Even after many years, the beauty of the ancient temples of India remains undiminished: ভারতবর্ষ হলো বিভিন্ন সভ্যতার মিলনস্থল। বিশ্বের বিভিন্ন প্রাচীন সভ্যতাগুলির মধ্যে এ দেশের সভ্যতা অন্যতম। এই দেশে দেখা যায় শিল্প, সাহিত্য, সংস্কৃতি, আধ্যাত্মিক ঐতিহ্য, ধর্মীয় বৈচিত্র্যের সংমিশ্রণ। প্রাচীন ভারতের কারিগরি ও প্রযুক্তিবিদ্যা বিস্মিত করে গোটা বিশ্বকে। প্রাচীন ভারতের স্থাপত্য ও ভাস্কর্য নির্মাণ করার প্রযুক্তি কৌশল এতটাই উন্নত ছিল যে আজও তা সগৌরবে দাঁড়িয়ে রয়েছে মাথা উঁচু করে। এ দেশের মন্দিরগুলি হল প্রাচীন ভারতের উন্নত প্রযুক্তি কৌশল এবং স্থাপত্য ভাস্কর্যের উল্লেখযোগ্য নিদর্শন (Ancient temples of India)।
আপনারা অনেকেই জানেন যে প্রাচীন মন্দিরগুলো (Ancient temples of India) সিমেন্ট, ইট, বালি দিয়ে তৈরি হতো না বরং তৈরি হতো পাথর দিয়ে। পাথরের উপরে চোখ ধাঁধানো সব কারুকার্য আজও যেন অম্লান হয়ে আছে। সেকালের কারিগররা ছেনি হাতুড়ি দিয়ে পাথরের উপরে এত সুন্দর নিদর্শন সৃষ্টি করতো যা কোনদিনও ভোলার নয়। নির্দিষ্ট জ্যামিতিক নিয়ম মেনে পাথরগুলোকে উপর থেকে নিচ অবধি কাটা হতো এবং মন্দিরগুলোর ভেতর এবং বাইরে দু জায়গাতেই অপূর্ব কারুকার্য তৈরি করত কারিগররা। এরকমই কিছু মন্দিরের নিদর্শন তুলে ধরা হবে এই প্রতিবেদনে।
চারধামের অন্যতম ধাম হলো উত্তরাখণ্ডের বদ্রিনাথ মন্দির। এটি বদ্রিনাথ শহরে অবস্থিত হিন্দুদের অত্যন্ত পবিত্র একটি মন্দির (Ancient temples of India)। বদ্রিনাথ হলো একটি বিষ্ণু মন্দির। ঐতিহাসিকদের থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, চতুর্থ শতাব্দী পর্যন্ত এটি ছিল একটি বৌদ্ধ মন্দির। এই মন্দিরটিকে পরবর্তী সময়ে হিন্দু সন্ন্যাসী আদি শঙ্কারাচার্য হিন্দু মন্দিরে পরিণত করেছিলেন। এছাড়া আরও একটি উল্লেখযোগ্য মন্দিরের নিদর্শন হলো দেবাদিদেব মহাদেবের বারো জ্যোতির্লিঙ্গের মধ্যে যেটি প্রথম অর্থাৎ সোমনাথ মন্দির। এই মন্দিরটি অবস্থিত গুজরাটের পশ্চিম উপকূলে সৌরাষ্ট্রের ভেরাভালের কাছে প্রভাস পাটনে। এই প্রাচীন মন্দিরটির নির্মাণকাল সপ্তম শতাব্দী। এই মন্দিরটি পরবর্তী সময়ে বহুবার ধ্বংস হয়েছে ও তার পুনর্নির্মাণ করা হয়েছে।
ভারতের প্রাচীন মন্দিরগুলির (Ancient temples of India) মধ্যে অন্যতম হলো তামিলনাড়ুর তিরুচিরাপল্লির শ্রী রঙ্গনাথ স্বামী মন্দির, যার আরাধ্য দেবতা হলো ভগবান বিষ্ণু। বিষ্ণুর ১০৪ দিব্য দেশমকে উৎসর্গ করা হয়েছে এই মন্দির। এই মন্দিরটি দক্ষিণ ভারতের বিখ্যাত বৈষ্ণব মন্দিরগুলির মধ্যে অন্যতম। এটির নির্মাণকাল হলো ষষ্ঠ থেকে নবম শতাব্দীর মধ্যে। প্রায় ১৫৬ একর জুড়ে বিস্তৃত এই মন্দির বিশ্বের বৃহত্তম হিন্দু মন্দির হিসেবে বিবেচিত হয়। এছাড়াও গুজরাটের জামনগরে যে দ্বারকাধীশ মন্দিরটি অবস্থিত। সেটির আরেক নাম হলো জগৎ মন্দির। এই মন্দিরের আরাধ্যা দেবতাও শ্রী কৃষ্ণ। পাঁচতলা উঁচু এই মন্দিরটির প্রধান ভিত হলো ৭২টি স্তম্ভ। ২০০০ বছরের বেশি পুরনো এই মন্দিরটি তৈরি করেছিলেন শ্রীকৃষ্ণের নাতি, এমনটাই বলেন কিংবদন্তিরা। বর্তমানে এটিও চারধাম তীর্থক্ষেত্রের অন্যতম।
তামিলনাড়ুর কুম্বাকোনমের কুম্বেশ্বর মন্দিরটি মহাদেবের উদ্দেশ্যে তৈরি। মন্দিরটির আয়তন কিন্তু ৩০,১৮১ বর্গফুট। নবম শতাব্দীতে তৈরি এই মন্দিরটির চত্বরে রয়েছে অনেকগুলি বিশালায়তনের কক্ষ। সবথেকে জনপ্রিয় হল বিজয়নগরের আমলে নির্মিত ষোল-স্তম্ভ বিশিষ্ট হলঘর। এখানকার এক একটি পাথরে ২৭টি তারা এবং ১২টি রাশিচক্র খোদাই করা রয়েছে। প্রাচীন ভারতের স্থাপত্য ভাস্কর্যের অন্যতম নিদর্শন হলো মহারাষ্ট্রের ইলোরার কৈলাস মন্দির। পাথর কেটে এই গুহা মন্দিরটি তৈরি হয়েছে। শুনলে অবাক হবেন যে মাত্র একটি পাথর কেটেই তৈরি হয়েছে এই গোটা মন্দিরটি। মন্দিরটির শিল্পকলা, স্থাপত্য ও ভাস্কর্য অবাক করে সাধারণ মানুষকে। অষ্টম শতাব্দীতে তৈরি এই মন্দিরটির মোট ৩৪টি গুহা রয়েছে। চরনন্দ্রী পাহাড়ের অভ্যন্তর থেকে খনন শুরু করে তৈরি হয়েছে এই গুহাগুলি। গুহাতে রয়েছে বিভিন্ন ধর্মের দেবদেবীর মন্দির। এখানে বৌদ্ধ ধর্মের ১২টি, হিন্দু ধর্মের ১৭টি এবং জৈন ধর্মের ৫টি মন্দির রয়েছে।