Finally, the real secret of Chandrayaan-1 came to light: পৃথিবীর উপগ্রহ চাঁদের বুকে নিজের থেকে আছড়ে পড়েছিল চন্দ্রযান-১ (Chandrayaan-1)। তার ৩২ কিলোগ্রামের প্রোবের আসল উদ্দেশ্যই ছিল চাঁদের মাটিতে ‘হার্ড ল্যান্ড’ করা। কিন্তু তাদের প্রধান উদ্দেশ্য ছিল সারা পৃথিবীতে ইতিহাস তৈরি করা, কোনরকম ধ্বংসলীলায় তারা মেতে উঠতে চায়নি। ধ্বংস হওয়ার আগে এই মহাকাশযানটি চাঁদের বহু অজানা তথ্যের সন্ধান দিয়ে গিয়েছিল। ভারতের সেই মহাকাশযাত্রা ব্যর্থ হয়নি বরং বহু রহস্য খনির সন্ধান দিয়ে গেছিল। যা চমকে দিয়েছিল গোটা মহাকাশ বিজ্ঞানকে। আবারও খবরের শিরোনামে উঠে এসেছে ২০০৮ সালের চন্দ্রযান-১ অভিযান। চন্দ্রযান-১ এর ল্যান্ডার প্রথম চাঁদের মাটিতে আটকে পড়েছিল ওই বছর ১৭ই নভেম্বর। কারণ চন্দ্রযান-১ ছিল একপ্রকার technology demonstration mission। ভারতের এই মহাকাশযানের আসল উদ্দেশ্য ছিল ১০০ কিলোমিটার দূর থেকে চাঁদে যা যা দেখা যাচ্ছে সেই খবর পৌঁছে দিয়েই হার্ড ল্যান্ড করা।
জানেন কি কবে শুরু হয়েছিল ভারতের এই মহাকাশযাত্রা? চন্দ্রযান-১ মিশন (Chandrayaan-1) প্রথম শুরু হয়েছিল ২০০৮ সালের ২২ অক্টোবর। চন্দ্রযান-১-কে চাঁদের মাটিতে উৎক্ষেপণ করা হয়েছিল পিএসএলভি রকেটের সাহায্যে। ৮ নভেম্বর চাঁদের কক্ষপথে সফলভাবে প্রবেশ করে চন্দ্রযান-১। এই মহাকাশযানটি পরের চার দিন চাঁদের বৃত্তাকার কক্ষপথে যা চাঁদের পৃষ্ঠ থেকে ১০০ কিলোমিটার উঁচুতে অবস্থিত সেখানে প্রবেশের জন্য ইঞ্জিনগুলিকে ব্যবহার করা হয়। চন্দ্রযান-১-এর মধ্যে ১১ টি যন্ত্র রয়েছে যা চাঁদকে খুব কাছ থেকে পর্যবেক্ষণ করার কাজ করে।
এরপর ল্যান্ডারটি অরবিটারের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় আছড়ে পড়ে চাঁদের বুকে এবং অরবিটার থেকে যায় চাঁদের কক্ষপথে। ভারতের এই মিশনের মাধ্যমেই প্রথম টের পাওয়া যায় যে চাঁদে জলের উপস্থিতি আছে। চন্দ্রযান-১ (Chandrayaan-1) মিশন যখন প্রথম শুরু হয় ইসরোর চেয়ারম্যান ছিল ড. কৃষ্ণস্বামী কস্তুরীরঙ্গন। তিনি এই কঠিন কাজটি করতে সমর্থ্য হয়েছিলেন। ইসরোর পাঠানো চন্দ্রযান-১ ২০০৮ সালে প্রথম খবর দিয়েছিল চাঁদের মাটিতে বরফ জমে আছে এবং চাঁদের গহ্বর বা ক্রেটারে প্রচুর খনিজের সন্ধান পাওয়া যাবে। ইসরোর এই মহাকাশযানটি ‘মুন মিনারালোজি ম্যাপার ইনস্ট্রুমেন্ট (এম-থ্রি)’ দিয়ে চাঁদের মাটিতে বিভিন্ন খনিজের হদিশ দিয়েছিল। সেই সব তথ্যের সন্ধান করেই অবাক হয়ে গেছিল গোটা মহাকাশ বিজ্ঞান।
শুনলে অবাক হয়ে যাবেন যে, ইতিমধ্যেই চাঁদের লোহা, জল আর অক্সিজেন মিশে গিয়ে মরচে ধরতে শুরু করেছে। আর এই ঘটনা একদিন দুদিন নয় বহুদিন ধরেই হয়ে আসছে। কোটি কোটি বছর ধরে চাঁদে এই মরচে ধরছে এবং ক্ষয় হয়ে যাচ্ছে দুটো মেরু। চন্দ্রযান-১ (Chandrayaan-1) এর পাঠানো ছবি দেখে মাথায় হাত বিজ্ঞানীদের। তাদের মতে, চাঁদের মাটিতে হিমাটাইট নামক খনিজের সন্ধান মিলেছে। গবেষকদের ভাষায় এর নাম ‘লুনার হিমাটাইট’ (Lunar Hematite) । এই হিমাটাইট হল লোহা বা আয়রনের একটি যৌগ। এক ধরনের আয়রন অক্সাইড (Fe2O3.) যাকে বলা হয় মরচে। চাঁদের মেরু অঞ্চলে বরফের সন্ধান পাওয়া গেছিল, সেই এলাকাগুলিতেই মরচে পড়ার পরিমাণ সবচেয়ে বেশি।
অবশ্য নাসার লুনার রেকনাইস্যান্স অরবিটার স্পেসক্রাফ্ট আগেই এই খবরটি দিয়েছিল। ২০০৯ সাল থেকেই নাসার ‘লুনার ক্রেটার অবজারভেশন অ্যান্ড সেন্সিং স্যাটেলাইটের’ সঙ্গে পাঠানো হয়েছিল এলআরওকে। চাঁদের সমস্ত ঠিকুজিকুষ্ঠীর ৩-ডি ম্যাপিং করেছে এই এলআরও, তাও আবার ১০০ মিটার রেজোলিউশনে। চাঁদের মাটির ০.৫ মিটার থেকে ২ মিটার গভীরে জমে আছে লোহা, টাইটেনিয়াম অক্সাইড, এমনকি চাঁদের গহ্বরগুলিতেও ধাতুও পাওয়া গেছে। ধাতুময় চন্দ্রপৃষ্ঠের হদিশ দিয়েছিল এলআরও-রমিনি রেডিও ফ্রিকুয়েন্সি (Mini-RF) যন্ত্র। ২০০৮ সালে ইসরোর চন্দ্রযান এই খবরই পাঠিয়েছিল।