হলে ভিস্তারা-এয়ার ইন্ডিয়া (Air India), হোটেল ব্যবসা হলে তাজ হোটেল (Taj), ঘড়ি হলে টাইটান (Titan), জামা-কাপড় হলে ওয়েস্ট সাইড (West Side), জুয়েলারি হলে তানিস্ক (Tanishq), চা হলে টাটা টি (Tata Tea) এমনকি নুন হলে টাটা সল্ট (Tata Salt)। এছাড়া টিসিএস (TCS), টাটা পাওয়ার (Tata Power), ভোলটাস (Voltas), টাটা স্টিলের (Tata Steel) মতন ১০০ কোম্পানি রয়েছে টাটা গ্রুপের অধীনে।
সুতরাং, এটা বলার অপেক্ষা রাখে না যে আজকের দিনে দাঁড়িয়ে টাটা গ্রুপ দেশের সর্বকালীন সফলতম সংস্থাগুলোর মধ্যে একটা। কিন্তু ভাবতে পারবেন না, এই টাটা গ্রুপ হঠাৎ করে আলাদীনের আশ্চর্য প্রদীপ হাতে পায়নি। টাটা গ্রুপের এই সুবিশাল সাম্রাজ্য তিল তিল করে গড়ে তুলতে সময় লেগেছে ২০০ বছর।
১৯৩৭ সালের ২৮ ডিসেম্বর মুম্বইতে নাভাল এবং সুনি টাটার ঘরে জন্ম। বয়স যখন ১০ বছর আলাদা হয়ে যান মা-বাবা। তাই রতন টাটাকে (Ratan Tata) দত্তক নেন নাভাজিবাই টাটা। রতন টাটার নিজের ভাই জিমি টাটা। নোয়েল টাটা তাঁর সৎ ভাই। মুম্বই এবং সিমলায় কেটেছে স্কুলজীবন। নিউ ইয়র্কের রিভারডেল কান্ট্রি স্কুলেও পড়াশোনা করেন। পরি আমেরিকার নিউ ইয়র্কের রিভারডেল কান্ট্রি স্কুল, কর্নেল ইউনিভার্সিএবং হার্ভার্ড বিজনেস স্কুল থেকে উচ্চশিক্ষা লাভ করেন।
রতন টাটা ১৯৬২ সালে কর্নেল ইউনিভার্সিটি থেকে ব্যাচেলর অফ আর্কিটেকচারে স্নাতক হন। রতন টাটা বলেন তিনি বাবার ইচ্ছেতে মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ভর্তি হয়েছিলেন। কিন্তু তিনি মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং উপভোগ করেননি কারণ তিনি সর্বদা একজন স্থপতি হতে চেয়েছিলেন। তাই তিনি ইঞ্জিনিয়ারিং ছে়ড়ে আর্কিটেকচারে ভর্তি হন। তারপর মাত্র ২৫ বছর বয়সে টাটা-য় কেরিয়ার শুরু করেন রতন টাটা। ১৯৬২ সালে ভারতে ফিরে আসার আগে আমেরিকায় জোন্স অ্যান্ড এমন্স সংস্থাতেও কাজ করেন।
টাটা গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা হলেন জামসেটজি নুসেরওয়ানজি টাটা। তিনি মুম্বাইয়ের এলফিনস্টোন কলেজে শিক্ষার পর ১৮৫৮ সালে তার বাবার রফতানি বাণিজ্য সংস্থায় প্রথম যোগ দেন। কিন্তু টাটা গ্রুপকে একটি সফল ব্যবসা থেকে একটি বিলিয়ন ডলারের সাম্রাজ্যে পরিনত করেন রতন টাটা। টাটা গ্রুপ আজ ল্যান্ড রোভার তৈরি করে। নিউ ইয়র্ক, লন্ডন এবং সিডনিতে ফাইভ স্টার হোটেল পরিচালনা করে। গভীর সমুদ্রের তলার ইন্টারনেটের তারও তৈরি করে৷
রতন টাটা একটা সময়ের পর পারিবারিক ব্যবসায় যোগ দেন এবং ১৯৯২ সালে টাটা সনস-এর চেয়ারম্যান হন। রতন টাটার নেতৃত্বে গ্রুপটি ২০০০ সালে ৪৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারে লন্ডন ভিত্তিক টেটলি টি এবং ২০০৭ সালে ১৩.১ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে ইস্পাত প্রস্তুতকারক কোরাস গ্রুপ অধিগ্রহণ করে। তিনি ২০১৮ সালে ফোর্ড মোটর কোম্পানির কাছ থেকে জাগুয়ার এবং ল্যান্ড রোভার কিনে নেন। তার নেতৃত্বে টিসিএস-এরও ব্যাপক উন্নতি হয়। এই ভাবে দেখতে দেখতে টাটা গ্রুপ পৃথিবীর অন্যতম সফল প্রতিষ্ঠান হিসেবে জায়গা করে নেয় পৃথিবীর বুকে। এভাবেই সাফল্যের একেকটা ধাপ পেরিয়ে উঠে আসতে শুরু করল টাটা গ্রুপ (TATA group)।