Some places to go camping with friends near Kolkata in summer: এই তীব্র তাপপ্রবাহের জন্য ঘরে ও বাইরে কোথাও একফোঁটা শান্তি নেই। অসহ্য গরম কাটাতে মন বারবারই ছুটে যেতে চায় বাইরে। বাইরে মানে একেবারে শহরের বাইরে কোনো জায়গায়। এই গরমে শহর ছেড়ে কোনো নদী, পাহাড় কিংবা জঙ্গলে চলে যেতে ইচ্ছা হয়। একেতেই জুন মাস তার উপর চলছে গরমের ছুটি। গরম বেশি পড়লেও এই ছুটিগুলোকে তো আর এমনি চলে যেতে দেওয়া যায় না। তাই ছুটি কাজে লাগাতে বেরিয়ে পড়তে হবে কোনো জায়গার উদ্দেশ্যে। কিন্তু উত্তরবঙ্গের বেশিরভাগ জায়গাই এখন পর্যটকদের ভিড়, এমনকি ট্রেনের টিকিটের অকাল। তাই দক্ষিণবঙ্গের কিছু মনোরম জায়গায় বন্ধুদের সাথে নিয়ে ক্যাম্পিং করা যেতে পারে (Camping places near Kolkata)। আশা করা যাচ্ছে ভালই কাটবে দিনগুলি।
তাহলে একনজরে দেখে নেওয়া যাক কলকাতার কাছে কোন কোন জায়গায় বন্ধুদের সাথে ক্যাম্পিং (Camping places near Kolkata) এ যাওয়া যেতে পারে। এ রাজ্যে বাঁকুড়া হলো অন্যতম পর্যটন কেন্দ্র। এখানকার উল্লেখযোগ্য স্থান হল শুশুনিয়া পাহাড়। এই পাহাড়টি আসলে পূর্বঘাট পর্বতমালার অংশ। পাহাড়ের উচ্চতা প্রায় ১২০০ ফিট। আপনারা অনেকেই হয়তো জানেন যে, বাংলার প্রাচীনতম শিলালিপিটি এই পাহাড়ে অবস্থিত। এছাড়া স্থানটি পর্যটক বা পর্বতারোহীদের কাছেও বেশ জনপ্রিয়। সূত্রের মাধ্যমে জানা যায়, এই অঞ্চলটি রাজা চন্দ্রবর্মণের রাজধানী ছিল। এখানে পাহাড়ের নীচে ঝরণার মুখে একটি প্রাচীন নরসিংহ মূর্তি রয়েছে যা পাথরের তৈরি। নরসিংহের এই মূর্তিটিকে ওই অঞ্চলের আদিবাসী যেমন সাঁওতাল, কোল, মুন্ডা, ভিল প্রভৃতিরা পূজা করতেন। গোটা শুশুনিয়া পাহাড়ে আছে শাল, পলাশ, মহুয়া, এবং অর্জুন গাছের জঙ্গল। এছাড়া গন্ধেশ্বরী নদী স্থানের প্রতি আকর্ষণ আরো বাড়িয়ে দিয়েছে। বাঁকুড়াতে গেলে শুশুনিয়া পাহাড় ছাড়া চার পাশে আরো অনেক সুন্দর জিনিস আছে। জায়গাটি বন্ধুদের সাথে ক্যাম্পিং করার ক্ষেত্রে খুব আদর্শ।
বরন্তি হলো পুরুলিয়া জেলার এক অপরূপ সুন্দর জায়গা। এখানে রয়েছে রঘুনাথপুর সার্কিটের সবুজ অরণ্য এবং মনোমুগ্ধকর পাহাড়। বরন্তি কিন্তু প্রাকৃতিক হ্রদের ধারে অবস্থিত, এটি হলো সম্পূর্ণ একটি নিখুঁত গ্রাম। এই গ্রামের আসল নাম জীবনপুর। বরন্তি হ্রদের পাশে থাকার জন্য গ্রামের নাম হয়েছে বরন্তি। বড়ন্তি গ্রামটি বিহারীনাথ এবং পঞ্চকোট পাহাড়ের মধ্যে অবস্থিত, যার চারদিকে রয়েছে শাল, সেগুন, মহুয়া, পলাশ, শিশু গাছের জঙ্গল। এই গ্রামে বাস করে ন্যূনতম কুড়িটি পরিবার। গ্রামটির প্রধান আকর্ষণ এর লাল মাটির রাস্তা। এই গ্রামে বিভিন্ন ট্রেকিং ট্রেইলের ব্যবস্থা রয়েছে। পাশের রামচন্দ্রপুর সেচ প্রকল্পের আশপাশের দৃশ্য অপূর্ব। এই জায়গা থেকে ঘুরতে যাওয়া যেতে পারে গড় পঞ্চকোট, মুরাডি বাঁধ, বরন্তি পাহাড় ও বাঁধ থেকে। এত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ও বিশুদ্ধ পরিবেশের জন্য প্রকৃতিপ্রেমীদের এই জায়গাটি আকর্ষিত করে। লোক সংখ্যা কম বলে জায়গাটি সবসময়ই শান্ত ও পরিচ্ছন্ন থাকে। মজার কথা হলো কলকাতা থেকে মাত্র ২৩৭ কিলোমিটার এর দূরত্ব। এই জায়গাটি কলকাতার একেবারেই কাছে এবং ক্যাম্পিং এর পক্ষেও খুব ভালো (Camping places near Kolkata)।
