সারা বছর ধরে ভক্তরা অপেক্ষা করে থাকে চারধাম যাত্রা করার জন্য। চারধামের অন্যতম ধাম বদ্রীনাথ মন্দির (Badrinath temple) খুলছে বৃহস্পতিবার অর্থাৎ ২৭ এপ্রিল। এই পবিত্র ধামটিতে ভক্তদের ভিড় উপচে পরার সম্ভাবনা রয়েছে। প্রতিবছরই অসংখ্য ভক্ত দূর দূরান্ত থেকে এই পবিত্র ধাম দর্শনের জন্য যাত্রা করেন। কঠোর নিয়ম নিষ্ঠার মধ্যে মন্দিরের ভিতরের পুজো সম্পন্ন করা হলেও এখানে বাজানো হয় না শঙ্খ। এর পিছনের কারণ জানলে আপনি অবাক হবেন।
বদ্রীনাথের মন্দির (Badrinath temple) অবস্থিত উত্তরাখণ্ডের চামোলী জেলায় অলকানন্দা নদীর পাড়ে। মন্দিরটি নির্মাণের প্রমাণ পাওয়া গেছে ৭ এবং ৯ শতকে। এই পবিত্র মন্দিরের গর্ভগৃহে রয়েছে ভগবান বদ্রীর এক মিটার লম্বা শালগ্রাম মূর্তি। মনে করা হয়, এই মূর্তিটি আদিগুরু শঙ্করাচার্য চতুর্থ শতকে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। সকল ভক্তরা এখানে নিষ্ঠা সহকারে পুজো দিলেও বাজায় না শঙ্খ। এর মূলে রয়েছে তিনটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ।
প্রথম কারণ : কথিত আছে যে, প্রাচীনকালে হিমালয় রাক্ষসের উপদ্রব ছিল। সেই কারণে ঋষি-মুণিরা মন্দিরে পুজো দিতে যেতে পারতেন না। পরিস্থিতি এতটাই ভয়ংকর ছিল যে, আশ্রমের মধ্যেও ঋষি-মুণিরা ধ্যানে বসতে পারতো না। পুরানে কথিত আছে যে,এই রাক্ষসরা তাঁদের গিলে খেয়ে ফেলতেন। ঋষি অগস্থ রাক্ষসদের তাণ্ডবে অতিষ্ঠ হয়ে ভগবতী মাতার দ্বারস্থ হন। ভগবতী কুষ্মাণ্ডদেবী রূপে প্রকট হন এবং নিজের ত্রিশূল দিয়ে রাক্ষসদের নিধন করেন। এই সময় অথাপি এবং বতাপি নামে দু’টি রাক্ষস পালিয়ে যায়। অতাপি মন্দাকিনি নদীতে ঝাঁপ দেয় এবং বতাপি বদ্রীনাথের মন্দির (Badrinath temple) -এ একটি শঙ্খের ভিতর আশ্রয় নিয়েছিল। কথিত আছে যে, শঙ্খ বাজানো হলে ওই রাক্ষস শঙ্খ থেকে বেরিয়ে আসবে। তাই শাঁখ বাজানো নিষিদ্ধ বদ্রীনাথের মন্দিরে।
দ্বিতীয় কারণ : দেবী লক্ষ্মী তুলসী রূপে বদ্রীনাথ ধামে ধ্যানমগ্ন থাকেন। বিভিন্ন ধর্মীয় ব্যক্তিত্বরা বিশ্বাস করেন যে, দেবী লক্ষ্মী যখন ধ্যানমগ্ন ছিলেন তখন ভগবান বিষ্ণু শঙ্খচূর্ণ নামে এক রাক্ষসকে বধ করেছিলেন। হিন্দু ধর্মের রীতি অনুযায়ী, শুভ কাজ করার আগে শাঁখ বাজানো নিয়ম। কিন্তু, ভগবান বিষ্ণু শঙ্খচূর্ণ বধের পর শঙ্খ বাজাননি, কারণ তিনি চাননি তুলসীরূপে ধ্যানমগ্ন দেবী লক্ষ্মীর একাগ্রতা নষ্ট করতে। সেই ঘটনার জন্য আজও বদ্রীনাথ মন্দির (Badrinath temple) শঙ্খ বাজানো হয় না।
তৃতীয় কারণ : আধ্যাত্মিক কারণ বাদ দিয়েও বদ্রীনাথের মন্দিরে শাঁখ না বাজানোর মুলে একটি বৈজ্ঞানিক কারণও রয়েছে। তুষারপাতের সময় বদ্রীনাথ ধাম বরফাবৃত থাকে। বৈজ্ঞানিকরা মনে করেন, যদি তুষারপাতের সময় শঙ্খ বাজানো হয় তবে তুষারঝড় হওয়ার সম্ভাবনা থাকতে পারে। শঙ্খের প্রতিধ্বনিতে ধ্বস নামার সম্ভাবনা প্রবল তাই প্রকৃতিকে না রাগানোর জন্য বদ্রীনাথ ধামে শঙ্খ বাজানো হয় না।