Never go alone on the last road of the world, if you go there is danger: পৃথিবীর আকৃতি সম্পর্কে ছোটবেলা থেকেই একটা ধারণা আমাদের মাথায় আছে, সেটি হলো পৃথিবীর আকৃতি গোলাকার খানিকটা কমলালেবুর মত। এর উত্তর এবং দক্ষিণ ভাগ কিছুটা চাপা। পৃথিবী নিজের অদৃশ্য মেরুদন্ডের উপরে পাক খেতে খেতে সূর্যের চারিদিকে প্রদক্ষিণ করে। পৃথিবী হলো সমস্ত জীবকুলের বাসস্থান। আর এই পৃথিবী নিয়ে মানুষের মধ্যে কৌতূহলের শেষ নেই। একটা প্রশ্ন সবার মনেই ঘোরাফেরা করে এই পৃথিবীর শেষ রাস্তা (Last highway of World) কোথায়? সেখানে কি আদৌ যাওয়া সম্ভব? যদি বলি, হ্যাঁ সম্ভব এবং এই রাস্তাটির নাম হল E 69 হাইওয়ে। কিন্তু একা যাওয়া মানুষের পক্ষে অসম্ভব, একা গেলেই ঘনিয়ে আসবে চরম বিপদ।
প্রত্যেক অ্যাডভেঞ্চারপ্রেমীর কাছে এই জায়গা একবার দেখার সাধ রয়েছে। যেমন উত্তরমেরুর মেরুজ্যোতি দেখা একপ্রকার স্বপ্ন, তেমনই পৃথিবীর শেষ রাস্তা (Last highway of World) দিয়ে একবার হেঁটে যাওয়ার সাধ প্রত্যেক অ্যাডভেঞ্চারপ্রেমীর জীবনেই আছে। তবে এই দুটি জিনিসের মধ্যে পার্থক্য অবশ্যই আছে, মেরুজ্যোতি প্রকৃতির দান আর শেষ রাস্তাটি মানুষের তৈরি। পৃথিবীর শেষ রাস্তা E 69 হাইওয়ে অবস্থিত উত্তর গোলার্ধে অর্থাৎ নিরক্ষরেখার উপরের দিকে। এটিকে বিশ্বের শেষ রাস্তা বলার কারণটাই বাকি? কেন সাধারণ মানুষ এখানে যেতে পারবে না? এই রাস্তার শুরু কোথায় আর সেই সেবা কোথায়? কি এমন বিপদ আছে এই রাস্তায়? প্রতিবেদনটিতে জেনে নেব বিস্তারিতভাবে।
নরওয়েতে অবস্থিত ইউরোপের E 69 হাইওয়ে বা পৃথিবীর শেষ রাস্তাটি (Last highway of World)। পথটি একেবারে উত্তর মেরুর গা ঘেঁষে চলে গেছে। এই রাস্তা উত্তর ইউরোপের নর্ডক্যাপকে সংযুক্ত করেছে নরওয়ের সঙ্গে। রাস্তাটি যেখানে শেষ হচ্ছে তারপর নজরে আর কিছুই পড়বে না কারণ এরপর রয়েছে শুধুই সমুদ্র, হিমবাহ এবং তুষার। রাস্তাটির দৈর্ঘ্য প্রায় ১৪ কিলোমিটার।
এই রাস্তাতে দিন এবং রাতের আবহাওয়া কিন্তু সম্পূর্ণ অন্যরকম। উত্তর মেরুর কারণে ৬ মাস শীতকাল যা থাকে সম্পূর্ণ অন্ধকারে ঢাকা। আবার গ্রীষ্মকালে দেখতে পাওয়া যাবে একটানা সূর্য। শীতকাল ও গ্রীষ্মকালে তারতম্য এখানে বিশাল রকম। অর্থাৎ গ্রীষ্মকালে এই রাস্তায় রাত হয় না এবং শীতকালে এই রাস্তায় দিন হয় না। শুনলে অবাক হবেন পৃথিবীর এই শেষ রাস্তাতেও (Last highway of World) মানুষের বসবাস রয়েছে। শীতকালে এখানে তাপমাত্রা মাইনাস ৪৩ ডিগ্রি সেলসিয়াসে পৌঁছোয় আর গ্রীষ্মে তা পৌঁছোয় শূন্য ডিগ্রিতে।
E-69 হাইওয়েতে একা যাওয়ার কথা কোনদিনও স্বপ্নেও ভাববেন না। একা যাওয়ার অনুমতি এখানে নেই, শুধুমাত্র দলে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়। বিসমিল্লাহ এলাকা বরফে ঢাকা থাকে বলে গাড়ি চালানো এখানে সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। পুরো এলাকা বরফে ঢাকা থাকার কারণে এখানে বিশেষ সাবধানতা অবলম্বন করতে হয়। এই হাইওয়ে শুরু হয়েছিল ১৯৩০ সাল নাগাদ এবং ১৯৩৪ সালে হাইওয়ে তৈরির সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়। এরমধ্যে ছিল পর্যটন, মৎস্যচাষ ইত্যাদির পরিকল্পনাও। E69 হাইওয়ের ওল্ডারফিউওর্ড সংলগ্ন রাশিনিস-এ রয়েছে প্রায় ৭০ কিলোমিটার দীর্ঘ একটি ফেরি ঘাট। বর্তমানে ধীরে ধীরে রাস্তাটির সম্প্রসারণ হচ্ছে। এর দৈর্ঘ্য ১২৯ কিলোমিটার যা সম্পূর্ণ হয়েছে ১৯৯২ সালে। এখন অবশ্য কয়েকটি হোটেল এবং রেস্টুরেন্ট এখানে হয়েছে।