পশ্চিমবঙ্গে আরো একটি জায়গা আছে যা খুবই জনপ্রিয় এবং বন্ধু-বান্ধবদের সাথে ক্যাম্পিং (Camping places near Kolkata) করার পক্ষেও খুব ভালো। জায়গাটির নাম হল সুন্দরবন। সুন্দরবনে যেতে গেলে আপনি গাড়ি করেও যেতে পারেন, কিন্তু নদী পার হওয়ার সময় গাড়ি নৌকায় চাপিয়ে নিয়ে যেতে হবে। একবার নদী পেরোতে পারলে আপনি নিজের গাড়ি করেই সুন্দরবন করতে পারবেন। এখানকার আকর্ষণীয় জিনিসগুলি হল ম্যানগ্রোভ অরণ্য, কুমীর, হরিণ, নানা জাতির পাখি ইত্যাদি। আপনি সারাদিন লঞ্চে করে ঘুরে বেড়িয়ে এখানকার প্রকৃতির শোভা উপভোগ করতে পারবেন। জঙ্গলের ভেতরে যেতে চাইলে পেয়ে যাবেন প্রশিক্ষিত গাইড। এছাড়া এখানকার অভয়ারণ্যের শোভা সত্যিই অপরূপ এবং উপরে পাওনা হিসেবে দেখতে পারেন রয়েল বেঙ্গল টাইগার কে। এছাড়াও সজনেখালি বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য, সুধন্যাখালি ওয়াচ টাওয়ার, নেতিধোপানি ওয়াচ টাওয়ার প্রকৃতি উল্লেখযোগ্য। পাশাপাশি পেয়ে যাবেন নদীর টাটকা মাছ, কাঁকড়া, চিংড়ি এবং বন মোরগ যা আপনি অন্য কোথাও পাবেন না। কলকাতা থেকে সুন্দরবন যেতে সময় লেগে যেতে পারে প্রায় দেড় ঘন্টা মত।
সান্দাকফু হলো পশ্চিমবঙ্গের সবচেয়ে উঁচু শৃঙ্গ। স্থানটির উচ্চতা কিন্তু সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ১১,৯৩০ ফিট উপরে। এখানকার অপরূপ সৌন্দর্যের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো এখানকার সূর্যোদয়। ট্রেকারদের সব থেকে প্রিয় জায়গা হল এটি, এখানে ট্রেকিং করতে সময় লাগবে ৪ থেকে ৫ দিন। আকর্ষণীয় এই ট্র্যাকটি শুরু হয়েছে মানেভঞ্জন থেকে। আপনি এই অঞ্চলে দেখতে পাবেন প্রচুর পরিমাণে হিমালয়ান কোবরা লিলি এবং অ্যাকোনিটাস। অন্যদিকে রয়েছে রডোডেনড্রন, ম্যাগনোলিয়াস এবং অর্কিড সহ বিভিন্ন ধরণের প্রাণবন্ত ফুলের সম্ভার। আপনি যদি সান্দাকফু ট্রেকিং এ যান তাহলে শুরুর দিকে কিংবা শেষের দিকে দেখে যেতে পারেন সিঙ্গালিলা ন্যাশনাল পার্ক, টংলু, তুমলিং ইত্যাদি। এছাড়াও আরেকটি জায়গা আছে সেটি হলো পুরুলিয়ার অযোধ্যা পাহাড়। ক্যাম্পিং করার জন্য এর মতো আদর্শ জায়গা আর হয় না। অযোধ্যা পাহাড়ের গা ঘেঁষে রয়েছে প্রচুর হোটেল তাই পর্যটকদের এখানে থাকার কোন অসুবিধা হবে না। দেখার মত রয়েছে বামনী ঝর্না। এই অপরূপ সৌন্দর্য সত্যি উপভোগ করার মতো। পুরুলিয়ার বিখ্যাত ছৌ-নাচের কথা সবাই জানে, তাই এই জায়গায় অবশ্যই একবার ঘুরে আসা উচিত।